এমন অনেক সমস্যা আছে, যা কাউকে বলা যায় না। এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের। ১৫ দিন অন্তর সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানা :
সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
আমি স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়ি। পাঁচ বছর ধরে আমি একজনকে ভালোবাসি। সে ইতালিতে থাকে। আমরা একে অপরকে আজও সরাসরি দেখিনি। ফোনে ও ইন্টারেনেটের ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ হয়। বর্তমানে আমার পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু ওর এখনো ইতালিতে স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা হয়নি, যে কারণে দেশে ফিরতে পারছে না। এ জন্য আমি পরিবারকে এখন এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না। এই উভয় সংকট থেকে কীভাবে বের হব?
নিশিতা
ঝিনাইদহ
ছেলেটিকে যদি আপনি সত্যিই ভালোবাসেন এবং সে আপনাকে; তাহলে আপনার পরিবারকে সেটা জানান। দূরে অবস্থান করেও বিয়ে করা সম্ভব। তবে আপনার নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি এই প্রবাসী ছেলেটিকে ভালোবাসেন এবং তাকেই বিয়ে করতে চান।
কয়েক মাস আগে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এখন মেয়েটি আমাকে ভালোবাসে এবং আমিও তাকে ভালোবাসি। আমার বয়স ২১ বছর এবং মেয়েটির বয়স ১৭ বছর। সমস্যা হলো মেয়েটির পরিবার, যেমন—মেয়ের বড় ভাই ও দুলাভাই আমাদের দুজনের সম্পর্ক মেনে নিতে চাইছেন না। মেয়ের দুলাভাই বেশি বাধা দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে আমাকে হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত মেয়েটির দুলাভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। ফোনে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছেন। মেয়েটির দুলাভাই আমার অভিভাবকদের পর্যন্ত বলে বেড়াচ্ছেন, আমার দেখা পেলে আমাকে মারবেন।
এখন তিনি মেয়েটির ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। তার কলেজে যাওয়া বন্ধ। তার পড়াশোনার ক্ষতি হোক, এটা আমি চাই না। মেয়েটির পারিবারিক অবস্থা আমার থেকে ভালো। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট একটা চাকরি করছি। কী করলে আমার অস্থিরতা দূর হবে এবং মেয়েটি আবার কলেজে যেতে পারবে?
অপূর্ব
লালমনিরহাট
আপনাদের দুজনেরই বয়স কম। এখন সবচেয়ে ভালো হবে, আপনি মেয়েটির থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিন। পড়াশোনা শেষ করুন। নিজেকে ওর যোগ্য করে তুলুন। মেয়েটির পরবাির যখন দেখবে আপনি আশপাশে নেই, তখন তাকে লেখাপড়া করতে দেবে। নিজেরা তৈরি হোন, দেখবেন জীবনটা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
২০০৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার এক মাস আগে আমার বাবা মারা যান। তখনই আমাকে চাকরিতে যোগ দিতে হয়। ধীরে ধীরে কষ্ট করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ি। অনেক কষ্টে আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু এখন খরচ চালাতে পারছি না। তাই আমি পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছি। ২০০৮ সালে আমি অন্য ধর্মাবলম্বী একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। সে আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমিও অনেক ভালোবাসি।
আমার মা মানসিকভাবে অসুস্থ। তাঁর দৈনিক ২০০ টাকার ওষুধ লাগে। অনেক কষ্টে আমাকে এর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। মেয়েটি চায়, আমি আবার পড়া লেখা শুরু করি। একটা সমস্যা আমাকে দুর্বল করছে। আমার মা আবার বিয়ে করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমি নারাজ। আমি বাবাকে ভালোবাসি। এ সমস্যা ও ঘটনাগুলো আমাকে মানসিকভাবে অস্থির করে তুলছে। একদিকে জীবন ও অন্যদিকে আমার মানসম্মান। মায়ের জেদ, মা বিয়ে করবেন। বর্তমানে আমার মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এসব সমস্যায় বিপর্যস্ত হয়ে ইদানীং আমি মাদক নিতে শুরু করেছি। এ থেকে কীভাবে উদ্ধার পাব।
ইমরান খান
চট্টগ্রাম
