প্রতিদিন বাসের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সময়মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করতে পারি না—বলছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ইকরা। দীর্ঘ সময় বাসের জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা, প্রচণ্ড ভিড়ে বাসে উঠতে না পারা, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা যানবাহনের অতিরিক্ত বাড়তি ভাড়া আদায়—এসব কারণে আমাদের নাগরিক জনজীবনের বেহাল দশা, পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। তাই আপনার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে আপনার সমস্যা পূরণে কিনতে পারেন নিজের একটা গাড়ি, প্রয়োজনে গাড়ি। কেনার ঋণ দিচ্ছে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
যেকোনো ব্র্যান্ডনিউ, রি-কন্ডিশন্ড ও সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ির জন্য ঋণ দিচ্ছে এ ব্যাংক। গাড়ির প্রস্তুতকাল থেকে সর্বোচ্চ ছয় বছর বয়স পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। ঋণের মেয়াদ শেষে গাড়ির বয়স টয়োটা গাড়ির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের গাড়ির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আট বছর হতে পারে। ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা। সুদের হার ১৫-১৬ শতাংশ। চাকরিজীবী, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী যাঁদের আয় ৩২ হাজার ৫০০ টাকা এবং যাঁদের ন্যূনতম বয়স ২৩ বছর তাঁদের এ ব্যাংক থেকে গাড়ি কেনার জন্য ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ছয় বছর। সুদের হার ১৫ শতাংশ হলে ১২, ২৪, ৩৬, ৪৮, ৬০, ৭২ মাসের প্রতি লাখের মাসিক পরিশোধের পরিমাণ ৯,০২৬, ৪,৮৪৯, ৩,৪৬৭, ২,৭৮৪, ২,৩৭৯, ২,১১৫ এবং সুদের হার ১৬ শতাংশ হলে ১২, ২৪, ৩৬, ৪৮, ৬০, ৭২ মাসে প্রতি লাখে মাসিক পরিশোধের পরিমাণ ৯,০৭৪, ৪,৮৯৭, ৩,৫১৬, ২,৮৩৫, ২,৪৩২, ২,১৭০ টাকা। এ ব্যাংকের রয়েছে করপোরেট কাস্টমার, প্রায়োরিটি কাস্টমার, রয়েছে কিছু এনলিস্টের স্পেশাল শোরুম, যাঁদের সঙ্গে special agreement আছে, যাঁদের সুদের হার ১৫।
গাড়ির মূল্যে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হয়।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক
যেকোনো ব্র্যান্ডনিউ, রিকন্ডিশন্ড গাড়ির জন্য ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। চাকরিজীবী, যাঁর ন্যূনতম আয় ২৫ হাজার টাকা; ব্যবসায়ী, প্রফেশনাল, যাঁদের ন্যূনতম আয় ৫০ হাজার টাকা তাঁরা এ ঋণ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন। ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ এক লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। গাড়ির মূল্যের ওপর ৯০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়। সুদের হার ১৪-১৫ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ পাঁচ বছর। ঋণগ্রহীতার বয়স ২৩-৬৫ বছর হতে হবে। গাড়ির প্রস্তুতকাল থেকে চার বছর বয়স পর্যন্ত হলে ঋণসুবিধা পাওয়া যাবে।
ইস্টার্ন ব্যাংক
ব্র্যান্ডনিউ গাড়ির জন্য ১০০ শতাংশ এবং রি-কন্ডিশন্ড গাড়ির জন্য ৭০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে এ ব্যাংক থেকে। ঋণের পরিমাণ তিন লাখ ৫০ হাজার থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত। সুদের হার ১৫ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা পাঁচ বছর। সেলফ এমপ্লয়েড, প্রফেশনাল, যাঁদের দুই বছরের প্র্যাকটিস রয়েছে; ব্যবসায়ী, যাঁদের দুই বছরের ব্যবসার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য। ঋণগ্রহীতার মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা, বয়স ২২-৬০ বছর হতে হবে।
ঢাকা ব্যাংক
চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, প্রফেশনাল যাঁদের ন্যূনতম আয় ৩০ হাজার টাকা, তাঁরা এ ব্যাংক থেকে গাড়ির জন্য ঋণ নিতে পারবেন। নতুন গাড়ি এবং রি-কন্ডিশন্ড গাড়ির জন্য ঋণ দেওয়া হয়। তবে পাঁচ বছরের পুরোনো গাড়ির ঋণ দেওয়া হয় না। গাড়ির দামের ৭৫ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়। ঋণের পরিমাণ দুই থেকে ২০ লাখ টাকা। প্রসেসিং ফি ঋণের পরিমাণের এক শতাংশ। সুদের হার ১৫-১৬ শতাংশ। ঋণগ্রহীতার বয়স ২১-৫৭ বছর হতে হবে। ঋণ পরিশোধের সময় পাঁচ বছর।
এইচএসবিসি ব্যাংক
নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ির দামের ৭৫ শতাংশ অথবা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দামের ৭০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়। তবে অবশ্যই গাড়ির প্রস্তুতকাল থেকে সর্বোচ্চ ঋণগ্রহীতার আবেদনের মধ্যে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত হতে হবে। ঋণগ্রহীতা চাকরিজীবী হলে তাঁর আয় ২০ হাজার, সেলফ এমপ্লয়িড হলে ৫০ হাজার টাকা হতে হবে। ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ টাকা। সুদের হার ১৬ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা পাঁচ বছর।
প্রাইম ব্যাংক
ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, সেলফ এমপ্লয়েড হলে তাঁকে অটো লোন দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে আবেদনকারীর মাসিক আয় ৩০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা হতে হবে। গ্রাহকের ডাউন পেমেন্ট করতে হবে ২০ শতাংশ। ন্যূনতম ২০০৫ মডেলের গাড়ি কেনার জন্য ঋণ দেওয়া হয়। ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা। সুদের হার ১৫ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা পাঁচ বছর। যেকোনো ব্র্যান্ডনিউ অথবা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির জন্য ঋণ দেওয়া হয়।
আইডিএলসি
প্রফেশনাল, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা ঋণ নেওয়ার যোগ্য। যাঁদের আয় ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা। যাঁরা ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের অধিবাসী তাঁরা এ প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে পারেন। ঋণের পরিমাণ দুই থেকে ৪০ লাখ অথবা গাড়ির দামের ৭০ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা পাঁচ বছর। সুদের হার ১৪.৫ শতাংশ। ঋণগ্রহীতার বয়স ২২-৬০ বছর।
নাঈমা আমিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৭, ২০১০
Leave a Reply