বসার আয়োজনও জাপানি কায়দায় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা রোদের এক সকাল। ছুুটির দিন হলেও রাস্তায় যানজট একেবারে কম নয়, রয়েছে গাড়ির ভিড়ও। ভিড় ঠেলে উত্তরা যেতে জসীমউদ্দীন সড়কের আগে হাতের বাঁ পাশে ৬ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়িতে পৌঁছাতেই রোদের তীব্রতা বেড়ে যায় অনেকখানি। এখানেই রয়েছে জাপানি খাবারের সমারোহ নিয়ে ‘নাগাসাকি জাপানিজ রেস্টুরেন্ট’। এক পাশে দরজা টেনে ভেতরে ঢুকতেই কানে এল মৃদু শব্দের জাপানি সংগীত। জাপানের ঐতিহ্য অনুযায়ী দরজা টান দিয়ে খুলতে হয় এই রেস্তোরাঁর। ভেতরে কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি বিশেষ খাবার টেবিলের ব্যবস্থা। টেবিলগুলো এমনভাবে রাখা, যেখানে প্রতিটি টেবিলের নিচে পা রাখার জন্য রয়েছে বিশেষ জায়গা। খালি পায়ে গিয়ে বসতে হয় সেখানে। জাপানের রীতি অনুযায়ী তৈরি এ ব্যবস্থা। এখানে যেমন একসঙ্গে পুরো এক পরিবার খেতে পারবে, তেমনি ছোট পরিবারের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই দেখা গেল আরেকটি খাবারের জায়গা। এখানেও রয়েছে অন্য রকম আয়োজন। জাসকি নামের এ জায়গাটি সাজানো হয়েছে বিশেষ জাপানি ঐতিহ্যে। এক পাশে জাপানি ছাতা, পাথর আর ঐতিহ্যবাহী সামুরাই তলোয়ার দিয়ে সাজানো। এখানেও বিশেষভাবে কাঠের ওপর বসার ব্যবস্থা রয়েছে। রেস্তোরাঁর দেয়ালে দেয়ালে জাপানের পাখা সাজানো। রয়েছে বিভিন্ন শিল্পকর্মও। নিচতলায় এক পাশে জাপানি ভাষার বেশ কিছু ম্যাগাজিনও দেখা গেল। এ ছাড়া এক কোণে রয়েছে বিশেষ সুশি বার। রেস্তোরাঁটির মালিক তানাকা সিজুরু ও মরিসিঞ্জি দুজনেই জাপানের নাগরিক। বাংলাদেশে জাপানের খাবার আর ঐতিহ্যকে সবার কাছে তুলে ধরতেই তাঁরা এ রেস্তোরাঁটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানালেন রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক এম এ সালাম। রেস্তোরাঁয় সব মিলিয়ে একবারে প্রায় ৭০ জন খেতে পারবেন। ২০০৯ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়ার পর থেকেই শুধু জাপানের খাবারের জন্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে রেস্তোরাঁটি। এখানে নানা ধরনের খাবারের মধ্যে প্রধানত রয়েছে মিক্সড সাশিমি, সুশি টেম্পুরা; যার মধ্যে মিক্সড সাশিমি এক হাজার ২০০ টাকা, মিক্সড সাশিমি স্যামন ও টুনা ৮০০ টাকা, সুশি ৭৮০ থেকে এক হাজার ৯৮০ টাকা, টেম্পুরা ৬০০ টাকায় পাওয়া যাবে। এমন সব খাবার, যা জিভে জল এনে দেওয়ার মতোই! এ ছাড়া এখানে খাবারের তালিকায় রয়েছে তেরেকি চিকেন, তেরেকি স্যামন, তেরেকি বিফ, গ্রিলড ফিশ, নুডলস ইত্যাদি। এসব খাবার ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। প্রতিদিন দুপুরে খাবারের তালিকা পরিবর্তন করা হলেও অন্য খাবারগুলো পাওয়া যাবে নিয়মিত। দুপুরের খাবার খেতে যেতে হবে ১২টা থেকে দুইটা ৩০ মিনিটের মধ্যে আর রাতের খাবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১১টা। প্রতিদিনের খাবারের পাশাপাশি রয়েছে বুকিং দেওয়ার ব্যবস্থা—জানালেন এম এ সালাম। তিনি জানান, এই রেস্তোরাঁয় একজন পুরোপুরি এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে খেতে পারবেন। দুপুরের চেয়ে রাতের বেলায় বেশি ভিড় হয় এখানে। পুরো আয়োজনই যেন এক টুকরো জাপান। ঘরোয়া পরিবেশের ছোঁয়া, যা সহজে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে। রেস্তোরাঁ থেকে বের হতেই চোখ পড়ল মূল প্রবেশদ্বারের দিকে। প্রবেশদ্বারটি আবার জাপানি হাতপাখার আদলে তৈরি! সূর্য তখন একেবারে মাথার ওপরে, আর তখন রেস্তোরাঁর ভেতরে হালকা সংগীতের তালে চলছে খাবার তৈরির প্রস্তুতি আর ক্রেতাদের আগমনের অপেক্ষা।
নুরুন্নবী চৌধুরী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২০, ২০১০
Leave a Reply