এই কষ্ট থেকে উদ্ধার পেতে আপনি নিজেই পারবেন। আপনি নিজেকে নিয়ে ভাবুন। মাকে নিয়ে এতটা ভাবার প্রয়োজন দেখি না (মা কী রোগে ভুগছেন, সেটাও স্পষ্ট নয়)। আপনি কোনো মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রের সাহায্য নিয়ে মাদক থেকে (যা আপনি ইঙ্গিত করেছেন) সত্বর বেরিয়ে আসুন। পড়াশোনা শেষ করুন। দেখবেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনার ভালোবাসার মানুষ তো পাশেই আছে।
সাড়ে সাত বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমরা দুজনই উচ্চশিক্ষিত, কর্মজীবী। ওর অন্য জেলায় চাকরি হওয়ায় বিয়ের প্রথম পাঁচ বছর আমরা সংসার করতে পারিনি। শারীরিক ঘনিষ্ঠতা করতে সমস্যা হয় আমার স্বামীর। প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। ভাবতাম, সংসার করলে ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের দুজনের দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের দিন থেকেই কাটাকাটি লেগে আছে। দুই পরিবারের মধ্যে এখনো কোনো যোগাযোগ নেই। এসব কারণে ভাবতাম, আমার স্বামীর মন খারাপ, তাই সম্পর্ক হচ্ছে না। কিন্তু এখন এত দিন পরেও যখন ঠিক হলো না, তখন আমি আমার স্বামীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলাম। কিন্তু ওর যাওয়ার ইচ্ছা নেই। অনেকবার বলে ওকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হয় কিন্তু এখনো ওর কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসক বলেছেন, বিদেশে ওর চিকিৎসা করালে ভালো হবে। কিন্তু সরকারি চাকুরে হওয়ায় এখন বিদেশে যাওয়া ওর পক্ষে সম্ভব নয়। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মীরা যখন জিজ্ঞেস করেন, বাচ্চা নিচ্ছি না কেন, তখন সে প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারি না। আমার স্বামীর মতে, বাচ্চা হলে ভালো, না থাকলেও ক্ষতি নেই। আমার মনে হয়, বয়স হয়ে গেছে, এখন বাচ্চা নিলে যদি কোনো সমস্যাযুক্ত হয়! আবার সবাই যখন বাচ্চা নেওয়ার কথা বলেন, তখন বাচ্চা নিতে ইচ্ছে হয়। এদিকে আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে যেহেতু কোনো সম্পর্ক নেই, এতে দুজনের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ে। আমাদের দুজনের সম্পর্ক খুব যে ভালো, বলা যাবে না। বাইরে এর কোনো প্রকাশ না থাকলে ভেতরে ভেতরে এটা বলতে পারি, মাঝেমধ্যেই আমার মনে হয়, ও আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। এখন আমার কী করা উচিত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
বিয়েটা একটা সামাজিক বন্ধন। একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে একটি চুক্তি যে তারা একসঙ্গে সংসার করবে। এই সংসার করার ব্যাপারে দৈহিক মিলন আবশ্যক। আপনার স্বামী যদি সেই ক্ষমতা না রাখেন (শারীরিক কিংবা মানসিক কারণে) তাহলে আপনাদের বিয়ে টিকবে না। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আপনি সমাজকে বুঝে চলেন। সহজে বিয়ে ভাঙার দিকে যাওয়ার ইচ্ছা আপনার নেই। এই পরিস্থিতিতে আপনারা দুজনে কোনো বিশেষজ্ঞের (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কারও) পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে লাভ হতে পারে।
আমি স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই নানার বাড়িতে থেকে বড় হয়েছি।এসএসসি পরীক্ষার পর আমাদের বাড়িতে আসি। আসার কিছুদিন পরই পাশের বাড়ির এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার বয়স তখন ১৪ বছর। দুজনার মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ভালোবাসা।
কিন্তু হঠাৎ একদিন দেখি, সে আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই এড়িয়ে চলছে। তাকে খুঁজে বের করে কথা বললেও কোনো উত্তর দেয় না। আমি তাকে কিছুতেই বুঝতে পারি না। কয়েক দিন পর দেখি, সে অন্য একটি ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েছে। আমি তাকে কিছুতেই ফেরাতে পারিনি। পরে জানলাম, তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি আরও অস্থির হয়ে পড়ি। কিছুদিন পরে ওই সম্পর্ককেও সে ছিন্ন করে। এত কিছুর পরও আমি তাকে ফিরে পেতে চেয়েছিলাম। কিছুদিন পর সে আবারও অন্য আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। শারীরিক সম্পর্কও ঘটে। তখন আমি ভাবলাম, আমিও যদি তাকে শারীরিক