সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। ঢাকার গুলশান ২ নম্বর গোল চত্বরের নর্থ এভিনিউয়ে যন্ত্রযানগুলো ছুটছে আর ছুটছে। এই পথেই এগোতে চোখ যায় পাশের একটি বাড়ির দিকে। মনে হচ্ছে, কোনো উৎসব চলছে। ভেতরে ঢুকতেই বিভ্রান্তি কেটে গেল। গাছের পাতার আড়ালে জ্বলছে ছোট ছোট বাতি। এতে তৈরি হয়েছে আলো-আঁধারি এক আবহ। বেশ কয়েকটি মশালের মতো ল্যাম্পেও গোটা পরিবেশকে অন্য রকম এক মুগ্ধতায় নিয়ে যায়! বাগানের আড়ালেই চমৎকার একটি উঠোন। আর সেখানে বসে বসে অবলীলায় বাইরের সৌন্দর্যটা অবলোকন করা যায় দারুণভাবে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই আসল মজাটা বোঝা গেল। রকমারি খাবারের আয়োজন সেখানে!
ঘোড়ার গাড়ির আদলে সাজানো এখানকার বারবিকিউটা। সেখানে চোখের সামনেই তৈরি হচ্ছে নানা পদের ঝলসানো খাবার। আর জিভে জল আনা ঘ্রাণ নাকে এসে ঢুকছে যেন! জানা গেল, প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার রাতে বুফে খাবারের আয়োজন থাকে এখানে। এর জন্য জনপ্রতি ১১০০ টাকা আর ছোটদের জন্য ৭০০ টাকা খরচ হবে। বুফেতে আছে নানা পদের খাবার। স্পিটফায়ারের নানা পদের খাবার ঘুরে দেখতে দেখতে চোখ গেল আস্ত একটা ঝলসানো খাসির দিকে। এই খাবারটির নাম ‘হোল ল্যাম্ব উইথ কার্ভিং’। এখানে পাওয়া যাবে গ্রিল শর্মা, গ্রিল চিকেন, গ্রিল পটেটোসহ গ্রিলের আরও বেশ কয়েকটি খাবার। এ ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের সালাদ আর ডেজার্টের আয়োজনটাও বেশ লোভনীয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলে দলে লোকজন আসতে শুরু করল এই রেস্তোরাঁ। সে দলে দেখা গেল বেশ কিছু বিদেশিকেও। স্পিটফায়ার রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপক মোকলেসুর রহমান জানান, ‘২০০২ সালে চালু হয় এই রেস্তোরাঁটি। আগে পাঁচতারা হোটেল ছাড়া পাশ্চাত্যের খাবার কোথাও সেভাবে পাওয়া যেত না। আর এ অভাববোধ থেকেই তৈরি করা হয়েছে এই রেস্তোরাঁটি।’
মোকলেসুর রহমান আরও জানান, এখানে কাজ করেন অভিজ্ঞ শেফরা। বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত খাবার তৈরির মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে এই রেস্তোরাঁটি সে সময় সাড়া জাগিয়েছিল। এই রেস্তোরাঁর খাবারে ব্যবহূত উপকরণ আনা হয় মালয়েশিয়া থেকে। খোলা আকাশের নিচে বারবিকিউ করা হয় এই রেস্তোরাঁয়।
মোকলেসুর রহমান জানান, ‘এখানে একবার খেতে এলে তার স্বাদ মুখে যেন লেগেই থাকে। মাঝেমধ্যে জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।’
বুফে খাবার আয়োজনের দুই দিন বাদে অন্যান্য দিনও রকমারি আয়োজন থাকে এখানে। এই রেস্তোরাঁয় আয়োজন করা যাবে যেকোনো ধরনের ঘরোয়া অনুষ্ঠানের। এ জন্য অবশ্যই এক সপ্তাহ আগে বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। দুপুরের খাবার এখানে খেতে গেলে খরচ পড়বে ৭৫০ টাকা। তবে এখন দুপুরের এ খাবারটিতে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। স্পিটফায়ার রেস্তোরাঁয় অন্দরসজ্জাটাও নজর কাড়ে। এক কোণে দেয়াল ফুঁড়ে বের হওয়া ঘোড়ার মুখ দেখে চমকিতই হতে হয়।
প্রতিটি টেবিলে চলছে জম্পেশ আড্ডা আর খাওয়ার আয়োজন।
স্পিটফায়ার থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে আসতে রাত ১০টা ছুঁই ছুঁই, রাস্তাঘাট কিছুটা ফাঁকা হতে শুরু করেছে। স্পিটফায়ারের ভেতরের আয়োজনটা ততক্ষণে বেশ ভালোভাবেই জমে উঠেছে!
গ্রিলড হোল সিবাস
উপকরণ: মাঝারি সাইজের মাছ, ময়দা, লেবু, আদা-রসুন বাটা, লবণ, তেল।
প্র্রণালি: মাছ কাটার পর এপিঠ-ওপিঠ মসলা মেখে হালকা ময়দা লাগিয়ে নিন। গ্রিলে তেল দিয়ে হালকা ভেজে নিন। তারপর সেখান থেকে নামিয়ে মাইক্রোওভেনে ১০ থেকে ১৫ মিনিট গরম করে বের করে ফেলুন। এরপর লেবুর রস ও বাটারের তৈরি সস পাতলা করে তৈরি করে পরিবেশন করুন।
মোছাব্বের হোসেন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৬, ২০১০
Leave a Reply