এককালে খাবার টেবিলের প্রচলন ছিল না। তখন মানুষ মাটিতে, জলচৌকিতে বসে খাবার খেত। সে সময় বনেদি পরিবারগুলোতে দস্তরখানার ওপর খাবার পরিবেশন করা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দস্তরখানার ব্যবহার কমেছে। কিন্তু একবারে শেষ হয়ে যায়নি। বরং নতুন রূপে ফিরে এসেছে। দস্তরখানার পরিবর্তিত রূপই হলো হালের টেবিল রানার। বললেন রান্নাবিদ রাহিমা সুলতানা। কিন্তু আজকাল খাবার টেবিলে এই টেবিল রানার বেশ শোভা পাচ্ছে। শৌখিনতাই প্রকাশ করছে তা নয়, খাবার পরিবেশনেও ভিন্নতা এনে দিচ্ছে, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। এতে করে খাওয়ার রুচি বেড়ে যায়। ফলে হজম প্রক্রিয়াও বাধাপ্রাপ্ত হয় না।
কোন টেবিল কীভাবে সাজাবেন
টেবিল রানার সাধারণত লম্বা ধরনের হয়ে থাকে। সে কারণে লম্বা আকৃতির টেবিলেই এটি বেশি মানানসই। দুই পাশে ঝুলিয়ে দিলেও ভালো দেখাবে। তাই বলে যাঁদের গোল টেবিল তাঁরা গাল ফুলিয়ে বসবেন না। আপনারা বর্গাকৃতির টেবিল রানার ব্যবহার করবেন। বাজারে কিনতে পাওয়া না গেলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। নিজের মনের মতো করে তৈরি করে ফেলুন। সাধারণ আকৃতির টেবিল রানারের চেয়ে তুলনামুলক ছোট করে তৈরি করলে গোল টেবিলে সুন্দর দেখাবে। বর্গাকৃতির টেবিলেও এমনটি করা যেতে পারে। তবে শুধু টেবিল রানার ব্যবহারেই খাবার টেবিল পূর্ণতা পায় না। সঙ্গে ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে। টেবিল রানারের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রংকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। ন্যাপকিনটাও এর রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিনতে পারেন। কেউ চাইলে ছোট ছোট ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে টেবিল পূর্ণতা পাবে।
নানা উপকরণের টেবিল রানার পাওয়া যায়। তবে মোটা কাপড়ের তৈরি টেবিল রানার ব্যবহার করলে ভালো। এতে করে টেবিলের সঙ্গে সুন্দরভাবে এঁটে থাকবে। তা না হলে ওড়াউড়ি করার সম্ভাবনা থাকে। দেশীয় তাঁতের তৈরি টেবিল রানারের প্রচলনই বেশি। বাঁশের, পুতিঁর,বেতের টেবিল রানারও অনেক আকর্ষণীয়। বড় বাসনটা মাঝে রেখে ছোট গুলোকে চারপাশে সাজালে অন্য রকম লাগবে। টেবিল রানারকে সাজিয়ে রাতের খাবারকে ভিন্নভাবে পরিবেশন করতে পারেন। সেজন্য প্রথমেই ঘরের বাতিগুলো নিভিয়ে ফেলুন। সুগন্ধি মোমবাতি জ্বালিয়ে সরু ফুলদানিতে একটি ফুল রাখুন। দেখুন প্রিয়জনের মুখখানা। সারা মুখে কতটা ভালোলাগার ছটা। আপনি চাইলে সব সময়ের জন্য সরু ফুলদানিতে একটি ফুল রাখতে পারেন। সঙ্গে খাবার ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে টেবিল রানার ছাড়া এসব সাজসজ্জা অর্থহীন।
যত্ন-আত্তি
খাবারের সঙ্গে জড়িত থাকে টেবিল রানার। তাই এর যত্নআত্তিও করতে হবে। খেয়াল রাখবেন এতে যেন তরকারির ঝোল, ডাল না পড়ে। যদিও বা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলবেন। প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য বেতের কিংবা কাপড়ের টেবিল রানার উপযোগী। তাহলে সহজেই পরিষ্কার করতে পারবেন। বিশেষ অনুষ্ঠানে বাঁশের ,পুিঁতর, পাটকাঠির টেবিল রানার ব্যবহার করতে পারেন। ময়লা, তেল চিটচিটে হলেই সাবানপানিতে ধুয়ে ফেলবেন।
কোথায় পাবেন
যাত্রা: তাঁত,বাঁশ,পুঁতি ও পাটকাঠির টেবিল রানার পাবেন। নকশিকাথার টেবিল রানারও পাওয়া যায়। দাম পড়বে ৫৫০-১৩০০ টাকা। সঙ্গে মিলিয়ে ন্যাপকিনও কিনতে পারবেন।
আড়ং: এখানে মূলত তাঁতের তৈরি মণিপুরি নকশার টেবিল রানার পাবেন। নকশার ভিন্নতায় দামেও ভিন্নতা দেখা দেয়। দাম পড়বে ২৫৬-৪৫০ টাকা। রঙ : উজ্জ্বল রঙের মাঝারি আকারের টেবিল রানার পাবেন ৪০০-১৭০০টাকায়।
এ ছাড়া গুলশান-২-এর ফ্যাশন হাউস ‘চন্দন’ নিউমার্কেটে এসব টেবিল রানার পাওয়া যায়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৬, ২০১০
Leave a Reply