রাজকীয় ভোজন
শুরুতেই ঝালজিরা শরবত। আপনার শরীরকে দেবে প্রশান্তি, চাঙা করবে ভোজনরসিকতাকে। তারপর বিখ্যাত ভারতীয় ঘরানার দম বিরিয়ানি, খাসি বা মুরগির। সঙ্গে পালংপনির এবং পনির ও মাখনের মালাই কোপ্তা কারি। আরও কিছু চাইছেন! সমস্যা নেই, নিয়ে নিন পদ্মা বা মেঘনা থেকে সংগৃহীত ইলিশের হিলশা মালাইকারি। কাঁটাবিহীন ইলিশ ও ঝাঁজালো সরষে বাটার সংমিশ্রণ এই ইলিশ মালাইকারি। ভারতীয় স্বাদের এসব মুখরোচক খাবার খেয়ে যখন আপনি তৃপ্ত, তখন আপনার জন্য আসবে কাজুবাদামে ঘেরা গরম গরম রসাল গোলাপ জামুন বা কাজু বরফি বা মতিচুর লাড্ডু। কী পকেটে মানিব্যাগ নিয়ে প্রস্তুত, এখনই খেতে যাবেন! ঢাকার গুলশান-২ নম্বর, জার্মান দূতাবাস পার হয়ে হাতের বাঁ দিকে কিছুটা পথ এগোলে হাতের ডানে দেখতে পাবেন খাজানা।
এখানে।
ভারতীয় খাবারের স্বাদ
শুরুটা করেছিলেন ভারতের বিখ্যাত শেফ সঞ্জীব কাপুর। বাংলাদেশিদের কাছে ভারতীয় স্বাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখন তিনি খাজানার সঙ্গে নেই, কিন্তু খাজানা আছে এবং এখনো তারা সঞ্জীব কাপুরের ধাঁচটা বজায় রেখেছে। এর পাশাপাশি নিয়মিতভাবে নতুন নতুন আইটেম মেনুকার্ডে যুক্ত হচ্ছে। পরিচালক অভিষেক সিনহা জানালেন, খাজানার প্রধান লক্ষ্য হলো সবচেয়ে ভালো সেবা, মানসম্পন্ন খাবার এবং অসাধারণ স্বাদ ও নতুনত্ব। খাজানা রেস্টুরেন্টে শুধু ভারতীয় খাবার পাওয়া যায়। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম ভারতের কাবাব, টিক্কা, ভুনা মাংস, বিরিয়ানি, নানা স্বাদের মিষ্টি, নিজস্ব ঢঙের কোমল শরবত ও পানীয়।
মাহি, ঝিঙ্গা আর মুরগ্
ভারতে মাছকে বলা হয় মাহি ও চিংড়িকে বলা হয় ঝিঙ্গা। তাই প্রথমে মেনুকার্ডে যখন ভারতীয় ভাষার বিভিন্ন শব্দ দেখবেন, তখন অবাক হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করবে রেস্টুরেন্টের সেবাপ্রদানকারী ওয়েটাররা। তাদের জিজ্ঞাসা করলেই তারা আপনাকে খাবারের ভালো একটা বর্ণনা দিয়ে দেবে। তারপর আপনি প্রয়োজনমাফিক অর্ডার দিন।
কাবাবের বাহার
খাজানায় প্রধান পদগুলোর মধ্যে আছে ফ্রন্টিয়ার মিক্স গ্রিল (চিংড়ি, মাছ, মুরগি ও খাসির সম্মিলিত কাবাব), জালালি ঝিঙ্গা, মাহি আচারি টিক্কা (কাঁটাবিহীন ভেটকি মাছের তন্দুুর গ্রিল), রান বুঝকাজ্জি (খাসির লেগ রোস্ট), শিক কাবাব, খাস কাবাব (পুদিনা ও পনিরের মালাইয়ে চিকেন শিক কাবাব)। মুরগির অন্যান্য পদের মধ্যে আছে মুরগ্ তান্দুরি, চাঁদনি কালিয়া এবং মুরগ্ কালি মিরচ্ (কালো মরিচের তন্দুরি চিকেন)। এই কাবাবগুলোর সঙ্গে আপনি খেতে পারেন পেশোয়ারি নান, পুন্দিয়া পরোটা, তান্দুরি রুটি, বাটার নান, রুমালি রুটি ইত্যাদি।
আরও অনেক পদ
গ্রেভি বা ঝোল-জাতীয়র মধ্যে আছে তাওয়া ঝিঙ্গা, ঝিঙ্গা মালাইকারি, তাওয়া মাহি মসলা (ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ ও টমেটোর সঙ্গে রান্না করা মাছ), ভুনা গোশত (সঙ্গে পেঁয়াজ-টমেটো মাসালা), মুরগ্ কোরমা (দমে রান্না করা হাড়বিহীন মুরগি), মুরগ্ মাখানি (মাখনে রান্না করা মুরগি), মাংসের দোপেঁয়াজা ইত্যাদি।
