শিশুকে যেকোনো কিছুই বুঝিয়ে বলতে হবে মৃত্তিকা খেতে চায় না, চায় না পড়তে। মা সোনিয়া বিষয়টা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। সব সময়ই তিনি সমাধানের উপায় ভাবতে থাকেন। তবে এরই মধ্যে মা নতুন এক কৌশল আবিষ্কার করেছেন। মৃত্তিকা মায়ের কথা না শুনলেই মা ভয় দেখাচ্ছেন। পড়তে না বসলে ভূতে ধরবে, না খেলে সাপে কামড় দেবে। প্রথম প্রথম কাজ হয়েছিল ভালোই। কিন্তু এখন হিতে বিপরীত হওয়ার দশা। সব সময় মৃত্তিকা ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকে। মৃত্তিকার মধ্যে এসেছে জড়তা। সে আর ছোটাছুটি করে না। স্কুলে গিয়েও সে আগের মতো খেলে না। সার্বক্ষণিক যেন ভয় তাড়া করে তাকে। মা এখন পড়েছেন নতুন সমস্যায়।
অন্যদিকে কার্টুনের ভক্ত ইফতি স্কুল থেকে ফিরেই টিভির রিমোট নিয়ে বসে পড়ে। টম অ্যান্ড জেরি, মিকি মাউস, ডিজনিসহ তার পছন্দের তালিকা অনেক দীর্ঘ। কৌতূহলবশত একদিন ভয়ের সিনেমা দেখে তো অবস্থা খারাপ। ভয়ে সারা রাত ঘুমাতে পারল না। বাথরুমে যেতে হলেও মাকে দরকার। সারাক্ষণ যেন সিনেমার অ্যানাকোন্ডা মাথার মধ্যে আছে।
কোমলমতি শিশুরা অনেক সময় গল্প শুনে বা ছবি দেখে ভয় পায়, আর এই ভয় শিশুর মনের গভীরে ছাপ ফেলে। ফলে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ হয় বাধাগ্রস্ত। শিশুর ভয় পাওয়া প্রসঙ্গে কথা হয় গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশুবিকাশ, সামাজিক ও সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক নাজমা খাতুনের সঙ্গে।
মোরশেদা বেগম বলেন, শিশুদের কোনো কাজ করানোর জন্য ভয় দেখালে তা তার মনে গেঁথে যায়। এর ফলে ওই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং আত্মবিশ্বাস কমে যায়। এর ফলে শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে না। জীবিকার ছবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিশুদের জন্য মজার মজার কার্টুনই তো আছে। শিশুদের ছবি দেখানোর ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে অধ্যাপক নাজমা খাতুন বলেন, শিশুদের কোনোভাবেই ভয় দেখানো উচিত নয়। এর ফলে শিশুর আবিষ্কারের নেশা নষ্ট হয়ে যায়। হারিয়ে ফেলে সে তার আত্মবিশ্বাস। তাই শিশুদের কাছে প্রতিটা বিষয়কে ইতিবাচকভাবে ব্যাখ্য করতে হবে। শিশুদের ছবি দেখানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বয়স ও মানসিক বিকাশের কথা মাথায় রেখে শিশুদের ছবি দেখানো উচিত। কোনোভাবে ভয়ের ছবি দেখে ফেললে সে ক্ষেত্রে ভয় যাতে না পায়, তার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। শিশু যাতে ভয়ের বিষয়টা ভুলে যায়, সে জন্য হাসিঠাট্টা করে পরিবেশটা হালকা করা। সর্বোপরি অভিভাবকের সচেতনাতা গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখুন
কোনো কাজের জন্য শিশুকে ভয় দেখানো যাবে না।
শিশুকে সবকিছু ইতিবাচকভাবে বোঝাতে হবে।
ভীতিকর ছবি শিশুকে দেখানো উচিত নয়।
ভীতিকর ছবি দেখলেও ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, তা বুঝিয়ে বলতে হবে।
শিশুকে বোঝার ও শেখার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৭, ২০১০
Leave a Reply