ব্যাত রুশে কিছু পদ তৈরি হবে আপনার সামনে ১০১ পদের ভিন্ন ভিন্ন খাবার, একসঙ্গে, একই স্থানে! শুনতে অবাক লাগতে পারে। আরও অবাক হবেন যখন দেখবেন, এই ১০১ পদের কোনোটা বাংলাদেশি, কোনোটা ইতালিয়ান আবার কোনোটা বা মেক্সিকান। পড়েই কেমন যেন জিভে জল এসে যাচ্ছে, তাই না? জিভে জল আনার মতোই সব খাবার নিয়ে ঢাকা শহরের ভোজনরসিকদের জন্য চার বছর ধরে বুফে আয়োজন করছে গুলশানের রেস্টুরেন্ট ব্যাত রুশ। নামটা ফরাসি ভাষার, উচ্চারণটা একটু কঠিন, তাই ইংরেজিতে সবাই বলেন ব্যাটন রোজ বা লাল লাঠি। নামের সঙ্গে মিল রেখে রেস্টুরেন্টের সাজসজ্জায় রয়েছে লাল রঙের প্রাধান্য ও সৌন্দর্য। ব্যাত রুশ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি পদের বুফে হিসেবে বিখ্যাত। এর পাশাপাশি খাবারের স্বাদ ও পরিবেশন বৈচিত্র্যের জন্য সুনাম অর্জন করেছে এটি।
গুলশান ১ থেকে গুলশান ২ নম্বরের দিকে রওনা দিলে ওয়ান্ডারল্যান্ডের পরপরই দেখা যায় একটি ভবনের ওপরে লাল আলোয় জ্বলজ্বল করে লেখা ‘ব্যাত রুশ কনভেনশন সেন্টার।’ এই ভবনটির আটতলায় ব্যাত রুশ অবস্থিত। লিফটে উঠেই হাতের ডান দিকে মনোরম অভ্যর্থনাকেন্দ্র। কেন্দ্র পার হয়ে দরজা দিয়ে ঢুকবেন, মুহূর্তেই আপনার চোখ যাবে বাঁ দিকে। কেন যাবে না! ১০১ পদের সব কয়টি যে আপনার জন্য ওখানটাতেই রাখা আছে। এর আশপাশের জায়গাজুড়ে সুদৃশ্য টেবিল ও চেয়ার। কোনোটা নিরিবিলিতে খাওয়ার জন্য, আবার কোনোটা বন্ধুবান্ধব নিয়ে হইহুল্লোড় করে খাওয়ার জন্য। এর এক পাশে আবার পার্টি সেন্টার। প্রায় প্রতিদিন পার্টি সেন্টারে আয়োজিত হচ্ছে কারও না কারও জন্মদিন, বৌভাত, বিবাহোত্তর সংবর্ধনা ইত্যাদি।
ব্যাত রুশ বুফে মূলত বাংলাদেশি ধাঁচে ও স্বাদে চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, তন্দুরি, ইতালিয়ান ও মেক্সিকান খাবারের সমন্বিত উপস্থাপন। ব্যুফেতে সপ্তাহের প্রতিদিন থাকে ভিন্ন ভিন্ন ১০১টি পদ। অর্থাৎ সাত দিনে মোট ৭০৭টি পদ! শনিবারের খাবারটি রোববার আর পাবেন না, পাবেন হয়তো পরের শনিবার। অন্যান্য বুফের মতো ব্যাত রুশেও খাবারের তিনটি ভাগ—অ্যাপিটাইজার, প্রধান খাবার ও ডেজার্ট। অ্যাপিটাইজারের প্রধান উপাদানটি হলো স্যুপ। এ ছাড়া নানান ধরনের বাংলাদেশি, ভারতীয় ও চীনা সালাদ, সবজি, ব্রেড, পাকোড়া তো আছেই। প্রধান খাবারে বৈচিত্র্য অনেক বেশি। দেশি-বিদেশি মাছ, মাংস (চিকেন, মাটন ও বিফ), চিংড়ি ও কাঁকড়ার বিভিন্ন আইটেম রয়েছে এই ধাপে। মাছের একটি আইটেম আছে, যার নাম ফ্রাইড হোল ফিশ উইথ পিনাট। বুঝতেই পারছেন, বিশাল একটা পুরো মাছ শুধু আপনার জন্য। আগেই