নতুন মোটরযানের নিবন্ধন নতুন গাড়ি কিনলে অবশ্যই তার নিবন্ধন নিতে হবে। মোটরযানের নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। যাঁরা নতুন গাড়ি কিনছেন বা কিনবেন বলে ভাবছেন, তাঁরা জেনে নিন কীভাবে মোটরযানের নিবন্ধন নিতে হয়।
নিবন্ধন-প্রক্রিয়া
গাড়ি আমদানি করে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখান থেকে গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের (ডিলার) শোরুমে চলে যায়। আর সাধারণ ক্রেতারা সেখান থেকেই কিনে নেন পছন্দের গাড়িটি। গাড়ি কিনে আমদানি ও রপ্তানিসংক্রান্ত কাগজপত্রসহ আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ কার্যালয়ে। সেখানে আপনি জানতে পারবেন প্রয়োজনীয় খরচের তথ্য, টাকা কোথায় জমা দেবেন, কাগজপত্রের তালিকা ইত্যাদি।
আবেদনপত্র
আপনি যখন কোনো শোরুম থেকে গাড়ি কিনবেন, সেখানেই পেয়ে যাবেন নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত আবেদনপত্র। আর এটি পাবেন বিনা মূল্যে। চাইলে আপনি ইন্টারনেট থেকে আবেদনপত্রটি নামিয়ে নিতে পারেন। ফরমের সেকশন-৫-এ তালিকাভুক্ত ডিলার স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে দেবে। চার পৃষ্ঠার এ আবেদনপত্রে তিন পৃষ্ঠায় দিতে হবে নানা তথ্য। তবে সেকশন বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ পূরণ করবে। বাকি অংশ ও সেকশনগুলোয় গাড়ি, ক্রেতার ক্রয়সংক্রান্ত তারিখ ইত্যাদি থাকবে।
ক্রেতার তথ্যাদি
আবেদনপত্রের তিন নম্বর পৃষ্ঠায় ক্রেতার নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, লিঙ্গ, ফোন নম্বর, জাতীয়তা, জন্মতারিখ, অভিভাবকের নাম, যন্ত্র (ইঞ্জিন) নম্বর, ক্ল্যাসিক নম্বর, উৎপাদনের তারিখ, যদি আগে নিবন্ধন নেওয়া হয়ে থাকে এবং পে অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট নম্বর। পরে নিচের অংশের চারটি ঘরে আলাদা আলাদা চারটি শনাক্তকারী স্বাক্ষর করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে স্ট্যাম্প সাইজের তিন কপি ছবি সংযুক্ত করে দিতে হবে।
মোটরযানের শ্রেণীকরণ
বিআরটিএ নিবন্ধন-প্রক্রিয়ার জন্য মোটরযানগুলো বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করে নিয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে ১০০০ সিসি পর্যন্ত ‘ক’, ১০০০ সিসি থেকে ১৪০০ সিসি ‘খ’, ১৪০০ সিসি থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ‘গ’ ও ২০০০-এর ওপরে ‘ব’ শ্রেণীতে নিবন্ধন পাবে। সব ধরনের জিপগাড়ি পড়বে ‘ঘ’ শ্রেণীতে। মাইক্রোবাস ‘চ’ শ্রেণীতে নিবন্ধন নিতে হবে।
ফি-সংক্রান্ত তথ্য
মোটরযানের নিবন্ধন ফি নির্ধারিত হয় এর সিসি কত তার ওপরে। গাড়ির শ্রেণী ও সিসির ওপর ভিত্তি করে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে রেখেছে। আপনি নিবন্ধন নিতে যখন যাবেন, কর্তব্যরত কর্মকর্তা আপনাকে তা জানাবেন। সঙ্গে জানতে পারবেন ইনকাম ট্যাক্সের তথ্যাদিও।
কোথায় ফি জমা দেবেন
নির্ধারিত ফি আপনি জমা দেবেন পোস্ট অফিসের নির্দিষ্ট শাখায়। তারা আপনাকে দেবে ফি জমা প্রদানের রসিদ। আর ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে রাজস্ব বোর্ডকে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদী
নতুন মোটরযান নিবন্ধন নিতে আবেদনপত্রের সঙ্গে নিচের কাগজপত্রাদি জমা দিতে হবে—
আবেদনপত্র মালিক ও আমদানিকারক/ডিলার কর্তৃক স্বাক্ষরিত। যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের স্বাক্ষর এবং কোম্পানির ক্ষেত্রে সিলমোহর। ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তার প্যাডে আবেদন করতে হবে।
ইনভয়েসের (কাস্টম কর্তৃক স্বাক্ষরিত) মূল কপি।
বিল অব লেডিং (ব্যাংক সত্যায়িত)।
ইমপোর্ট অনুমতি/এলসিএ।
সেলস সার্টিফিকেট বা বিক্রয় প্রমাণপত্র।
সেল ইন্টিমেশন (আমদানিকারক/বিক্রেতা স্বাক্ষরিত)।
গেইট পাস।
ডেলিভারি চালান।
প্যাকিং লিস্ট।
মূসক-১১, ১২(ক)/এটিভি (যদি লাগে)।
ভ্যাট পরিশোধের চালান।
বডি ও আসনব্যবস্থার স্পেসিফিকেশন নকশা।
টিন সার্টিফিকেট।
মোটরযানটি।
প্রয়োজনীয় ফি জমার রসিদ।
পরিচয় প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট ইত্যাদি।
ওপরের সব কাগজই যে আপনার লাগবে, এমনটা নয়। তবে বিক্রেতার কাছ থেকে আগেই জেনে নিন এবং চেয়ে নিন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
কোথায় জমা দেবেন
সারা দেশে প্রতিটি জেলায় রয়েছে বিআরটিএর শাখা কার্যালয়। আপনি আপনার সংশ্লিষ্ট জেলায় আবেদন করবেন। ঢাকায় রয়েছে বিআরটিএর দুটি সার্কেল। একটি মিরপুরে (উত্তর সার্কেল) এবং অন্যটি কেরানীগঞ্জে।
কখন পাবেন নিবন্ধন
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান,
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দেওয়ার পর বড়জোর দুই দিন সময় লাগতে পারে। সেদিনই পেয়ে যেতে পারেন নিবন্ধন (ট্যাক্স টোকেন)। আর টোকেনটি পাবেন স্থায়ী নম্বর
হিসেবে। কারণ, এটি নির্দিষ্ট মোটরযানের জন্য একটিই হবে। গাড়ি যেখানেই চলুক না কেন, এই নম্বর পরিবর্তন হবে না। একদম নতুন গাড়ির জন্য আপনি পাবেন সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের ফিটনেস সনদ। আর রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে যত দিন ব্যবহূত হয়েছে, তত দিনের মেয়াদ কমে যাবে।
যেকোনো তথ্যের জন্য আপনি যোগাযোগ করতে পারেন আপনার জেলার বিআরটিএ কার্যালয়ে অথবা মিরপুর বা কেরানীগঞ্জ সার্কেলে।
সাইদ আরমান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৩, ২০১০
Leave a Reply