ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।—বি.স.
সমস্যা: ছোটবেলা থেকেই আমি মেধাবী, ভদ্র ও ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত এবং কিছুটা অন্তর্মুখী। তবে লাজুক নই। যাই হোক, কলেজ-জীবনে প্রবেশের পর থেকেই লক্ষ করছি, দুনিয়ার সবাই আমার মতো করে চিন্তা করে না। আমি যেসব বিষয়ে পশ্চাৎপদ বা রক্ষণশীল, সেসব বিষয়ে অনেকে আধুনিক চিন্তাধারার অধিকারী। এসব বিষয় আমাকে ইদানীং বেশ পীড়া দিচ্ছে। আমি ছোটবেলা থেকে যে মনোভাব নিয়ে বড় হয়েছি, সেসব ধারণা কি ভুল, নাকি আমাকে যুগের সঙ্গে অনেক বেশি তাল মেলাতে হবে? যদিও আমি নিজেকে কখনোই কোনোভাবে আনস্মার্ট বা বোকা মনে করি না।
বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েরা সম্পর্কের ব্যাপারে অনেক বেশি খোলামেলা। আমি সে রকম নই বা চেষ্টা করেও হতে পারছি না। তাই আমার যার সঙ্গে বিয়ে হবে, যা হতে যাচ্ছে, সেও কি আমার মতো করে চিন্তা করে, নাকি সেও আধুনিক মনোভাবের অধিকারী হবে?
যদি হয়ও, তবে সে কি বিয়ের আগে সেসব সম্পর্কের কথা আমার কাছে প্রকাশ করবে, নাকি পুরোটাই গোপন রাখবে?
সীমান্ত
ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ: তোমার চিঠি পড়ে খুব ভালো লেগেছে। নিজের সম্পর্কে সচেতনতা এবং ধারণাগুলো অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছ। তবে তুমি আধুনিক চিন্তাধারা বলতে কী বোঝাতে চেয়েছ, সেটি পরিষ্কার নয়। সম্পর্কের ব্যাপারে খোলামেলা বিষয়টিও আরেকটু স্পষ্ট করলে ভালো হতো। তবে আধুনিকতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা কিন্তু এক নয়। বিয়ের আগে এক বা একাধিক প্রেমের সম্পর্ককে কি তুমি আধুনিকতা বলতে চেয়েছ? এখন বিয়ের আগে বা বিয়ের পরও কারও সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া খুব বেশি ঘটছে। তবে অনেক সময় এই সম্পর্কগুলো খুব সুস্থভাবে এগোয় না। কখনো কখনো সেখানে গভীরতা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধার খুব অভাব থাকে। আবার কখনো দেখা যায়, কোনো একজন বা দুজনই নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য লড়ে যাচ্ছে। আর সে কারণেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না বলে একের অধিক সম্পর্ক তৈরিও হচ্ছে। বিয়ের পর দুজনেরই বিয়ে প্রথাটির প্রতি সঠিক মূল্যবোধ নিয়ে চলতে হবে। সম্পর্কটি কীভাবে সুন্দর ও সুস্থ করা যায়, সে বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে। আমাদের এমন অনেক অতীত ঘটনা থাকতে পারে, যা অন্য সঙ্গীকে আহত করতে বা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিতে পারে। সেটি তখনই প্রকাশ না করে দুজনের মধ্যে একটি সুদৃঢ় বন্ধন তৈরি হওয়ার পর সবকিছু খুলে বলা ভালো। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, দুজনেরই স্বাধীনতা রয়েছে নিজেদের অতীতের ঘটনাগুলো সঠিক সময়ে প্রকাশ করার। তবে বিয়ের পর দুজনকে অবশ্যই পরস্পরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সৎ ও বিশ্বাসী থাকতে হবে।
সমস্যা: আমি একটি মেয়েকে ভালোবাসি। তার সঙ্গে দুই মাস ধরে কথা বলছি। কিন্তু সে আমাকে সব সময় বলে, তার সঙ্গে আরেকটি ছেলের বিয়ের কথাবার্তা হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তাকে ছাড়া কিছু বুঝি না, পড়ায় মন বসে না। নিয়মিত ঘুমাতে পারি না। আমার প্রশ্ন, তার সঙ্গে যদি ওই ছেলের বিয়ের কথাবার্তা হয়ে থাকে, তাহলে সে আমার সঙ্গে কেন সব সময় কথা বলে। সে আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায়। আমি যা করতে বলি, সে তা করে। কিন্তু আমাকে ভালোবাসে না। সে যদি আমাকে ভালো না বাসে, তাহলে আমার সঙ্গে এত কিছু করছে কেন। সে কি আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে চায়? যে ছেলের সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা হয়ে গেছে, সে এখন দেশের বাইরে। ওই ছেলে আমার সামনে কয়েকবার বিদেশ থেকে ফোন করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
চট্টগ্রাম।
পরামর্শ: মেয়েটি তোমাকে বলেছে, সে অন্য একটি ছেলের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাহলে ধরে নেওয়া যায়, সে তার অবস্থান তোমাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সে তোমার সামনেই তার হবু স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে। বুঝতে পারছি, দুই মাস ধরে তুমি তার সঙ্গে খুব বেশি যোগাযোগে ছিলে বলে তার ওপর আবেগীয়ভাবে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছ। এখানে যে জিনিসটি অনুপস্থিত তা হচ্ছে, তোমাদের সম্পর্কের একটি সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ও কথোপকথনের সীমারেখা। মেয়েটিকে যদি তুমি শুধু একজন ভালো বন্ধু হিসেবে দেখতে পারতে, তাহলে খুব ভালো হতো। ছেলেমেয়ের বন্ধুত্ব হওয়া মানেই কিন্তু প্রেম নয়। তুমি তাকে যে দৃষ্টিতে দেখছ, সেভাবে সে যদি তোমাকে না দেখতে চায়, তাহলে তাকে তো সেই অধিকারটুকু দিতে হবে, তাই না? তোমাকে এটাও ভেবে দেখতে হবে, তোমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সে তোমাকে শুধু সময় কাটানোর অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করছে কি না।
যদি তা-ই হয়, তাহলে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তোমাকেই উপায় খুঁজে বের করতে হবে। তুমি যদি প্রতারিত বা ব্যবহূত হওয়ার অনুভূতি নিয়ে থাকতে না চাও, তাহলে এই সম্পর্কটি নিয়ে কী করবে, তা খুব ভালোভাবে ভেবে দেখবে। কারণ কেউ যদি আমাদের শুধু নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে, তাহলে একসময় নিজেকে শ্রদ্ধা করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৪, ২০১০
Leave a Reply