যেকোনো উৎসবের সঙ্গে খাবারদাবারের ব্যাপারটা যেন জড়িয়ে থাকে ওতপ্রোতভাবে। আর ঈদ বলে কথা। ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই ঈদের দিনের খাবারের আয়োজনটা নিয়ে তোড়জোড় চলতে থাকে ঘরে। ঈদের দিন অতিথিদের জন্য খাবারের মেন্যুটা কেমন হবে, তা ভেবে দম ফেলার ফুরসত পান না বাড়ির গৃহিণী। শুধু খাবার রান্নাই নয়, খাবার পরিবেশনা নিয়েও চলতে থাকে নানা আয়োজন। খাবারকে সুন্দরভাবে পরিবেশনার জন্য প্রয়োজন হয় নান্দনিক বাসনকোসনের। ‘খাবারটা যা-ই হোক না কেন, নান্দনিক বাসনকোসনে পরিচ্ছন্ন পরিবেশনায় খাবারটি হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয়।’ বলছিলেন রন্ধনশিল্পী রাহিমা সুলতানা। ঈদের দিন সবকিছুর মতো বাসনকোসনেও থাকা চাই নতুনত্বের ছোঁয়া। এ দিনটিতে সকাল ও দুপুর, রাতে একেক সময় থাকে একেক ধরনের খাবারের আয়োজন। কখন কী ধরনের বাসনকোসনে খাবার পরিবেশন করে অতিথি অ্যাপায়ন করবেন, সে বিষয়ে জানালেন তিনি। তিনি বলেন, ঈদের দিন সকালে খাবার পরিবেশনাটা হওয়া চাই এমন, যাতে মনে করিয়ে দেয় আজকের দিনটা শুধু আনন্দ আর ভালো খাবার খাওয়ার দিন। যেহেতু ঈদের দিন সকালের যে খাবারগুলোর আয়োজন করা হয়, এর মধ্যে রঙের ছোঁয়া থাকে এমন খাবার, যেমন—দুধ সেমাই, জর্দা, ফলের কাস্টার্ড, পুডিং পরিবেশনের জন্য বাসনকোসনের রং হিসেবে সাদা অথবা চাপা সাদা রং নির্বাচন করুন। আর উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন সিরামিক। কারণ, সাদা বাসনকোসনে এ ধরনের রঙিন খাবার পরিবেশনা খাবারটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। সকালের খাবার পরিবেশনে টেবিলে রাখতে পারেন বিভিন্ন আকৃতির হাফ প্লেট ও বাটি। যদি দুধ-সেমাই বা কাস্টার্ড জাতীয় তরল খাবার হয়, তবে তা গোলাকার ছোট আকৃতির বাটিতে পরিবেশন করুন। আর শুকনা খাবার (জর্দা, ডিমের হালুয়া) পরিবেশনার জন্য বেছে নিন সমতল, চতুর্ভুজ, গোলাকৃতিরসহ বিভিন্ন আকৃতির ছোট পিরিচ। এ ছাড়া সকালে খাবার পরিবেশনের সময় টেবিলে রাখতে পারেন টি-পট ও চায়ের কাপ। ঈদের দিন দুপুরে থাকে নানা খাবারের আয়োজন। আর তাই দুপুরের খাবার পরিবেশনের বাসনকোসনেও থাকে আভিজাত্যের ছোঁয়া। এ সময় খাবার পরিবেশনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন বড় আকৃতির হালকা নকশার ফুল প্লেট। ডিম্বাকার বাটিতে রাখতে পারেন পোলাও। ছোট আকৃতির সমতল প্লেটে সালাদ পরিবেশন করতে পারেন। এ ছাড়া মাংস ও অন্যান্য তরকারি পরিবেশনের জন্য বেছে নিতে পারেন ঢাকনাসহ কোরমাদানি। তিনকোনা প্লেটের মধ্যে ভাগ করে রাখা ঢাকনাসহ ছোট বাটিতে রাখতে পারেন আচার ও লবণ। পানির জন্য ক্রিস্টাল ও কাচের গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন। একইভাবে সাজাতে পারেন রাতের খাবারের টেবিলটি। তবে যেভাবেই খাবার পরিবেশন করুন না কেন, খেয়াল রাখবেন পরিবেশনের সময়, যেন পাত্রের গায়ে ঝোল বা খাবার লেগে না থাকে।
আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, এদিন বাড়িতে এত হইচই থাকে যে, এ কারণে অসাবধানতাবশত অনেক বাসনপত্র ভেঙে বা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে ঈদের দিন বাসনকোসন রাখার জন্য আলাদা জায়গা নির্বাচন করুন অথবা ট্রে ব্যবহার করুন। অতিথি টেবিলে বসার পরই খাবার পরিবেশন করুন। আগে থেকে টেবিলে খাবার রাখলে তা খাওয়ার আগ্রহ অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়।
