তাজিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। এ মাসেই তাঁর বড় বোনের বিয়ে। বন্ধুদের কাছে শুনেছেন আড়ংয়ে সুন্দর ডিজাইনের রুপার গয়না পাওয়া যায়। তাই বোনকে সঙ্গে নিয়ে তাজিন রুপার গয়না কিনতে এসেছেন। কালো, রুপালি আর লাল শাড়ির সঙ্গে রুপার গয়না খুব ভালোই মানাবে।
হাল ফ্যাশনে রুপার চল ফিরে এসেছে। জাকিয়া হক এসেছেন ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটে। লিজা বলছিলেন, ‘মায়ের পুরোনো সেই রুপার সেটগুলো দিয়ে নতুন ডিজাইনে বানাতে এসেছি। এত দিন বাসায় এই সেটগুলো পড়ে ছিল। কিন্তু এখন রুপাই আমার পছন্দ। আর সোনার গয়না পরে তো রাস্তায় বের হওয়া যায় না। এদিক থেকে চিন্তা করে রুপা ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি বলে রুপার অনেক গয়না বানাই। ফলে খরচটাও অত বেশি পড়ে না।’ কিছু দূর যেতেই দেখা পেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত শারমীনের। তিনি বলেন, ‘রুপার গয়না আমার কাছে একটু ব্যতিক্রমধর্মী মনে হয়। ফিউশনের রুপার গয়না আমি পছন্দ করি। যেকোনো পরিবেশেই এটি মানানসই। এই যেমন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপার কানের দুল পরে যাই। সোনার দাম অনেক বেশি বলে রুপা অনেক সাশ্রয়ী।’ সিফাতের সঙ্গে ছিল তাঁর বান্ধবী শাম্মী। শাম্মীর কাছে রুপার গয়না ফ্যাশনেবল মনে হয়। আর এটি উপহার হিসেবেও বিভিন্ন উৎসবে দেওয়া যায়। আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মী রোজী বলেন, ‘এখন তো রুপার গয়নাই বেশি চলছে। আড়ং ঐতিহ্যবাহী গয়না তৈরি করে থাকে। তরুণীরা যেকোনো অনুষ্ঠানে, সেটা বিয়ে বা জন্মদিন যা-ই হোক না কেন, রুপার গয়না পরতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন বলে রোজী জানান। মায়াসীরের ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান জানালেন, রুপার গয়না পরলে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। এ ধরনের গয়নার এখন ভালো চাহিদা তৈরি হয়েছে। এখন অনেক ধরনের গয়না, যেমন—ঐতিহ্যবাহী, পাথরের মিশ্রণে তৈরি, অক্সিডাইজড রুপার গয়না পাওয়া যাচ্ছে। বহুকাল আগে বিছা, হাঁসুলি, সীতাহার ইত্যাদি গয়নার ব্যবহার ছিল। এখন অনেকেই সেই পুরোনো আমলের আদলে গয়না পরতে পছন্দ করছেন। রুপার সঙ্গে অন্য ধাতুর মিশ্রণ এখন খুব চলছে, সঙ্গে মুক্তা ও পুঁতির ব্যবহারও চলছে। মায়াসীরের বেশির ভাগ রুপার গয়নাই পাথরের মিশ্রণে তৈরি। এটি বেশির ভাগ তরুণীই পছন্দ করছেন। গাউছিয়া মার্কেটের আশরাফ জুয়েলার্সের কর্মী আবদুল মতিন জানান, এখন লকেট বা ছোটখাটো গয়নাগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে। অক্সিডাইজড গয়নায় খরচ কম পড়ে, তবে পাথর দিয়ে করলে খরচ বেশি পড়বে। গাউছিয়া মার্কেটের নিউ এডি জুয়েলার্সের লিটন বললেন, বিভিন্ন নকশা দেখে নিজেরা আবার তাতে নানা কিছু যোগ করেন। এভাবেই তৈরি হয় নতুন নকশার গয়না। অনেক সময় ক্রেতাও নকশা দিয়ে দেন।
যত্নাদি
মাহিন খান বললেন, রুপার একটি সমস্যা হলো এটি কালো হয়ে যায়। মায়াসীর কালো করা অর্থাৎ অক্সিডাইজের রুপা বিক্রি করে। সাদা রুপা হলে সিলভার বা মেটাল পলিশ করে এর যত্ন নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ডিটারজেন্ট, যেমন—হুইল পাউডার, সার্ফ এক্সেল দিয়ে গরম পানিতে ভিজিয়ে টুথব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। গাউছিয়া মার্কেটের আশরাফ জুয়েলার্সের আবদুল মতিন জানান, রুপার গয়না টিস্যু দিয়ে রাখতে পারেন। আর পারফিউম ব্যবহার করে গয়না পরলে তাড়াতাড়ি রুপা কালো হয়ে যায় ।
কোথায় কেমন দরদাম
বর্তমানে বাজারে রুপার ভরি ৭০০ টাকা করে।
আড়ং
কানের দুল ২০০-৩০০০ টাকা, সেট ১-১১০০০, ব্রেসলেট, লকেট, পায়ের আংটি, হাতের আংটি, চেইন, চুড়ি বা বালা ১০৮-৮০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া আড়ংয়ে রুপার নৌকা, রিকশা, ফটো ফ্রেম পাওয়া যায়। এর দাম পড়বে ২০০-৩০০০ টাকা।
মায়াসীর
কানের দুল ৬০০-৬০০০ টাকা, আংটি ১০০০-১২০০ টাকা, গলার সেট ২৫০০-২৫০০০, পায়েল ১২০০-১৮০০ টাকা, চুড়ি বা চুড়, বালা ১৮০০-৫০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
গাউছিয়া মার্কেট
গাউছিয়া মার্কেটে ওজন ও পাথর অনুযায়ী দামের ওঠানামা করে। যেমন—সেট ৩ থেকে ২৫ হাজার, কানের দুল ১০০০-৪০০০, বালা বা চুড়ি তিন হাজার থেকে ১০-১২০০০।
তাহমিনা হক
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১০, ২০১০
Leave a Reply