মায়ের দেওয়া ঘড়ির অ্যালার্মের শব্দটা কানে আসতেই জয়ীর মনে পড়ে গেল আজ স্কুলে যেতে হবে একটু আগে। রাতে পইপই করে বলে দিয়েছেন মা। লক্ষ্মী মেয়ের মতো ঘুম থেকে উঠে হাতে ব্রাশ নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে গুছিয়ে নিল স্কুলের ব্যাগটা। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে স্কুলের পোশাক পরে সোজা খাবার টেবিলে চলে গেল। নিজেই বানিয়ে নিল এক গ্লাস হরলিকস।
ছোটবেলা থেকেই এমন স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারেন আপনার শিশুকে। ‘নিজের কাজটি নিজের হাতে করতে বেশ আনন্দিতই হয় শিশুরা।’ বলছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম। তিনি শিশুকে স্বাবলম্বী করে তোলার কিছু কৌশলও বলেছেন—
শিশুকে শেখানোর সময়টা একদম ছোটবেলা থেকেই। খাওয়ার সময় আপনার ছোট্ট শিশুটিকে একটা উঁচু চেয়ারে বসিয়ে দিন। তার সামনে রেখে দিন একটা প্লেট ও চামচ। আপনার খাওয়া দেখে দেখে সে নিজে নিজেই শিখে নেবে খাওয়াটা, ওকে খাওয়ানোর সময়টাও বেঁচে গেল।
শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয়। তাই ওর কাজগুলো ওর সামনেই করুন। অনুকরণ করতে করতে ও শিখে নেবে।
ওর জামাকাপড়গুলো ওর সামনে ভাঁজ করুন ও গুছিয়ে রাখুন। ওকে দেখিয়ে দিন কীভাবে জামা ভাঁজ করা হয়। কীভাবে প্যান্ট ভাঁজ করা হয়।
আপনার শিশুর জামা, জুতা সব সময় একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন এবং স্থানটি ওকে দেখিয়ে দিন। স্কুল থেকে ফিরে নিজেই জায়গামতো রেখে দেবে জামা, জুতা।
ওর টেবিলটা সুন্দর করে গুছিয়ে দেখিয়ে দিন কোন পাশে বই, কোন পাশে খাতা, পেনসিল রেখেছেন। আর ওর ক্লাস রুটিনটা বড় করে টেবিলের সামনে ঝুলিয়ে রাখুন। এটা দেখে সে নিজেই গুছিয়ে নেবে স্কুলের ব্যাগটা।
ওকে শিখিয়ে দিন সাবধানে কীভাবে লাইট, ফ্যানের সুইচ টিপতে হয়। পাশাপাশি বেসিনের বা বাথরুমের জলকলটাও।
টোস্টার মেশিন ও ওভেনের ব্যবহারও শিখিয়ে দিন এক ফাঁকে। ওর সকালের খাবার ও নিজেই তৈরি করে নিতে পারবে। পাশাপাশি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম করে নিতে পারবে দুধ।
বিকেলে বাগানে খেলতে খেলতে একফাঁকে টবে লাগানো গাছে পানি দেওয়ার নিয়মটা শিখিয়ে দিন।
ওকে পড়া দিয়ে ওর পাশে না থেকে আপনি ওকে সময় ধরে দিয়ে আপনার হাতের কাজটা গুছিয়ে নিন। তারপর সময়মতো ধরুন পড়াগুলো। ওর নিজের দায়িত্বে পড়া তৈরির অভ্যাস এভাবেই হয়ে যাবে।
শিশুর বয়স একটু বাড়লে কিছু কিছু কাজ ওকে দিকে করাতে পারেন। যেমন অতিথি এলে বিস্কুট দেওয়া, পানি দেওয়া এগুলো।
মাঝেমধ্যে ওর ছোট ভাইবোন বা বুড়ো দাদু-নানুর দেখাশোনার দায়িত্ব দিন।
সহজ কয়েকটি খাবার তৈরি শিখিয়ে দিন ওকে। মাঝেমধ্যে বিকেলের নাশতাটা খান ওর হাতে। দেখবেন টিফিনটা ও নিজেই তৈরি করে নেবে। গল্প করতে করতে ওকে ওর নতুন জুতা জোড়া নিয়ে আসতে বলুন, তারপর শিখিয়ে দিন ফিতা বাঁধাটা।
ওকে ওর বিশেষ কোনো দিনে উপহার দিতে পারেন একটা টাই। তারপর বসে বসে শিখিয়ে দিন এটি বাঁধার কৌশলটাও। ফলে প্রতিদিন সকালে ওর স্কুলের পোশাকের টাই বাঁধার জন্য আপনার সময়ও বেঁচে যাবে।
প্রথম প্রথম শিশুর কাজটি পুরো সঠিক নাও হতে পারে অথবা ভুলও করে ফেলতে পারে। তবে এর জন্য ওকে ভুলেও বকাঝকা বা মারধর করবেন না। বরং তাকে কাজটি আরও সুন্দর করে দেখিয়ে দিন ও বুঝিয়ে বলুন।
আপনার শিশুটি কোনো কাজ সুন্দরভাবে করলে তাকে অনেক উৎসাহ দিন। হাততালি ও প্রশংসায় সে আরও বেশি উৎসাহী হবে নিজের কাজ নিজের হাতে করতে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১০, ২০১০
Leave a Reply