গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমে কাজ করে একটু প্রশান্তি চায় সবাই। গরমের পর বৃষ্টি এলে শান্তি চলে আসে শরীর ও মনে। বর্ষায় বৃষ্টির পর বাড়ির ছাদে যাওয়ার মজাই আলাদা। বৃষ্টির পর ঠান্ডা বাতাস ছাদের পরিবেশটাকে অন্য রকম করে তোলে। তাই অনেকেই বৃষ্টির পর তো বটে, অন্য সময়ও বাড়ির ছাদে ঘুরতে যায়। কিন্তু আপনার বাড়ির প্রিয় ছাদটি বৃষ্টির পানিতে নোংরা হয়ে নেই তো? বৃষ্টির পর বা অন্য সময় বাড়ির ছাদে বেড়াতে গিয়ে আপনি পড়তে পারেন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে। পাশাপাশি ছাদে যদি পানি জমে থাকে, তবে মশাসহ নানা রকম রোগজীবাণুতে ভরে উঠতে পারে ছাদটি। তাই এ সময়টাতে ছাদ পরিষ্কার রাখা জরুরি।
বর্ষার সময় বাড়ির ছাদে পানি জমার কারণ ও পানি জমার কারণে কী ক্ষতি হতে পারে তা জানিয়েছেন বিল্ডিং ফর ফিউচার লিমিটেডের চেয়ারম্যান স্থপতি কাজী আনিসউদ্দিন ইকবাল। তিনি বলেন, ছাদে পানি জমার কারণে আপনার প্রিয় বাড়িটির অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, অনেক বাড়ির মালিক এ বিষয়টি খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে না। নির্মাণের সময় একটু সচেতন হলেই বাড়ির ছাদে বৃষ্টির পানি জমার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
ছাদে পানি জমার কারণ
ছাদে ঢাল না থাকার কারণে পানি জমে।
ছাদ অসমতল হওয়ার কারণে পানি জমতে পারে।
নির্মাণের সময় অসচেতন থাকার কারণে অনেক সময় ছাদের বিভিন্ন স্থানে গর্ত থাকার কারণে পানি জমে।
বৃষ্টির পর ছাদ থেকে পানি পড়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা না থাকার কারণে পানি জমে।
ছাদ থেকে পানি পড়ার স্থানে বাধা পেলে অনেক সময় পানি জমে থাকে।
পানি নিচে পড়ার পাইপের সামনে বা মুখে গাছের পাতা বা অন্য কিছু জমে থাকার কারণে পানি জমে থাকে।
পাইপের মধ্যে পাতা বা অন্য কিছু আটকে থাকলে নিচে পড়তে অসুবিধা হওয়ার কারণে অনেক সময় পানি জমে থাকে।
ছাদ থেকে পানি পড়ার পাইপের আয়তন তুলনামূলক কম বা চিকন হওয়ার কারণে মুষল ধারে বৃষ্টির পানি নিচে পড়তে অনেক সময় লাগে, তাই ছাদে পানি জমে থাকে।
পানি জমার কারণে কী ক্ষতি হতে পারে
পানি জমার কারণে ছাদের স্থায়িত্ব কমে যেতে পারে।
ছাদে পানি জমার কারণে সব সময় স্যাঁতসেঁতে থাকে। এর ফলে ছাদে হাঁটাচলা করতে অনেক সমস্যা হয়।
ছাদে বেশি সময় জমে থাকলে কংক্রিটের ছিদ্র দিয়ে পানি নিচে চলে আসতে পারে।
ছাদের নিচের তলায় ওপরে পানি জমার কারণে সব সময় ভেজা ভাব থাকে।
কংক্রিটের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে ঘরের আসবাব, বই-খাতাসহ অন্যান্য জিনিস ভিজে যেতে পারে।
ছাদে পানি বেশি জমে থাকলে সিঁড়ি দিয়ে পানি নিচে বা থাকার রুমে চলে যেতে পারে।
বেশি সময় পানি জমে থাকার কারণে ডেঙ্গুসহ অনেক অসুখ হতে পারে।
সচেতনতা
একটু সচেতন থাকলেই বাড়ির ছাদে পানি জমা সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।
কিছুটা ঢালু করে ছাদ নির্মাণ করতে হবে।
ছাদ যেদিকে ঢালু রাখা হয়, সেদিকে যেন পানি পড়ার যথাযথ ব্যবস্থা থাকে।
ছাদ থেকে পানি পড়ার পাইপ কিছুদিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে।
পাইপের মুখে বা ছাদে যেন পাতা বা অন্য কিছু জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
ছাদে গর্ত থাকলে সেগুলো মেরামত করে দিতে হবে।
বাড়ি নির্মাণের সময় ঠিকমতো কমপ্যাকসন (জমাট) করতে হবে। ঠিকমতো কমপ্যাকসন না হলে ছাদের মধ্যে অনেক ছিদ্র থেকে যায়। ছিদ্র দিয়ে পানি চলে আসতে পারে।
তৈরির পর যদি ছাদ দুর্বল হয়ে যায়, কেমিক্যাল বা টালি দিয়ে ছাদ মেরামত করে দিতে হবে।
জলছাদ তৈরি করতে পারেন। এতে গ্রীষ্মের তাপ থেকে বাঁচা যাবে এবং ছাদে পানি জমার ভয় থাকবে না।
সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনার বাড়ির তলার সংখ্যা না বৃদ্ধি করেন; ছাদ সমতলভাবে তৈরি না করেন। টালি বা অন্য কিছু দিয়ে ওপরের দিকে সরু করে দুই দিকে ঢালু (ত্রিভুজ আকৃতি) করে তৈরি করুন।
বাড়ি বানানোর সময় একটু সচেতন হতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি বানাতে হবে।
তারিকুর রহমান খান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৩, ২০১০
Leave a Reply