সম্পর্কের এ রকম প্রস্তাব দিই, তাহলে হয়তো বা সে আমাকেই চাইবে। ঠিক তা-ই করলাম। কিন্তু তার বদলে সে আমাকে আরও ঘৃণা করতে লাগল। সুযোগ পেয়ে একদিন তাকে জোর করে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু সে আমাকে আবারও ফিরিয়ে দিল এবং একের পর এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে লাগল। কিন্তু এ রকম আচরণ আমি কখনোই করতে চাইনি। কেবল তাকে ফিরে পাওয়ার জন্যই করেছি মাত্র। আমি এখন কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মেয়েটির সমস্যা আছে। তবে আপনি নিজেকে তার সমস্যাবহুল জীবনযাত্রায় কেন জড়াবেন? এক অর্থে মেয়েটি আপনাকে প্রত্যাখ্যান করায় আপনি বেঁচে গেছেন। আপনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টাকে দেখুন। মেয়েটিকে ভুলে যান। সামনে এগিয়ে যান। সেটাই আপনার জন্য ভালো হবে।
একটি ছেলের নাম শুনে তাকে না দেখেই কথা বলতে খুব ইচ্ছে হয়। তারপর নম্বর নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি। প্রথম প্রথম সে আমার সম্পর্কে জানতে চাইত। আমি ঠিক করে সবকিছু বলতাম না। আমি তাকে সারা দিন এতবার ফোন দিতাম যে আমাকে ফোন দেওয়ার সময় সে পেত না। কথা বলতে না পারলেও মিনিটে মিনিটে অনেক মিসড কল দিতাম। ও রাগ করত না। আবার কোনো কোনো দিন আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইত না। অপমান করে আর ফোন না দেওয়ার জন্য বলত, কিন্তু আমি কথা না বলে থাকতে পারতাম না। গত বছর আমার স্নাতক প্রথম বর্ষের পরীক্ষার তিন দিন আগে ও বলল, আমার সঙ্গে আর কথা বলবে না। এতে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি, অসুস্থ হয়ে যাই। আমাদের ঘরের সবাইকে বলে দিই, আমি পরীক্ষা দিতে পারব না। মা-বাবা আমার অবস্থা দেখে মেনে নেন এই অযৌক্তিক চাওয়া। আমি কাউকে বলতে পারি না যে কেন পরীক্ষা দিতে পারব না। কয়েক দিন পর ছেলেটিকে ফোন করলে আমার সঙ্গে কথা বলে। আবার প্রায়ই আমাকে অপমানও করত। আমার খুব খারাপ লাগত। কিন্তু শত অপমান ভুলে তার সঙ্গে একটু কথা বললে, আমার এত ভালো লাগত, যা কাউকে বোঝাতে পারতাম না। খুব হাসিখুশি থাকতাম কথা বললে। তারপর একদিন ওর ইচ্ছাতেই আমাদের দেখা হয়। কিন্তু তারপর থেকে ফোন দিলে খুব খারাপ আচরণ করে। আমার খুব কষ্ট হতো। তার সঙ্গে কথা বলা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারতাম না। ঘরে বাবা অসুস্থ ছিলেন। আমি ভাইবোনের মধ্যে বড়। সবাই বিয়ের জন্য খুব চাপ দেয়। আমার তখন মরতে ইচ্ছা করত। একদিকে ওর সঙ্গে কথা না বলার কষ্ট, অন্যদিকে পরিবারের চিন্তা। সবকিছুর পরও জয়কে ফোন দিতাম। তারপর একদিন তার খারাপ কথা শুনে, পরিবারের অশান্তির কথা ভেবে তাকে ফোন করা বন্ধ করলাম। খুব কষ্ট হয়েছে। সবার সঙ্গে খুব মেজাজ দেখাই, ঠিক করে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারি না। রাগ ওঠে, এতে সবাই খুব খারাপ ভাবে। তাতে আমি কিছু মনে করি না। আমি আমার মতো চলি, নিজের ভালো আর বুঝতে চাই না। পয়লা বৈশাখে ওর কথা খুব মনে পড়লে এসএমএস পাঠাই। সে আমাকে ফোন করে। তার ফোন ধরতে আমার সাহস হয় না। যদি আবার আগের মতো অপমান করে। আমি তাকে প্রতিদিন মিসড কল দিই। কিন্তু ফোন দেওয়ার সাহস হয় না। আমি জানি, এবারও পরীক্ষা দিতে পারব না। কিন্তু পরীক্ষা না দিলে খুব সমস্যা হবে। ঘর থেকে খুব চাপ দেবে, কিন্তু পড়তে বসলেই বইয়ের মধ্যে যেন ওর নামটা দেখি। তারপর আমি আর পড়তে পারি না। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। মাথায় কোনো কাজ করে না, এখন আমি কী করব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
এই জগতে অনেক মানুষ প্রেমে প্রতারিত হয়েছে। ইতিহাস বলে গুটিকয়েক মানুষের কথা, যারা প্রেমে পরাজিত হয়ে নিজেকে ধ্বংস করেছে। বেশির ভাগ মানুষ প্রেমে প্রতারিত হয়ে হোঁচট খায়, তবে আবার উঠে দাঁড়ায়। আপনার উচিত, এই ছেলেটিকে আপনার চিত্রপটে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। আপনি লেখাপড়া ছেড়ে, মিসড কল দিয়ে দিয়ে যা করছেন, তাকে বলা যেতে পারে অবসেশন। আপনি যদি নিজের থেকে এই অবসেশনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারেন, আপনার অবশ্যই উচিত মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৭, ২০১০
Leave a Reply