জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে ১৫ দিন পরপর তারই সমাধান পাওয়া যাবে।পাঠকের উকিল বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যাটি লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন।
খামের ওপর লিখুন: পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুলইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিন বছর ধরে আমি একটি মেয়েকে ভালোবাসি। সেও আমাকে খুবই ভালোবাসে। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আমাদের সম্পর্কের কথা ওর পরিবারের সবাই জানে। জোরপূর্বক ওর বাবা-মা ওকে আট মাস আগে এক প্রবাসী ছেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিয়ে দেন। বিয়ের পর ছেলেটি বাংলাদেশে আসেনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ছেলেটি বাংলাদেশে আসার এক মাস আগে বিয়ে করে পালিয়ে যাব। ছেলেটি আগামী জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসবে। আমাদের পরিবারও আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে না। বিয়ে করতে কোনো আইনি বাধা আছে কি? হয়তো আপনি বলবেন যে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি। তাহলে আমি বলব মেয়ের বিয়ের বয়স না হলে আট মাস আগে কীভাবে মেয়ের বাবা-মা মেয়েকে বিয়ে দিলেন? আমরা কীভাবে পরস্পরকে পাব, সেই পরামর্শ চাই।
রোহেত, ঢাকা ।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন, ১৯২৯ অনুযায়ী বাংলাদেশে ২১ বছরের নিচে কোনো ছেলের অথবা ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ের বিয়ে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং আপনার কথিত প্রেমিকার বিয়েটি আইনগতভাবে বৈধ বিয়ে নয়। সে জন্য মেয়েটি সাবালক হওয়ার পর তার বিবাহ বাতিলের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। আপনারা দুজনে সাবালক হলে পরবর্তী সময়ে আপনাদের বিয়েতে কোনো বাধা নেই। সুতরাং মেয়েটির ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর আপনি তাকে বিয়ে করতে পারেন।
আমি এমএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ২০০৬ সালে আমার বিয়ে হয়। আমার স্বামী আমার বিয়ের আগে থেকেই বিদেশে ছিলেন। তিনি যখন ছুটিতে আসেন, তখন আমাদের বিয়ে হয়। এই বিয়েতে তাঁর পরিবারের কেউ রাজি ছিলেন না। কিন্তু আমার পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বাসায় বিয়ে হয়। বিয়ের এক মাস পর তিনি আবার বিদেশে চলে যান। কিন্তু তাঁর পরিবার আমাকে লোক দেখানো মেনে নেয়। এবং বিদেশে তাঁর কাছে নানা রকম মিথ্যা কথা বলতে থাকে। দুই বছর আমাদের সম্পর্ক ভালোই ছিল। কিন্তু এখন প্রায় ৮-১০ মাস ধরে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেন না এবং চার বছরে তিনি একবারও দেশে আসেননি। তাঁর কোনো ঠিকানা আমাকে কখনো দেননি এবং ফোন নম্বর পরিবর্তন করেছেন। তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। এখন আমি তাঁকে দেশে আনতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি কি না। তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আমি কী করতে পারি? আমার স্বামীর পাসপোর্টের ফটোকপি আমার কাছে আছে।
নুসরাত জাহান, টঙ্গী, গাজীপুর।
আপনার স্বামীকে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আনার ক্ষেত্রে আইনগতভাবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আপনি মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯-এর বিধান অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদ, খোরপোশ ও মোহরানার দাবিতে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন।
আমার বাবা একজন আইনজীবী। আমার বিয়ে হয়েছে। একটি ছেলে আছে। আমার স্বামী একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত। আমার একটি ভাই আছে। সে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। সম্প্রতি আমার বাবা এই ৬৫ বছর বয়সে তাঁর নামমাত্র সম্পত্তি রক্ষার অজুহাতে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। যত দূর বুঝেছি এই পথ থেকে তাঁকে ফেরানো যাবে না। তিনি আমার মাকে তালাক দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনকি আমার ভাইটিকে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। আমার ভাইয়ের বয়স ২২ বছর। তার খাওয়া-দাওয়া, বাথরুম এমনকি অসুখ হলে সবকিছু আমার মা-ই দেখাশোনা করেন। আমার বাবা কখনোই তেমনভাবে আমার ভাইয়ের দেখাশোনা করেননি। উপরন্তু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাকে পাগল, গাধা ইত্যাদি বলে অনেক অবহেলা করেছেন। আমার মায়ের বাঁচার অবলম্বন বলতে এই ভাইটি। শুধু আমার মাকে কষ্ট দেওয়া এবং ভরণপোষণের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তিনি আমার ভাইকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তার মেয়ে হিসেবে আমি কিছুই চাই না। আমি শুধু আমার মা-ভাইকে আমার কাছে রাখতে চাই।
