ওষুধ নিয়ে কথা
ওষুধ খাওয়াই যখন অসুখ
সুভাষ সিংহ রায়
ফার্মাসিস্ট
রোগ হলে ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু কখন কীভাবে ওষুধ খেতে হবে, সেটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যথা কমানোর একটা ওষুধ হচ্ছে ডাইক্লোফেনাক। তাই বলে ব্যথা হলে না বুঝেশুনে ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ওষুধ খাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। যকৃতের পুরোনো সমস্যা থাকলে বা বৃক্কে গোলযোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও পেপটিক আলসারের রোগীদের এ ওষুধ সেবনে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
কারও যদি অ্যাসপিরিন বা অন্য কোনো ওষুধে অ্যালার্জি থাকে, হাঁপানির কষ্ট থাকে, তাহলে চিকিৎসককে জানানো উচিত। নানা উপসর্গে ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করতে হয়।
কাঁধের অসহ্য যন্ত্রণায়, অস্ত্রোপচারের ব্যথায়, পেট বা পেশিতে খিঁচুনি, হাড় স্থানচ্যুত হওয়ায় ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয় ডাইক্লোফেনাক। এ ক্ষেত্রে যে যে উপসর্গের কথা বলা হলো, সে রকম কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ওষুধ নিজে নিজে খাওয়া যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে অনেকগুলো শর্তের প্রসঙ্গ এসে যায়।
এ ওষুধ খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ব্যথা কমতে শুরু করে। ৫০ মিলিগ্রাম বড়ি দিনে দুটি করে খেতে বলা হয়। কিন্তু যাঁদের বয়স ৬০ বছরের ওপরে কিংবা শিশুদের জন্য এ ওষুধের মাত্রা অনেক কমে যায়। মায়ের দুধের সঙ্গে এ ওষুধ নিঃসৃত হয় বলে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের এটা খাওয়া নিষেধ।
এ রকম ক্ষেত্রে ভ্রূণের হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। এ ওষুধ খাওয়ার সময় অ্যালকোহল খেলে পাকস্থলীর প্রদাহ হবেই। তা ছাড়া অনেক হাঁপানি রোগী আছেন, যাঁদের স্টেরয়েড খেতে হয়। তাঁদের ডাইক্লোফেনাক খেতে নেই। অন্যান্য নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ, বিশেষ করে অ্যাসপিরিনের সঙ্গে কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না।
আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা সারা বছর হজমের ওষুধ, মাথাব্যথার ওষুধ, পেট খারাপের ওষুধ ইত্যাদি খেয়েই চলেছেন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তিনি নিজেই নিজের ডাক্তারি করেন। অদ্ভুত বিষয় হলো, তিনি নিজে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বলতে পারেন না যে তাঁর সমস্যাটা কোথায়, কোথায় আসল কষ্ট।
এসব ক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় বলা যায়, ওষুধ খাওয়াটাই একটা বড় অসুখ। মনস্তত্ত্ববিদেরা বলেন, অবচেতন মনের বিভিন্ন দ্বিধা, অত্যধিক স্বাস্থ্যসচেতনতা বা আত্মসচেতনতা এই রোগ সৃষ্টির মূল কারণ। আবার অনেকের মতে, আত্মবিশ্বাসের অভাব, নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা, বিকৃত ব্যক্তিসত্তা এ রোগের কারণ হতে পারে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৫, ২০০৮
Leave a Reply