‘অফিস, ক্যানটিন কিংবা করিডর। একসঙ্গে কয়েকজন হলেই শুরু হয়ে যায় আড্ডা। তর্কবিতর্ক ছাড়িয়ে কত কথা উঠে আসে সেসব আড্ডায়। অন্যের সমালোচনা প্রায়ই এসব আড্ডায় আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। গল্পের ফাঁকে বলে ফেলে অন্যের গোপন কথা। আবার অন্যের সম্পর্কে না জেনেই মনগড়া গল্প তৈরি করে অনেকে। এসব সমালোচনা অনেকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’ কিউবির মানবসম্পদ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী বুশরা ইব্রাহীম। তিনি বলেন, ‘আড্ডা মানেই নানা কথার ফুলঝুরি। সেখানে অনেক সময় অজান্তেই পরনিন্দা বা পরচর্চা হয়। তবে এটিকে স্বাভাবিক মনে করা উচিত নয়। সমালোচনা গঠনমূলকও হতে পারে। এতে করে কেউ ভুল করলে শুধরে নিতে পারবে। একদম সরাসরি না বলে কৌশলে বুঝিয়ে বলা যেতে পারে। এতে করে সে আপনার ওপর খুশিই হবে। কিন্তু সমালোচনা অন্যের কষ্টের কারণ হলে সেটি কোনোভাবেই করা উচিত হবে না। অনেকেরই পেশাজীবন হুমকির মুখে পড়ে এসব কারণে। ব্যক্তিত্বহানিও ঘটে। পরনিন্দার ফলস্বরূপ কারও কারও চাকরিও চলে যায়। এটি অভ্যাসের বিষয়। চাইলেই পরচর্চা থেকে বিরত থাকা সম্ভব। অন্যের সম্পর্কে বলার আগে নিজের কথা ভাবতে হবে। কাউকে নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আছে কি না বিবেচনা করতে হবে। তা ছাড়া কারও সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। প্রত্যেকের মধ্যেই ভালো কিছু দিক আছে। সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। তাহলে অনেক সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যাবে। অন্যের সমালোচনা মোকাবিলা করার মনোভাব থাকতে হবে। আপনার ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলুন, যাতে পরনিন্দা কোনো প্রভাব না ফেলে। তবে ইতিবাচক সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করা উচিত।
আড্ডা হবে। তাতে সমালোচনাও থাকবে। কিন্তু কাজের পরিবেশে সেসব সমালোচনা কতটা মানানসই, তা খেয়াল রাখতে হবে। পরচর্চা না করে ভালো কিছুর চর্চাও করা যেতে পারে। সে জন্য মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের মানবসম্পদ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা রুবিনা খান মনে করেন, আড্ডায় সবাই পরনিন্দা করে না। দু-একজনের কাছ থেকে বিষয়টি সবার মধ্যে বিস্তার লাভ করে। যারা করে তাদের থামিয়ে দেওয়া যেতে পারে। অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বিশ্বস্ততার জায়গা তৈরি হয়। এটি নষ্ট করা ঠিক নয়। কখনোই কারও গোপন কথা অন্যের সামনে বলে ফেলা উচিত নয়। পরচর্চা অফিসের কাজের পরিবেশকে নষ্ট করে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে প্রতিষ্ঠানের ওপর। সুস্থ, সৃজনশীল কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। এতে আপনার কর্মস্পৃহা বেড়ে যাবে। তবে নেতিবাচক সমালোচনা শুধু ক্ষতিই ডেকে আনে। এর জন্য নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। ভালো চিন্তাভাবনা করা এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। তবে কেউ ভুল করলে অবশ্যই তার ভুল ধরিয়ে দেবেন। অন্যের সঙ্গে আলোচনা না করে যার কথা তাকে বলা উচিত। কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অফিসে কথা বলার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানেরও কিছু দায়িত্ব আছে। বিশেষ করে মানবসম্পদ বিভাগের। তারা অফিসের সবাইকে ডেকে আলোচনার মধ্যে এসব বিষয় তুলে ধরতে পারে। এতে করে প্রত্যেকের আচরণ সংযত হবে। কর্মক্ষেত্রে কী করা উচিত নয়, তারা তা জানবে। সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সবার সহযোগিতার মাধ্যমেই এটি সম্ভব। খেয়াল রাখবেন, আপনার কারণে কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২০, ২০১০
Leave a Reply