তখন সন্ধ্যা প্রায়। চারপাশে আঁধারের চাদর। পুরো আঁধার ঢাকার আগেই রাস্তার বাতি আর ব্যস্ত রাজধানীর গাড়ির বাতি জ্বলে উঠেছে। গুলশান এভিনিউয়ে তখন গাড়ির ভিড় মোটামুটি। গুলশান এভিনিউ ধরে গুলশান-১ থেকে গুলশান-২-এর দিকে যেতেই হাতের ডান পাশে পড়ে বেলা ইটালিয়া। রাস্তার পাশেই, তাই নজরে পড়ে সহজেই। গাড়ির ভিড় এড়িয়ে এগিয়ে যেতে কানে আসে মৃদু গানের আওয়াজ। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল পুরো উৎসব আয়োজন। চারপাশে মুগ্ধ করার মতো সাজসজ্জা। দেয়ালে দেয়ালে ইতালির বিখ্যাত অনেকের ছবি টানানো। শুধু ছবিই নয়, ছবির পাশাপাশি রয়েছে ইতালির বিখ্যাত সব শিল্পকর্মও। একপাশে রয়েছে শিশুদের বসার জন্য বিশেষ চেয়ার। মৃদু গানের তালে তালে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেতে খেতে আড্ডায় মেতে উঠেছেন অনেকেই। বেলা ইটালিয়ায় বড় পরিবারের সবাই মিলে যেমন একসঙ্গে খাওয়া যাবে, তেমনি ছোট পরিবারের সব সদস্য পারবেন খাওয়া আর আড্ডার মজা নিতে। চারপাশে অনেকের ভিড়, যার মধ্যে রয়েছে কয়েকজন বিদেশিও। খাওয়া আর আড্ডা সব মিলিয়ে যেন এক জমজমাট আসর। একপাশে সবুজের সমারোহ, যার মধ্যে রয়েছে সুন্দর সুন্দর বেশ কয়েকটি গাছ। প্রায় ১৭ ধরনের পিৎজা পাওয়া যায় এখানে। ইতালির বিখ্যাত সব পিৎজার সমাহার এখানে, জানালেন বেলা ইটালিয়ার ব্যবস্থাপক ফয়সাল। নানা ধরনের পিৎজার মধ্যে রয়েছে পিৎজা বেলা ইটালিয়া, পিৎজা মার্গারিটা, পিৎজা মারিনারা, পিৎজা এই ফ্রুটি ডি মারি, পিৎজা গামবেরি, পিৎজা নেপলি, পিৎজা পুনগি ইত্যাদি। এসব পিৎজা ৩৭০ থেকে ৪২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। পিৎজা ছাড়াও রয়েছে আরও নানা খাবারের আয়োজন। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের সালাদের পাশাপাশি রয়েছে আটটি আয়োজন নিয়ে সেকেন্ড ডিসেজ আর ১২টি আয়োজন নিয়ে ফাস্ট ডিসেজ। খাবার তালিকায় নানা ধরনের আয়োজন জিভে জল এনে দেওয়ার মতো! এসব খাবারই নয়, রয়েছে ডিজার্ট আর সাতটি আয়োজন নিয়ে সাইট ডিসেজ। পিৎজা ছাড়া ফাস্ট ডিসেজের বিভিন্ন খাবার পাওয়া যাবে ৩৩০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া সেকেন্ড ডিসেজের বিভিন্ন খাবার ৩৩০ টাকা আর সাইড ডিসেজের বিভিন্ন খাবার ৮০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। বেলা ইটালিয়ায় সপ্তাহের প্রতিদিনই থাকে একই রেসিপি। তাই যেকোনো সময়ই গিয়ে পাওয়া যাবে এসব খাবার। ২০০০ সালে প্রথম যাত্রা শুরু হয় বেলা ইটালিয়ার, যার মালিক খন্দকার বজলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে কাজ করেছেন এবং ইতালির বিভিন্ন খাবারের ওপর বিশেষ দক্ষতাও অর্জন করেছেন, জানালেন ফয়সাল। বিশ্বসেরা ইতালির সেসব পিৎজার স্বাদ আমাদের দেশে নিয়ে আসতে এবং সবাইকে সেসব পিৎজার স্বাদ দিতেই এ আয়োজন। শুধু ইতালির খাবারই নয়, বেলা ইটালিয়ায় রয়েছে পুরোপুরি ইতালির আবহ, জানান তিনি। গান, ছবি, খাবার, পরিবেশ আর আয়োজন— সব মিলিয়ে এ যেন এক টুকরো ইতালি!
খাবার আর আড্ডা এমনই যখন চলছে তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়ছে। তবে থেমে নেই গ্রাহকদের আসা-যাওয়া। রাস্তায় নামতেই দেখা গেলে গাড়ির ভিড় বেড়েছে কিছুটা আর ততক্ষণে জমজমাট বেলা ইটালিয়ার ভেতরের আয়োজন।
নুরুন্নবী চৌধুরী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৩, ২০১০
Leave a Reply