আকাশে আজ মেঘের আনাগোনা। মেঘবালিকার খেয়ালখুশিতে কখনো বা নেমে পড়ছে এক পশলা বৃষ্টিও। ওই বৃষ্টিতে ভিজে মাধবীলতা নুয়ে পড়েছে লজ্জায়। বাদল দিনে মাধবীলতা, বেলি আর কদম ফুলে যখন সেজে উঠেছে প্রকৃতি, তখন আপনিও রাঙিয়ে নিন নিজেকে। স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে সাজে সাজে হয়ে উঠুন রঙিন।
বর্ষার রং নাকি নীল। বাদল দিনের সাজসজ্জার সঠিক উপকরণ আর নীলাভ সাজ নিয়ে বলেছেন কিউবেলার রূপ বিশেষজ্ঞ ফারজানা আরমান ও রেড বিউটি সেলুনের রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা কামাল।
‘বর্ষার সময় প্রকৃতিতে একটু ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকে।
তা ছাড়া যেকোনো মুহূর্তে নেমে পড়া বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যাওয়ারও থাকে আশঙ্কা। তাই এ সময়ের সাজের উপকরণটি হতে হবে অবশ্যই পানিরোধক।’ বলছিলেন ফারজানা আরমান।
সাজের উপকরণ ব্যবহারের আগে মুখটা আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেশওয়াস দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর একটু ভারী ময়েশ্চারাইজার লাগান। বেইজ হিসেবে তরল ফাউন্ডেশনটা বাদ দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন স্টিক ফাউন্ডেশন।
এটি যেন অবশ্যই পানিরোধক হয়। অথবা ক্রিম টু পাউডার ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। তবে দিনের বেলায় পাউডার হিসেবে হলেও রাতে একটু ভিজিয়ে ব্যবহার করলে বেশি ভালো দেখাবে। প্রেসড পাউডারও ত্বকে সজীব ভাব ফুটিয়ে তোলে। আর ফাউন্ডেশনটাকে দীর্ঘসময় ভালো রাখতে এর ওপর লুজ পাউডারও লাগিয়ে নিতে পারেন। চোখের নিচের জন্য স্টিক বা পেনসিল কনসিলার বেছে নিন। চোখের সাজে এর উপকরণের দিকেও নজর দিন। কাজল এ সময় বাদ দেওয়াই ভালো। এর বদলে পানিরোধক আই পেনসিল বেছে নিন। আইশ্যাডোর পরিবর্তে রঙিন আই পেনসিল ব্যবহার করতে পারেন। লাইনার ব্যবহার করতে চাইলে পানিরোধক লাইনার বেছে নিন। রাতের সাজে ক্রিম ব্লাসন, ম্যাট পাউডার ও আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। লিপস্টিক হিসেবে দিনে ম্যাট লিপস্টিক ও রাতে লিপগ্লস বেছে নিন। পুরো সাজের পর ব্রোনজিং পাউডার আলতোভাবে লাগাতে পারেন। এই হলো সাজসজ্জার উপকরণের গল্প। বাদল দিনের রঙিন সাজ কেমন হতে পারে, তা জানালেন আফরোজা কামাল।
মেঘে ঢাকা আকাশের মুখ গোমরা বলে কি আপনার সাজেও তা প্রকাশ পাবে? মোটেই না। এখন সাজসজ্জার জন্য নীল, সবুজ, ফিরোজা, কমলা, গোলাপি রঙের ব্যবহার করতে পারেন। আপনার সাজে এ রংগুলো যোগ করে নিতে পারেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে রংগুলো এঁকে নিন ঠোঁটে, চোখে। তবে প্রকৃতির সঙ্গে মিলে যেতে আপনার নীলচে সাজটা বেশি কাজে দেবে।
সাজের শুরুতেই মুখ খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর ময়েশ্চারাইজার দিয়ে খুব ভালোভাবে ত্বকটা মালিশ করে নিন। তিন মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর করতে পারেন হালকা বেইজ মেকআপ। পুরো মুখে স্টিক ফাউন্ডেশনটি লাগিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ব্লাসনটা ব্যবহার করুন হাতের আঙুল দিয়ে। অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় যেখানেই যান না কেন, সাজে নীলের ছোঁয়াটা কিন্তু বেশ ভালো লাগবে। তবে অবশ্যই এটি যেন ভালোভাবে মিশে থাকে, তা খেয়াল রাখুন। চোখে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে শ্যাডো লাগিয়ে নিন আলতো করে। আকাশি, নীল ফিরোজার সঙ্গে বেগুনী, গোলাপী, সোনালি রঙটাও মিশিয়ে নিতে পারেন চোখ সাজাতে। আঙুলের ডগায় নিয়ে হালকা করে লাগিয়ে নিন চোখের পাতায়। অথবা রঙিন পেনসিল দিয়েও টেনে নিতে পারেন চোখের আয়নায়। ওপরের পাতায় রঙিন পেনসিলের টানাটি আঙুলের ডগা দিয়ে আইশ্যাডোর সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে আনতে পারেন স্মোকি লুক। বেশ আকর্ষণীয় করে চোখ ফুটিয়ে তুলতে উজ্জ্বল আইশ্যাডোর সঙ্গে কালো কাজল মিশিয়ে নিতে পারেন। ব্যবহার করতে পারেন গাঢ় নীল মাসকারাও। নীলচে সাজের সঙ্গে ঠোঁট সাজাতেও ব্যবহার করতে পারেন উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক। গোলাপী, বেগুনি, বাদামি লিপস্টিকটা দিনে-রাতে দু সময়ই ব্যবহার করতে পারেন। তবে রাতে ম্যাট লিপস্টিকের ওপর লাগিয়ে নিতে পারেন গ্লসও। তা ছাড়া নাকের দুই পাশে গাঢ় ব্লাসন লাগিয়ে নিতে পারেন ইচ্ছেমতো। সাজের মধ্যে আরও বেশি সজীবতা যোগ করতে শাইনিং পাউডারটা আলতো করে ছুঁইয়ে নিতে পারেন। তাতে আপনার নীল রঙের সাজটা আরও বেশি স্নিগ্ধ হয়ে উঠবে। সাজের সঙ্গে পোশাকটাও বেছে নিতে পারেন আকাশের মতো নীল বা ঘাসের মতো সবুজ অথবা প্রজাপতির পাখার মতো রঙিন কোনো রঙের। মেকআপের পালা শেষ করে বেঁধে নিন চুলগুলো। সামনের দিকের চুলগুলো আটকিয়ে নিন ক্লিপ দিয়ে। সামনের দিকে পনিটেইল করে পেছনে একটা খোঁপা বা বেণিও করে নিতে পারেন। নীল পাথরের দুলটা এবার ঝুলিয়ে দিন কানের লতায়, আংটিটা অনামিকায় আর নীল টিপটা থাক কপালে। সাজটা শেষ করে এবার নিশ্চয়ই বাইরে বেরিয়ে যওয়ার পালা? তবে বাদল দিনে নীল সাজের সঙ্গে খোঁপায় একটা ফুল ছাড়া কি মানায়! এবার আপনার সাজ একেবারে পূর্ণ।
শান্তা তাওহিদা
মডেল: মৌ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৬, ২০১০
Leave a Reply