আমার প্রশ্ন, আমি ভাইয়ের ভরণপোষণের জন্য তাঁকে কি করে বাধ্য করতে পারি? তিনি কি চাইলেই বাবা হিসেবে আমার ভাইকে নিয়ে যেতে পারেন? ভবিষ্যতে আমার মায়ের অনুপস্থিতিতে আমি কি আমার ভাইয়ের দেখাশোনার দায়িত্ব পেতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনার মা আপনার বাবার বিরুদ্ধে খোরপোশের এবং আপনার প্রতিবন্ধী ভাইয়ের ভরণপোষণের জন্য মামলা করতে পারেন। ভবিষ্যতে আপনি আপনার ভাইয়ের অভিভাবকত্ব ও দেখাশোনার জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন।
আমি ১৫ বছর আগে একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের মার্কেট থেকে একটি দোকান কিনি আমার নামে। দোকানের কাগজপত্র আমার কাছে আছে। আমার এক আত্মীয়কে দোকানটি দেখাশোনা করতে দিয়েছিলাম।
তিনি তখন দোকান থেকে আমাকেও টাকা-পয়সা দিতেন। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি দোকান থেকে মাসের শেষে কিছু টাকা ভাড়া নেয়। ছয় বছর আগে আবার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দোকানের চুক্তি করার সময় আত্মীয়টা ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছে একটি দরখাস্ত করেন, যেন তাঁর আর আমার নামে দোকানটির চুক্তি করা হয়। চেয়ারম্যানও তাঁর কথামতো দুজনের নামে দোকানটি একটি কাগজে চুক্তি করে দিয়েছেন। সেই কাগজটাও আমার কাছে আছে। এর কিছুদিন পর আমি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমি বলেছি এখন নতুন করে আবার শুধু আমার নামে চুক্তি করে দেন। তিনি একজন প্রভাবশালী লোক, আমার কথা শুনছেন না। দুজনের নামে দুটি উকিল নোটিশও পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনো জবাব দেননি। এর পর থেকে আমাকে আর কোনো টাকা-পয়সাও দিচ্ছেন না। এখন আমি দোকানটি বন্ধ করতেও পারছি না। লোকটিকে দোকান থেকে ওঠাতেও পারছি না। আমার ছেলেমেয়ে এখনো স্কুল-কলেজে পড়ে। আমি আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছি।
ওই আত্মীয় ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কী করতে পারব, দোকানটি কীভাবে উদ্ধার করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আপনি দুই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন। প্রথমত, আপনি দোকানের দখল পুনরুদ্ধারের জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যেহেতু আপনার আত্মীয় ওই দোকানগৃহ নিজের নামে নিয়ে আপনার বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন এবং আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করছেন, সেহেতু আপনি তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করতে পারেন।
চিঠিপত্র, পার্সেল ইত্যাদি যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রচুর কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশে। যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান জিনিসপত্র প্রাপকের কাছে পৌঁছাল কি না, সেই খবরটাও রাখেন না। এই বিষয়ে কিছু জানতে চাওয়া হলে এটা-সেটা বলে পাশ কাটিয়ে যান। এ রকম এক তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে মাসখানেক আগে। সিলেটে বই পাঠিয়েছিলাম জরুরি প্রয়োজনে। আজও সেটা প্রাপকের হাতে পৌঁছায়নি। জিনিসটা বই না হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছুও হতে পারত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না পেলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত প্রাপকের।
এসব ক্ষেত্রে কী ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
ডিউক জন
আহম্মদনগর, মিরপুর।
আজকাল কুরিয়ার সার্ভিস দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রচুর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা প্রদানের ধরন মানসম্মত নয়। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের যথোপযুক্ত কার্যাদি সম্পন্ন্ন করতে পারছে না। সে জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেন বাঞ্ছনীয়। আপনার পার্সেল হারানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণসহ তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।
কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য খাতে লোক নিয়োগের পরীক্ষা হয়। এ সময় একজন নেতা আমাকে স্বাস্থ্য খাতে চাকরি দেবে বলে লিখিত পরীক্ষার আগেই ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি বলেন আমাকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করাবেন। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় পাস করাতে পারেননি। এখন ওই নেতা আমাকে টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। টাকা নেওয়ার আগে কথা ছিল, চাকরি না দিতে পারলে টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন। আজ টাকা দেবেন, কাল দেবেন—এই বলে তিনি তিন মাস সময় পার করেন। কিন্তু টাকা দিচ্ছেন না। এখন আমি কি তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব? টাকা দেওয়ার সময় দলিল করা হয়নি। দু-তিনজন লোক সাক্ষী ছিল। এখন টাকা ফেরত পাওয়ার উপায় কী? আমি কি তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করতে পারব?