কোথায় পাবেন
ঈদে সিরামিকসের বাসনকোসন বেশি ভালো চলে বলে জানালেন দোকানদারেরা। আর ভালো মানের দেশীয় ব্র্যান্ডের সিরামিকসের বাসনকোসন পেতে চাইলে আপনি চলে যেতে পারেন মুন্নু সিরামিকস, শাইনপুকুর ও ক্লে-ইমেজে। চলুন, জেনে নিই সেখানকার বাসনকোসনের দরদাম।
ক্লে-ইমেজ: সিরামিকসের বাসনকোসনের দেশীয় শৈল্পিকতার ছোঁয়া পেতে চাইলে আপনি চলে আসতে পারেন এখানে। ক্লে-ইমেজের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল হালিম জানান, এখানকার বাসনকোসন বিভিন্ন আকৃতিতে তৈরির পর রং-তুলি দিয়ে নকশা প্রয়োগ করা হয়। দামটা নির্ভর করে নকশা ও আকৃতির ওপর। ক্লে-ইমেজে চায়ের কাপ পাবেন (প্রতিটি) ১২০ টাকা, কফি কাপ ১৫০, ফিরনি বাটি সেট ১৪৫০, ফুল প্লেট ৩০০, হাফ প্লেট ২৫০, ভেজিটেবল বোল ২০০-৪৫০, মগ ২০০, ফল সাজানোর প্লেট ৫৫০-৭৫০, কড়াই বাটি সেট ১৪৫০, লবণদানি ৫০-১৮০, মাংস রাখার বোল ৬৫০-৯৫০, গ্লাস ১০০-২৯০ টাকা।
মুন্নু সিরামিকস: এখানে ডিনার সেট পাবেন (৩২ পিস) ১৬৫০-২৬৯৩ টাকা, চায়ের কাপ সেট ১৪০০-৩৫০০, বোন চায়না ডিনার সেট ৪১০০, কফি সেট ৯৫০-১৫০০, প্লেট (প্রতিটি) ১০০-১১০ টাকা, ফিরনি বাটি (প্রতিটি আকারভেদে) ৫০-২০০, তরকারির বাটি ২০০-১০৫০, লবণদানি ১৫০-২৫০ টাকা।
শাইনপুকুর সিরামিকস: এখানে ডিনার সেট পাবেন ২০০০-৮৫৫০ টাকায়, কফি সেট ২০০, ফিরনি সেট ২৫০, প্লেট (প্রতিটি) ২০০-৮০০ টাকা। এ ছাড়া একটু কম দামে কাচ সিরামিকসের পণ্য পেতে চাইলে চলে যেতে পারেন নিউমার্কেট ও মৌচাকে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির সিরামিকসের পণ্য। চলুন, জেনে নিই কয়েকটি পণ্যের দরদাম।
ডিনার সেট (৩২ পিস): ৩০০০-১২০০০ টাকা, টি সেট ৩০০-৯৫০, স্যুপ বাটি সেট ৬০০-১০৫০, মগ ৫০-২৫০, সালাদের প্লেট ১৫০-২১০, তরকারির ঢাকনাসহ বাটি ২৫০-৫০০, প্লেট (প্রতিটি) ১৫০-৩৫০, ফিরনি ও সেমাই সেট ২৫০, গ্লাস সেট ও জুস গ্লাস সেট ২৫০, নানা আকৃতির বাটি ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া এলিফ্যান্ট রোডে রয়েছে মুন্নু সিরামিকস ও শাইনপুকুর সিরামিকসের ডিলারশিপ নেওয়া বেশ কিছু দোকান। এখানে কয়েকটি দোকানে কোম্পানির চেয়ে কিছু কম দামে পাবেন সিরামিকসের পণ্য। এই মূল্য ছাড় কোম্পানির দেওয়া নয় বলে জানালেন এসব দোকানের বিক্রেতারা। এ ছাড়া দেশীয় বাসনকোসন দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করতে চাইলে চলে যেতে পারেন আড়ংয়ে।
আড়ং: আড়ংয়ের আসাদগেটের শোরুমের সুপারভাইজার শিরীন সুলতানা জানান, এ সময় সিরামিকসের বাসনের চাহিদা থাকায় বেশ কিছু সিরামিকসের বাসন এনেছেন তাঁরা। এর মধ্যে সিরামিকসের কারি ডিশ পাবেন ৭৭৮ টাকা, বোল ২১১, পাতা আকৃতির ট্রে ২৮৫, ফিশ ট্রে ৫৩২ টাকা।
মাটির বাসনকোসনের মধ্যে কারি বোল ১১৮ টাকা, প্লেট ৮৮, হাফ প্লেট ৪৯, ছোট বাটি ৩৯-৫০, স্পেশাল কাঠের কারি ডিশ ৮৭৬ টাকা এবং ড্রাই ফুড ট্রে ৩৮৪ টাকা। আড়ংয়ে রয়েছে বিভিন্ন নকশার চামচের বিরাট সম্ভার। এর মধ্যে কাঠের তৈরি চামচ পাবেন ৬৮ টাকা, নুডল্স চামচ ১২৭ টাকা জোড়া, কারি চামচ ১০০-১৪০ টাকা, নারকেলের শেড দেওয়া চামচ ৫০-৬০ টাকা।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৭, ২০১০
Leave a Reply