ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।—বি.স.
সমস্যা: একটা মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছিল। মেয়েটার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতাম। আমরা বিয়ে করব, এমনটাই আমাদের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সে আমাকে অন্য একটা মেয়েকে জড়িয়ে সন্দেহ করতে থাকে এবং সে আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না বলে জানায়। কয়েক দিন আগে সে আমায় বলল, যে স্বামীকে সে তালাক দিয়েছে, তাকেই আবার বিয়ে করবে। এমতাবস্থায় আমি খুব মানসিক যন্ত্রণায় আছি। কারণ তাকে আমি খুব ভালোবাসি। সে যদি সত্যিই ওই ছেলেকে বিয়ে করে, সেটা কি সঠিক কাজ হবে?
আরিফুল ইসলাম
বগুড়া।
পরামর্শ: তোমাদের কত দিনের সম্পর্ক ছিল, মেয়েটির কী কারণে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল, তার কোনো সন্তান ছিল কি না, তোমার বয়স কত—এসব তথ্য থাকলে ভালো হতো। মেয়েটির সঙ্গে এখন তোমার সম্পর্কের ইতি ঘটেছে বলে তুমি কষ্ট পাচ্ছ বুঝতে পারছি, তবে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা থাকলেও বিশ্বাসের অভাব ছিল বলে মনে হচ্ছে। একটি প্রেমের সম্পর্ক শুধু ভালোবাসার ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সেখানে পারস্পরিক বিশ্বাসের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তুমি নিজেকে ভালোভাবে প্রশ্ন করে দেখবে যে সম্পর্ক চলাকালীন তুমি এমন কিছু করেছ কি না, যা মেয়েটিকে সন্দিহান করে তুলেছে। তুমি তার বিশ্বাসের জায়গাটি আবার তৈরি করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট আন্তরিক ছিলে কি? যদি মনে হয়, তার সন্দেহ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ছিল, আর তোমারও চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না তার মন থেকে সন্দেহ দূর করার, তাহলে তো আর কিছু করার নেই, তাই না? আর যদি মনে হয়, তার কাছে সঠিক চিত্রটি তুলে ধরার ক্ষেত্রে তুমি খুব সফল হতে পারোনি, তাহলে ভবিষ্যতে তুমি একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে কী করবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারো। অর্থাৎ এই নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাটুকু নিয়ে তুমি পরবর্তী সময় কাজে লাগাতে পারো।
মেয়েটি যে তার আগের স্বামীকেই আবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা মোটেও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এ ধরনের ঘটনা অনেক ঘটে থাকে, কারণ বিয়েটা সামাজিক, ধর্মীয়, আইনি সম্পর্ক হলেও এর মধ্য দিয়ে দুটো মানুষ পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলও হয়ে পড়ে। কাজেই মেয়েটির মতামতের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাশীল হয়ে তুমি যদি এখন নিজের জীবনটাকে অর্থপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করো, তাহলে ভালো হয়।
সমস্যা: আমার বয়স ২৫ বছর।
ওজন ৫০ কেজি। আমার সমস্যা হলো, ১০ বছর ধরে আমার মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আমি দাঁতের চিকিৎসক, মেডিসিন ডাক্তার, কানের চিকিৎসক ও স্পেশালিস্টকে দেখিয়েছি। চিকিৎসকেরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, কিন্তু কোনো সমস্যা খুঁজে পাননি। এ সমস্যার কারণে আমি মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত। কারও সঙ্গে কথা বলতে আমি লজ্জা ও সংকোচ বোধ করি এবং মনে মনে ভাবি, আমার মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তাই কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। আমি সব সময় পরিষ্কার থাকার চেষ্টা করি, কিন্তু তার পরও যখন দুর্গন্ধ বের হয়, তখন দুশ্চিন্তা করি। এখন প্রশ্ন হলো ১. এ বিরক্তিকর সমস্যা থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়? ২. দুশ্চিন্তা কীভাবে তাড়ানো যায়?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ: খুবই দুঃখজনক যে ১০ বছর ধরে কোনো অপরাধ না করেও তুমি অবর্ণনীয় যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে দিন কাটাচ্ছ। তুমি চিকিৎসারও কোনো ত্রুটি করোনি, অথচ সমস্যাটির সমাধান হয়নি। অনেক কারণেই মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে, শুধু দাঁতের স্বাস্থ্যের কারণে নয়। আমাদের সুস্থ জীবনচর্চা থাকলে সাধারণত এ ধরনের সমস্যা হয় না। আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই, সেগুলোর কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। ধূমপান করলে, তামাকজাতীয় কিছু খেলেও এটি ঘটতে পারে। অনেক সময় মুখের ভেতরটা খুব শুষ্ক থাকলেও এটি হয়। মুখে যে লালা নিঃসৃত হয়, সেটি মুখের ভেতর তৈরি এসিডের তীব্রতা কমিয়ে দিয়ে মুখের ভেতরটা আর্দ্র ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। লালার সাহায্যে আমাদের জিহ্বা ও মাড়িতে জমে থাকা মৃত কোষগুলোও পরিষ্কার হয়ে যায়। এ ছাড়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে, লালাগ্রন্থির সমস্যার জন্য, নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস হলে, কিডনি, লিভারের কার্যক্রম ঠিকমতো না চললেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিষয়টি কি তোমারই শুধু মনে হচ্ছে, নাকি অন্যদের আচরণ থেকেও তুমি বুঝতে পারছ যে তারা তোমার মুখের দুর্গন্ধ সম্পর্কে সব সময় সচেতন থাকে? যদি এমন হয়ে থাকে যে তুমিই সারাক্ষণ এ ব্যাপারটি নিয়ে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকছ বলে তোমার মধ্যে একধরনের অবসেশন কাজ করছে, আসলে অন্যদের জন্য এটা তেমন কোনো সমস্যা নয়, তাহলে বুঝতে হবে তোমাকে অবসেশন দূর করার জন্য সাইকোথেরাপির সাহায্য নিতে হবে। যেহেতু দাঁতের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও এনডোসকপিতে কিছুই পাওয়া যায়নি এবং তুমিও সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকো, তাহলে এটি তোমার মনের ভুল বা দুশ্চিন্তার কারণে হচ্ছে কি না, তা জেনে নেওয়া খুব জরুরি।
নিয়মিত দাঁত ও মুখের অভ্যন্তর পরিষ্কার রাখো, ব্যয়াম করো, সহজপাচ্য খাবার খাও। নিজের ঘুম, বিশ্রাম নিশ্চিত করো এবং সর্বোপরি মনের সন্দেহ ও দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য ঢাকায় এসে সাইকোথেরাপির সাহায্য নাও।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০
Leave a Reply