ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।—বি.স.
সমস্যা: আমার বয়স ২৭ বছর। আমাদের পার্বতীপুরের একটি মেয়ে। বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সে আমার পছন্দের। তাকে কখনো বলা হয়নি। কারণ, তাকে প্রস্তাব করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারিনি। আমি তাকে ২০০৬ সাল থেকে পছন্দ করি। আমার লেখাপড়ায় বিরতি পড়ার কারণে ২০০৬ সালে নতুন করে বিএসএসে ভর্তি হয়েছি। আমি সাদাসিধে জীবন পছন্দ করি। আমি ব্যবসায়ী ও মা-বাবার বড় ছেলে। এ অবস্থায় সমাধান টানব কীভাবে, মন তো চাইছে তাকে। আবার মা-বাবা আমার বিয়ের জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। আমি জবাব দিতে পারি না। কারণ, আমার তো ভালো লাগে তাকে। তার কথা মা-বাবাকে বললে প্রস্তাব করবেন, কিন্তু তারা যদি না করে! তাহলে তো আমার জন্য মা-বাবাকে ছোট হতে হবে।
জামাল, পার্বতীপুর
পরামর্শ: তোমার বয়স ২৭ বছর এবং মেয়েটিও বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক। তুমি চার বছর ধরে মেয়েটিকে পছন্দ করছো, অথচ তাকে বলোনি। এটি প্রমাণ করে, নিজের ওপর তোমার যথেষ্ট আস্থা বা বিশ্বাস সৃষ্টি হয়নি এবং নিজের অধিকার সম্পর্কে তুমি খুব বেশি সচেতন নও। আমি বলব, তোমার যেমন অধিকার রয়েছে মেয়েটিকে মনের কথাটি খুলে বলার, মেয়েটিরও তেমনি অধিকার আছে নিজের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার। কাজেই নিজের মনকে নেতিবাচক ফলাফলের জন্য আগে থেকেই তৈরি করে নিয়ে যথেষ্ট আস্থা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তার কাছে ইচ্ছাটি প্রকাশ করতে পারলে ভালো হয়। মেয়েটিও যদি আন্তরিকভাবে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক করতে রাজি থাকে, তাহলে তাকেই কিন্তু তার অভিভাবককে রাজি করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে। মেয়েটি ইতিবাচক থাকলে তুমি তখন অনেক বেশি আস্থা নিয়ে তোমার অভিভাবককে বিষয়টি জানাতে পারবে। তোমার ‘ব্রেক অব স্টাডি’ আছে বুঝতে পারছি, কিন্তু তুমি তো আবার নতুন করে লেখাপড়া করছো। আমি আশা করব, তোমার অর্জনের ওপর ভিত্তি করে নয়, নিজের সত্তাকে আলাদাভাবে মর্যাদা দেবে। সেটি করতে পারলে কিন্তু অন্য কেউ কম মর্যাদা দেওয়ার পর কিছুটা কষ্ট পেলেও নিজেকে কোনোভাবেই ছোট মনে হবে না। তুমি যদি নিজের প্রতি বিশ্বাস তৈরি করতে সক্ষম হও এবং সমাজের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতা অর্জন করো, তাহলে পরিবারের সদস্যদের তুমি অনেক বেশি গর্ববোধ করতে পারবে। তখন অন্য কেউ মা-বাবাকে মর্যাদা দিতে না পারলেও তোমার মনে হবে না, এতে তাঁরা ছোট হয়েছেন। বরং যারা অমর্যাদা করছে, এটিকে তাদের অক্ষমতা হিসেবে ধরে নিয়ে তাদের নিজস্ব প্রত্যক্ষণ অনুযায়ী মত প্রকাশের অধিকার দিয়ে তুমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে পথ চলতে পারবে। অনেক শুভ কামনা রইল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১০, ২০১০
Leave a Reply