অন্দরসজ্জায় চিরাচরিত ধারণা থেকে বের হয়ে অন্দরসজ্জাকারীরা মেতে ওঠেন ঘর সাজানোর নানা রকম নকশার পরীক্ষণে। সাধারণত বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে ঘরের কোনাগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। অনেকেই হয়তো কর্নার-র্যাক অথবা টিভির স্ট্যান্ড দিয়ে পূর্ণ করে ফেলেন ঘরের কোণ। কিন্তু বিভিন্ন রঙের আলোছায়ার মেলায় এবং শৌখিন কিছু জিনিসের ব্যবহারে ঘরের কোণের সাজ পাল্টে দিতে পারে ঘরের চেহারা। কোণে কীভাবে আনবেন শৈল্পিকতার ছোঁয়া, এ বিষয়ে রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফারজানা গাজী বলেন, ‘নতুন বাড়িতে তো বটেই, বিশেষ করে একটু পুরোনো ধাঁচের বাড়িতে কর্নারের ইন্টেরিয়র ঘরে এক ধরনের আধুনিক চেহারা নিয়ে আসে।’
সাধারণত মাটির পটারি, ল্যাম্পশেড, আয়না, মোমদানি—এগুলো দিয়ে সাজানো যায় ঘরের কোণ। এ ছাড়া ঘরের কোনায় রং ও আলোর খেলা আপনার মনে এনে দেবে প্রফুল্লতা। সাধারণত বসার ঘরের কোনাটি জাঁকজমকভাবে সাজানো হয়। যেমনটি সাজানো হয়েছে ফারজানা ফারীনের বাসার বসার ঘরটি। তাঁর বসার ঘরের দেয়ালজুড়ে সাদা রঙের মেলা। মাঝের কর্নারটি আকর্ষণীয় করতে লাল রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। ফারজানা গাজী বলেন, নিজের পছন্দের পাশাপাশি অন্য দেয়ালের রং ও আসবাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্নারের রং নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত অনেকেই বসার ঘরের দেয়ালজুড়ে হলুদ বা কমলা রং ব্যবহার করেন। সে ক্ষেত্রে ঘরের কর্নারে লাল রঙের এবড়োখেবড়ো টাইলস (রাস্টিক টাইলস) অথবা শ্লেট ব্যবহার করতে পারেন। এরপর দেয়ালের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেরাকোটা বা পেইন্টিং কর্নারের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখুন। কোনায় রাখতে পারেন সুদৃশ্য পটারিতে গাছ। চাইলে পটারির পরিবর্তে রাখতে পারেন হালকা রঙের স্ট্যান্ডিং ল্যাম্পশেড। তবে পটারি বা ইনডোর প্ল্যান্টস, যেটাই রাখুন না কেন, খেয়াল রাখবেন এগুলো যাতে তিন থেকে চার ফুট আকৃতির লম্বা হয়। শোবার ঘরের কর্নারে দেয়ালের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিলিং থেকে (বড় থেকে ছোট) ক্রমানুসারে তিনটি গোলাকৃতির রংবেরঙের ল্যাম্পশেড ঝুলিয়ে দিন। যেহেতু এটি বিশ্রামঘর, তাই এর কর্নার বেশি জাঁকজমক করবেন না। খাবার ঘরের কর্নারে রাখতে পারেন পছন্দমতো নকশার লম্বা ফুলদানিতে গাছ। এ ছাড়া খাবার ঘরের কোনায় দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে দিতে পারেন আর্ট গ্লাসের তাক। আর্ট গ্লাসটি যদি রংচঙে হয়, তবে এর ওপর কাচের কারুকাজ করা বাটিতে রাখতে পারেন ক্রিস্টালের ফল। আর গ্লাসটি সাদা হলে রাখতে পারেন বিভিন্ন নকশার মোমের শো-পিস। বাসার প্রবেশপথের কোনায় দেয়ালের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাখতে পারেন বড় আকৃতির স্ট্যাডি (চার ফুট উঁচু ও ছয় পায়ের) পিতলের প্রদীপদানি। প্রদীপদানির ওপরে দুদিকের দেয়ালের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসিয়ে দিতে পারেন কাঠের কারুকাজ করা আয়তাকৃতির আয়না। প্রদীপের সঙ্গে মেঝেতে রাখতে পারেন পিতলের হুঁকোর শো-পিস। আরেকটি পিতলের থালায় রাখতে পারেন বিভিন্ন আকৃতির মোম। যেকোনো উৎসবে প্রদীপের সলতের আলোতে আলোকিত প্রবেশপথ উষ্ণ-অভ্যর্থনা জানাবে ঘরে আগত অতিথিকে। শুধু প্রদীপের আলোতেই নয়, কর্নারকে আলোকিত করতে ব্যবহার করতে পারেন স্পটলাইট। সিলিংয়ে বসিয় দিন স্পটলাইট। তবে খেয়াল রাখবেন, স্পটলাইটের আলো যাতে হলুদাভ রঙের হয়। কারণ, হালকা হলুদ রঙের ছায়া ঘরে যেমন আনে আভিজাত্যের ছোঁয়া, তেমনি চোখে আনে প্রশান্তি। যে ঘরের কর্নারই সাজান না কেন, ঘরের আসবাব এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র হতে হবে হালকা নকশার। জানালেন ফারজানা গাজী। কারণ, কর্নারকে জাঁকজমকভাবে সাজালে তা ঘরকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। তবে বেশি কারুকার্যময় নকশার আসবাব রাখলে ভালো দেখায় না। চাইলে কর্নার ইন্টেরিয়র করা ঘরে মেঝেতে বসার ব্যবস্থা করতে পারেন। পুরো ঘরের দেয়াল সাদা রেখে কর্নারে রাখতে পারেন নান্দনিক ভাস্কর্য। আপনার ঘরটি যেমনই হোক না কেন, খুবই অল্প খরচে ঘরের কর্নারটি সাজিয়ে ঘরে আনতে পারেন শৈল্পিকতার ছোঁয়া।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৩, ২০১০
Leave a Reply