প্রিতম সাহা, নেত্রকোনা।
লিখিত পরীক্ষায় পাসের জন্য যেকোনো ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজ। ওই ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করে আপনিও এই গর্হিত অপরাধের শরিক হয়েছেন। এ ধরনের নিষিদ্ধ লেনদেনের ক্ষেত্রে আপনি কোনো আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারবেন না।
আমার বাবার দুই ভাই। আমরাও দুই ভাই। আমি ফেনী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমাদের পদবি আমার দাদুর (বাবার বাবা) পদবি থেকে ভিন্ন হয়েছে। যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, তখন সনদপত্রে ভুলের কারণে এটা হয়েছিল। তারপর জাতীয় পরিচয়পত্র ও সনদপত্র অনুসারে করা হয়েছে এবং মা-বাবারও আমাদের অনুসারে পরিচয়পত্র করা হয়েছে। কিন্তু দাদুদের আগের পদবি অনুসারে জাতীয় পরিচয়পত্র হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো—পড়াশোনা শেষে চাকরির জন্য জীবনবৃত্তান্তসংক্রান্ত কোনো সমস্যা হবে কি না? দাদুর মৃত্যুর পর জমির ভাগবাটোয়ারা সম্পর্কে কোনো সমস্যা হবে কি না? আমার বাবা নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র হওয়ার আগে অর্থাৎ আগের পদবি অনুসারে সামান্য পরিমাণ জমি কিনেছিলেন এবং বর্তমান পদবি অনুসারে কিছুটা জমি কিনতে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতির জন্য পরবর্তী সময় ওই দুই ধরনের জমি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে কি না? আমাকে অনেকে বলেছে, কোর্টে এফিডেভিট করতে। এটি করলে কি সব সমস্যার সমাধান হবে? এটির সুবিধা বা কী? আর এটি করতে কেমন খরচ হতে পারে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
সাধারণত মানুষের নাম তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত হয়ে থাকে। সুতরাং আপনার প্রকৃত পদবি শিক্ষাগত সনদপত্রে উল্লেখ না থাকলে তা শুদ্ধ করার জন্য শপথনামাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-সহযোগে কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তী সময় সঠিক পদবির মাধ্যমে আপনি আপনার লেনদেন সম্পন্ন করতে পারেন।
এক ডেভেলপারের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের আদাবর ১০ নম্বর রোডে আমার আট কাঠা জমির ওপর ফ্ল্যাট নির্মাণের চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী (২০০৬-২০০৯) ডিসেম্বর এই ৩৬ মাস সময় এবং প্রয়োজনে আরও ছয় মাস বাড়তি সময় অর্থাৎ ২০১০ সালের জুলাই মাসে আমার অংশের ফ্ল্যাট তাদের হস্তান্তরের কথা। কিন্তু এই তিন বছর চার মাস সময়ের মধ্যে তারা যতটুকু কাজ করেছে, তাতে আগামী দুই বছরেও নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে না। চুক্তিপত্রে উল্লেখ ছিল সময়মতো তারা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে না পারলে আমরা উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেব। কিছুদিন আগে তারা তাদের আগের অফিসের ঠিকানা পাল্টিয়ে অন্যত্র চলে গেছে এবং আমি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। আমার মনে হয়, আমি একটা প্রতারণার ফাঁদে পড়েছি। তারা বলেছিল, তারা নাকি রিহ্যাবের সদস্য। এ ব্যাপারে আমি রিহ্যাবের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পেতে পারি কি না বা আইনগত কী ব্যবস্থা নিতে পারি?
