পেরি পেরি চিকেন। সঙ্গে পেরি পেরি সস। নামটা শুনলেই রসনাবিলাসীদের চোখ চকচক করে ওঠে। যাঁরা ন্যানদোসে গেছেন, একবার হলেও এ খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেছেন। এ রেস্টুুরেন্টটির জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। দুই বন্ধু ফার্নান্দো ডেয়ারতে ও রবার্ট ব্রোজেন এটি চালু করেন ১৯৮৭ সালে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পেরি পেরি মরিচের স্বাদ একটুও বদলায়নি। আর সেই ভিন্ন স্বাদের মরিচ দিয়েই তৈরি হয় ন্যানদোসের খাবার। এখানেই এর বিশেষত্ব। গুলশানে যাওয়ার পথে একবার হলেও চোখ চলে যায় এর বাইরের সৌন্দর্যে। বৃষ্টিস্নাত এক দুপুরে হাজির হলাম পেরি পেরিখ্যাত ন্যানদোসে।
দরজার সামনে বিশাল ক্যানভাসজুড়ে এখানে আগত ফুটবলপ্রেমীদের মন্তব্য। ঝোলানো রয়েছে বিশ্বকাপের বিভিন্ন দলের টি-শার্ট। চাইলে কিনতে পারবেন। নাকে এসে লাগল খাবারের সুঘ্রাণ। বোঝা গেল উৎসটা খুব কাছেই। নজরে এল ঝকঝকে খোলামেলা রান্নাঘরটি। সেখানেই তৈরি হচ্ছিল রকমারি পদের খাবার। পুরো তিনতলা জুড়ে রয়েছে গুলশানের ন্যানদো’স। ধানমন্ডিতেও একটি শাখা রয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতেই দেয়ালজুড়ে টেরাকোটার কাজ। অন্দরসাজে ব্যবহূত প্রতিটি উপাদান প্রাকৃতিক। বাঁশ, বেত ও খাদি কাপড় দিয়ে তৈরি ল্যাম্পশেড মুগ্ধ করে। স্নিগ্ধ আলোকসজ্জা চারপাশের পরিবেশকে অন্য রূপ দেয়।
ন্যানদোসের প্রতিটি খাবারের আলাদা বিশেষত্ব আছে। স্পাটাদা রুস্তিকার কথাই ধরুন। একটি স্ট্যান্ডে মুরগির গ্রিল ঝোলানো, সঙ্গে বোলো ব্রেড, সবুজ সবজি। এটি এখানকার অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। এর পরিবেশন দেখেই জিভে জল এসে যায়। দাম ৬২৫ টাকা। রাইস ও কিউব মুরগির ক্যাটাপ্ল্যানাও সমান জনপ্রিয়। এর দাম ৫৮৫ টাকা। তবে প্রতিটি খাবারে পেরি পেরি মরিচের স্বাদ ভিন্ন। এম জি এইচ রেস্টুরেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের (ন্যানদো’স) হেড অব অপারেশনস কে এস এম মহিতুল বারী বলেন, ‘পেরি পেরি মরিচের স্বাদ শুধু পর্তুগিজ খাবারে পাওয়া যায়। এই মরিচ স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলেও এটি খেতে অসুবিধা নেই। এখানকার মুরগি তিন ধাপে রান্না করা হয়। ফলে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে মাংসের সবটুকু চর্বি গলে যায়। মুরগিতে কোনো সংরক্ষক দ্রব্য ব্যবহার করি না। তৎক্ষণাৎ সব খাবার তৈরি করে দেওয়া হয়।’
পেটপুরে খেতে চাইলে পুরো মুরগি, অর্ধেক মুরগি বা এক-চতুর্থাংশ মুরগির ফরমায়েশ দিতে পারেন। এসব খাবারের মধ্যে পার্শ্ব খাবার থাকে। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, সবজি, কর্ন অন কব—এসব পার্শ্ব খাবার নিতে পারেন। এ ছাড়া দলবেঁধে এলে ফুলপ্যাক খাবার, ডুয়ো মিল খেতে পারেন। ৯০০-১২০০ টাকায় অনায়াসে চার-পাঁচজন খেতে পারবেন। নিরামিষাশীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। যাঁরা গরুর মাংস খেতে ভালোবাসেন, তাঁরা ৩৮৫ টাকায় বিফ ট্রিনচারো খেতে পারেন। এ ছাড়া চারজনের উপযোগী করপোরেট মিল দুপুর একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ন্যানদোসে খেতে পারবেন। ন্যানদোসে শিশুদের জন্য বার্গার, চিকেন স্ট্রিপ, সালাদ, ফল ও ফলের জুসের ব্যবস্থা আছে, যা পাওয়া যাবে ২৯০ টাকার মধ্যে। খাবার তো খাবেনই, কিন্তু পানীয়টা কী খাবেন। ন্যানদোসের বিশেষ কিছু পানীয় আছে. যা আর কোথাও পাবেন না। কাইপিরানা, গোয়া লেমন একবার খেলে এর স্বাদ মুখে লেগেই থাকে। ১২০-১৯০ টাকায় যেকোনো পানীয় খেতে পারেন। এ ছাড়া ৯৯ টাকায় একজন যত ইচ্ছা কোকাকোলা খেতে পারেন। নানা ধরনের বেভারেজ, আইসক্রিম, জুস, লাচ্ছি পাবেন। অ্যাপিটাইজারের মধ্যে পেটিস্কো প্ল্যাটারের চাহিদা বেশি। ৯৫০ টাকায় এতে চিকেন উইংস, চিকেন স্ট্রিপস, পেটা ব্রেড, হামাস সস পাবেন। চাইলে যেকোনো ধরনের পার্টি করতে পারেন এর তৃতীয় তলায়। তবে তিন দিন আগে বুকিং দিতে হবে। একেক খাবার একেকভাবে পরিবেশন করা হয়, যা খাওয়ার স্পৃহাকে বাড়িয়ে তোলে। ‘বিশেষ দিন মানেই বিশেষ ব্যবস্থা ন্যানদোসে। তাই তো বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে পেরি কিক নামের ৭৭৭ টাকার বিশেষ প্যাকেজ দিয়েছি। খেতে এসে বড় পর্দায় খেলা দেখারও সুযোগ রয়েছে। শিগগিরই ন্যানদো’স বিশেষ চেইন ডেজার্ট চালু করবে, যা বাংলাদেশে আগে হয়নি।’ বললেন এম জি এইচ রেস্টুরেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক সাফকাত সাকিন। তবে নান্দুসের পেরি পেরি সস আপনি চাইলে আলাদা করেও কিনতে পারেন। ১২৫ মিলির দাম ১৭৫ টাকা আর ২৫০ মিলির দাম ২৭৫ টাকা। ন্যানদো’স ছাড়াও চারটি ভিন্ন স্বাদের পেরি পেরি সস পাবেন আগোরা ও নন্দনে।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৯, ২০১০
Leave a Reply