বলেছি, এক দিনের খাবার কিন্তু পরের দিন পাবেন না। আজ চিকেন মাসালা তো কাল চিকেন দোপেঁয়াজা। ঝোলের পদের পাশে এখানে আছে ভাজা খাবারের অপূর্ব সমাহার। চোখের সামনেই রান্না করা বিভিন্ন দোসা, বার বি কিউ, কাবাব আর নান দেখে বসে থাকার উপায় নেই। প্রতিদিনই ব্যাত রুশে নানান ধরনের কাবাবের স্বাদ উপভোগ করছেন ভোজনরসিকেরা। সবকিছু খেয়ে আপনার পেট যখন ঢোল হয়ে যাবে, তখন আপনার জন্য আছে মিষ্টির হরেক রকম বাহার অর্থাৎ ডেজার্ট। মিষ্টি, দই, কেক, পায়েস, চকলেট, ফ্রুটস মিক্সড, পুডিং, পনির ছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫টি ডেজার্ট থাকে। অনেকে নাকি আবার শুধু ডেজার্ট খেতেই ব্যাত রুশে আসেন। এত ডেজার্ট আইটেমের সব চেখে দেখতে চাইলে অ্যাপিটাইজার আর মুল খাবার একটু কম করে খেতে ভুলবেন না।
২০০৬ সালের ১১ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ব্যাত রুশ। শুরু থেকেই বুফেতে ১০১টি পদ দিয়ে ভোজনরসিকদের মাঝে সাড়া ফেলে দেয়। তবে রেস্টুরেন্টের এই ১০১ পদ পাওয়া যায় শুধু রাতের বেলায়। সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে ব্যুফে ডিনার। ভ্যাট ছাড়া বুফে ডিনারের জন্য খরচটা শুরু হয় ৬৭৫ টাকা থেকে। বুফে ডিনার চলাকালীন আটটা থেকে ১০টা পর্যন্ত পরিবেশন করা হয় শেফস স্পেশাল। এখানে প্রতিদিন শেফের রান্না করা একটি বিশেষ পদ থাকে। বুফের অন্যান্য খাবারের মতো এটাও অফুরন্ত, খেতে পারবেন ইচ্ছামতো। দুপুরে থাকে ৫১ আইটেমের বুফে লাঞ্চ। এর জন্য খরচ শুরু হয় ৪৭৫ টাকা থেকে। এ ছাড়া আছে পাস্তা কর্নার। ব্যাত রুশ বুফের একক অনন্য সংযোজন এটি। এই কর্নারে এসে পছন্দের পাস্তা খেয়ে উপভোগ করা যায় ইতালিয়ান স্বাদ। ব্যাত রুশের পরিকল্পনায় আছে ভবিষ্যতে পিৎজা সংযোজনের। পিৎজার লোভে নিশ্চয় পেটপূজাকারীদের ভিড় আরও বাড়বে ব্যাত রুশে।
এখন কথা হলো, এত সব পদ খাওয়াটা পুরোদস্তুর ভোজনরসিকদের পক্ষেই সম্ভব। সাধারণ খাদকদের তাহলে হবে কী! সমস্যা নেই। তার জন্য ‘অ্যালে কার্তা’। অর্থাৎ আপনি যা যা খেতে চান, তার অর্ডার দিন। ব্যুফের সব আইটেমসহ আরও অনেক পদই অপেক্ষা করছে আপনার অর্ডারের অপেক্ষায়। তবে বুফের সব খাবার যদি আপনি অর্ডার দিয়ে খেতে চান, আপনার পকেট থেকে মুূহূর্তের মধ্যে খসে পড়বে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। আর ব্যুফে হিসেবে খেলে যাবে প্রায় ৮০০ টাকা। বুফের অনন্যটা এখানেই—কম দামে অনেক খাবার, অনেক রকমের খাবার।
সুব্রত দেবনাথ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৭, ২০১০
Leave a Reply