বাসমতি চালের ব্যবহার ভারতীয় খাবারের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। খাজানা তাই বাসমতি চালের বিরিয়ানি উপস্থাপন করেছে ভারতীয় ঢঙে। বাসমতি চাল, সঙ্গে মুরগি ও খাসির মাংস—খাজানা একবারে ভারতীয় স্টাইলে দম পদ্ধতিতে বিরিয়ানি রান্না করে থাকে। মুরগ্ নূরমহল বিরিয়ানি, কাচ্চি গোশত কি বিরিয়ানি এবং মটর পোলাও খেয়ে একজন ভোজনরসিক বুঝে যাবেন কেন এত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু এই বাসমতি চালের দম বিরিয়ানি।
সরেস নিরামিষ
নিরামিষ পদগুলো যে কত সুস্বাদু ও অসাধারণ হতে পারে খাজানায় সেটা ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়। প্রথমেই আসা যাক সালাদে। খাজানায় সালাদের মধ্যে আছে থ্রি চিলি পটেটো সালাদ, কাবুলি চানা চাট এবং গার্ডেন ফ্রেশ গ্রিন সালাদ। এর মধ্যে গার্ডেন ফ্রেশ গ্রিন সালাদ আপনি যেকোনো খাবারের সঙ্গে নিতে পারবেন। নিরামিষ-জাতীয় অন্য পদগুলোর মধ্যে আছে শোরবা-ই-গুলজার, ভেজিটেরিয়ান মিক্স গ্রিল, কোপ্তাকারি, পনির টিক্কা কাসুরি, আলু নাজাকাথ্ (মাখন ও বাদাম দিয়ে তান্দুরি উপায়ে রান্না করা আলু), শাবনাম কে মতি (মাশরুম ও সবজির গ্রির, সঙ্গে টমেটো সস), পনির মাখনি, পনির রেশমি, মেথি চামান, কাজু খুম্ব্ কারি (দই, পেঁয়াজ, কাজু বাদাম, মাশরুম ও টমেটোর সুস্বাদু সমন্বয়), জিরা আলু, দহি গুজিয়া (দইয়ের একটি বিশেষ পদ), তাওয়া মিঠাই চাট ইত্যাদি। বিরিয়ানি কে না খেতে চায়! নিরামিষভোজীদের জন্য তাই খাজানা রেখেছে বিরিয়ানি গুল-ই-গুলজার (নিরামিষ দম বিরিয়ানি)।
শরবতে তৃপ্তি
এ তো গেল মূল খাবারের কথা। এসব অসাধারণ খাবার খেয়ে পেটপূজার পর প্রসাদ হিসেবে আপনার জন্য আছে নানা রকম শরবত আর মিষ্টি। জলজিরা, আইসক্রিম, কুলফি, ব্লু মুন (বিশেষ ধরনের লেবুর শরবত), দ্য গ্রিন লেডি, পিনা কোলাডা (আনারসের শরবত), সিন্ডারেলা (কমলার শরবত), লিচি পাঞ্চ (লিচুর শরবত), লাভারস্ ডিলাইট (আমের শরবত) ইত্যাদি সব সুস্বাদু ডেজার্ট আপনাকে দেবে তৃপ্তি। মিষ্টি খাবারের মধ্যে আছে জিলাপি, কাজু বরফি, রসমালাই, চমচম, গুলাব জামুন, কালাকান্দ্, চকলেট সন্দেশ, শনপাপড়ি, ছানার পায়েস, মিষ্টি দই, চিনিবিহীন রসগোল্লা ইত্যাদি। এসব আইটেম আপনি খাজানার মিষ্টি খাবারের আউটলেট খাজানা মিঠাইয়েও পাবেন।
ইফতারি
রমজান মাসে খাজানা প্রতিবারই বিশেষ আয়োজন করে থাকে। ওপরের সব আইটেমের সঙ্গে তখন আরও যুক্ত হয় কাঠি রোল, কালমি কাবাব, ছুপা রুস্তাম (চিকেন, মাটন, পনির সবজির সমন্বয়) ইত্যাদি। আর রান্নাটাও হবে আপনার চোখের সামনেই। খাজানার এই ইফতার বাজারটা বসবে গুলশান এভিনিউয়েই, জার্মানি দূতাবাসের বিপরীত দিকে। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে পাবেন: খাজানা মিঠাই, শপ নম্বর ৬১, ইস্টার্ন এলিট সেন্টার, হাউস নম্বর ৫০, রোড-৯/এ, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি।
সুব্রত দেব নাথ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১০, ২০১০
Leave a Reply