দেশি ঢঙের চামচ মানবসভ্যতার যাত্রাটা কিন্তু প্রকৃতি থেকে। পশু শিকার করা গুহার মানুষগুলো যখন আগুন জ্বালাতে শিখল, তখন তারা স্বাদ পেল রসনার। সেই রসনাবিলাসে ভিন্নমাত্রা যোগ করল নানা তৈজসপত্র। হাতে না লাগিয়ে খাওয়ার সুবিধার জন্য পাশ থেকেই তুলে নিল কাঠের লাঠি। তরল খাবারটা খেতে হয়তো ফলের গর্তওয়ালা খোলসটা হয়ে উঠল সবচেয়ে সুবিধার জিনিস। ধীরে ধীরে এই তৈজসটির এল আকৃতিগত পরিবর্তন, যার আধুনিক রূপ চামচ। নানা নকশা, নানা উপাদানে তৈরি চামচ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ইদানীং কাঠ, বাঁশ, নারকেলের খোলের তৈরি চামচগুলো বেশ জনপ্রিয়। কেজো তো বটেই, দেখতেও বাহারি।
চামচের দেশি সাজ
‘যাত্রা’র নকশা সমন্বয়কারী কামাল আহমেদ বলেন, একসময় রান্নার কাজে নারকেলের মালা বা কাঠের লাঠির ব্যবহার হতো। এখনো গ্রামে দেখা যায় নারকেলের তৈরি গর্তওয়ালা চামচ বা কাঠের খুন্তির ব্যবহার। এগুলো তারা নিজেরাই তৈরি করে। গ্রামীণ এই তৈজসটির আধুনিক রূপায়ণ ঘটানো হয়েছে বর্তমানে কাঠ ও নারকেলের তৈরি বাহারি চামচে। তা ছাড়া ফেলে দেওয়া জিনিসগুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন আকৃতির এ চামচ বানিয়ে। নারকেল খাওয়ার পর মালাটি কিন্তু আমরা ফেলে দিই। এই ফেলে দেওয়া জিনিসটিকে চমৎকার একটি চামচের আকৃতি দেওয়া যায়। তা ছাড়া ছোট ছোট কাঠের টুকরোও লাগানো যায় কাজে। যাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন আকৃতির বাহারি সব চামচ। কাঁটা চামচ, চা চামচ, ভাজার চামচ, গোল চামচ, নাকড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন আকৃতির তরকারির চামচ পাবেন। এর মধ্যে আয়তাকার, গোলাকার, কাটা বিভিন্ন আকৃতিও দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামীণ ও লোকজ নকশা ফুটে উঠেছে তাতে। আড়ংয়ের বিপণন প্রধান ফারজানা হালিম হাই বলেন, ‘গ্রামের নারীরা নারকেলের মালা দিয়ে নিজে যে চামচগুলো তৈরি করে তাকে বলে অরুন। আমরা তাদের বানানো চামচগুলোই খানিকটা আধুনিক রূপ দিয়ে বিক্রি করছি। এতে গ্রামীণ নারীদের কিছুটা আর্থিক সহায়তাও হচ্ছে। ধাতু কিংবা প্লাস্টিকের একটা রাসায়নিক প্রভাব রয়েছে। এদিক থেকে প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি এ চামচগুলো খুব ভালো। তা ছাড়া ক্রেতারাও খুব পছন্দ করছে।’
কাজের উপযোগী চামচ
আড়ংয়ে কাঠ, বাঁশ, নারকেলের মালার চমৎকার সব নকশার চামচ পাওয়া যাচ্ছে। কাজের ধরন অনুযায়ী চামচের আকৃতিতে এসেছে পরিবর্তন। ভাজার জন্য চ্যাপ্টা ধরনের চামচ, নাড়ার জন্য লম্বাটে, ছাঁকার জন্য ঝাঁঝরি চামচ, চায়ের জন্য চা চামচ, মিষ্টি খেতে কাঁটা চামচসহ বিভিন্ন আকৃতির চামচ পাবেন।
পরিবেশনে চামচ
দেশীয় উপাদানে তৈরি চামচটি কেনার পর পরিবেশনের সময় চামচের সহসজ্জাটাও যেন দেশীয় হয়। কাঠের চামচটি কিন্তু সিরামিকের তৈরি কোনো পাত্রে মানানসই হবে না। অথবা নারকেলের চামচটি মেলামিন বাটিতেও ভালো দেখাবে না। তাই পরিবেশন আকর্ষণীয় করতে মাটির পাত্র বা কাঠের থালা-বাটি ব্যবহার করতে পারেন। মাটির চায়ের কাপের পাশে মাটির চিনিপাত্র আর কাঠের চা চামচটা একটা বাঁশের ট্রেতে সাজিয়ে দিলে রুচিশীলতার চমৎকার প্রকাশ ঘটবে।
জেনে নিন দরদাম
যাত্রা, আড়ং ছাড়াও নিউমার্কেটে ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের দেশীয় চামচটি। নারকেলের মালা ও কাঠের তৈরি ভাতের চামচ ৪০ টাকা, তরকারির চামচ ১২৮, ডালের গর্ত চামচ ১৮৭, ছাঁকনি ৮৮, মাখনের চামচ ৫৯, মাঝারি ৫৯, খুন্তি ৯৮, কাঁটা চামচ ৩৫, চা চামচ ৩৫, ভাজা চামচ ৮৫, নকশা করা খুন্তি ৮৫ টাকা। চামচ সাজানোর জন্য বাঁশের কিংবা কাঠের লম্বাটে পাত্র পাবেন ৬৮-১২০ টাকায়।
শান্তা তাওহিদা
কৃতজ্ঞতা: আড়ং ও যাত্রা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৯, ২০১০
Leave a Reply