মো. সাহাবউদ্দিন,
শেখেরটেক, মোহাম্মদপুর।
আপনি যে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, তা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আপনি ক্ষতিপূরণসহ আপনার জমা দেওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য উপযুক্ত দেওয়ানি আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। এ ছাড়া আপনি যে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, সেই প্রতারণার অপরাধের জন্য আপনি ওই ডেভেলপারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন। তা ছাড়া এ ব্যাপারে আমার পরামর্শ হচ্ছে, পরবর্তী সময় আপনি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বাজারে সুনাম আছে, এ ধরনের ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন। রিহ্যাবে অভিযোগপত্র দায়েরের মাধ্যমে আপনি কিছু প্রতিকার পেতে পারেন।
আমি উচ্চশিক্ষিত একজন সরকারি কর্মকর্তা। কিছুটা আবেগ এবং কিছুটা ভালোবাসার আবেশে জড়িয়ে পড়ে অশিক্ষিত একটি মেয়েকে বিয়ে করি। মাস দুয়েক সংসার চলার পরই মেয়েটির উগ্রতা ও অভদ্রতা প্রকাশ পেতে থাকে। বিশ্বাস-অবিশ্বাস এবং এক অপরিমেয় সংকটের মখোমুখি হয়ে অবশেষে কাজি অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার ভলিউমে স্বাক্ষরসহ নোটারি করে তাঁকে তালাক দিই। তালাকের দুই মাস দুই দিন পরে তিনি আমার বিরুদ্ধে একটি যৌতুকের মামলা করেন। ছয় মাস পরে কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে বিচারক তালাক সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আমাকে জামিনে মুক্ত করেন। জামিনে মুক্ত হওয়ার দুই দিন পর তিনি দেনমোহর ও খোরপোশের আরেকটি মামলা করেন। এই মামলাটি বর্তমানে প্রিট্রায়ালে রয়েছে। কাজি অফিস ও সিটি করপোরেশন উভয় অফিস থেকেই আমি ডিভোর্স সার্টিফিকেট ইংরেজি ভার্সনে সংগ্রহ করেছি। কেননা, ছয় মাস পরেই আমি শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে দুই বছরের জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। বর্তমানে দুই পক্ষের মধ্যে টাকা-পয়সার মাধ্যমে বিষয়টি সমঝোতার প্রচেষ্টা চলছে। নিয়ম অনুযায়ী আমি সব টাকা পরিশোধ করতে চাই। কাবিনে তিন লাখ টাকার অর্ধেক পরিশোধ দেখানো হয়েছে। আমাদের কোনো সন্তান নেই। খোরপোশসহ কী পরিমাণ টাকা আমাকে পরিশোধ করতে হবে? পারিবারিক আদালতে টাকা পরিশোধ করার পর যৌতুকের মামলাটি চলতে পারে কি? অথবা পারিবারিক আদালত থেকে রিলিজ সার্টিফিকেট নিয়ে ক্রিমিনাল কোর্টে জমা দিলে তা আমার জন্য কতটুকু সুবিধা হবে? মামলা চলাকালে আমি বিদেশে যেতে পারব কি? এই মামলায় আমার কী শাস্তি হবে? মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাদীর কোনো অসুবিধা হবে কি? বাদিনীকে আমি সম্মান করি এবং তাঁর প্রাপ্য স্বীকার করে পরিশোধ করতে চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
যৌতুক আইনে ফৌজদারি মামলাটির ক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্ক বাতিল বা তালাক কার্যকর হওয়ার আগে যৌতুক দাবি করা হয়েছিল কি না তা বিবেচ্য বিষয়। আপনার ক্ষেত্রে যেহেতু আপনার স্ত্রী ইতিমধ্যে পারিবারিক আদালতে খোরপোশ ও ভরণপোষণের মামলা দায়ের করেছেন, সেহেতু পারিবারিক আদালত থেকে বৈবাহিক সম্পর্ক ভঙ্গ হওয়ার আদেশ ও আপনার স্ত্রীর দাবি-দাওয়া পরিশোধের আদেশ নিয়ে ফৌজদারি আদালতে দাখিল করলে আপনার ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতির সুযোগ আছে। সুতরাং আপনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফৌজদারি কোর্টে দাখিল করতে পারেন। জামিনে মুক্ত আসামির আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশে যাওয়া বাঞ্ছনীয় নয় এবং সে ক্ষেত্রে জামিন বাতিলের আশঙ্কা আছে। মামলা নিষ্পত্তির পরেই আপনার বিদেশে যাওয়া সমীচীন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২০, ২০১০
আজিজুর রহমান
শুধুমাত্র সরকারবাদী মামলা নাকি যে কোনো মামলায় শাস্তি হলে সরকারি চাকরি পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে আইন কি বলে?