বিশেষজ্ঞ এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন এমন চিন্তাবিদগণ (Futurologists) বিশ্বাস করেন যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে আগামী পাঁচ দশকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি সম্ভব। যার ফলে মানুষের জীবন প্রণালী, ,উন্নত সেবা এবং পরিবেশ-বান্ধব দূষণমুক্ত জ্বালানির (Clean energy) নিশ্চয়তা হতে পারে। বিশেষজ্ঞগণ এটাও মনে করেন আগামী ৫০ বছরে বিশ্বের সামনে যে সমস্ত বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে তারমধ্যে বয়সজনিত সমস্যার ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠা, রোগ প্রতিরোধে জিন বা মানব কোষকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে নতুন করে চিন্তা ভাবনা এবং দূষণমুক্ত জ্বালানি (Clean energy) উৎপাদন অন্যতম। বোস্টনে অনুষ্ঠিত আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স (AAAS) এর বার্ষিক সভায় বিশেষজ্ঞগণ এ তথ্য তুলে ধরেন। বিজ্ঞানী, শিল্পোদোক্তা ও চিন্তাবিদদের সমম্বয়ে গঠিত ১৮ সদস্যের একটি শক্তিশালী দলের সদস্যদের সভায় একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয় এবং এতে বলা হয় যদি এসব সমস্যার সমাধান করা যায় তবে বিশ্ব এক নতুন দিগন্তে পা রাখতে পারে। ইউএস ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং (NAE) এ সভার আয়োজন করে। বিশেষজ্ঞদের এই গ্রম্নপে ছিলেন জীববিজ্ঞানী ক্রেইগ ভেন্টার, উদ্ভাবক ডীন ক্যামেন, গুগল কো ফাউন্ডার ল্যারি পেজ এবং হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক ক্যালেসটস জুমা। বিশেষজ্ঞগণ সভায় তাদের উন্নয়ন ভাবনা এবং আগামী শতকের চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন। বিশেষজ্ঞগণের অভিমত, প্রযুক্তির উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অর্থই হলো আগামী অর্ধশতকে মানবকল্যাণ, স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তত ৩০ গুণ অধিকতর উন্নয়ন। একইভাবে বিশেষজ্ঞগণ এটাও মনে করেন প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নব নব অধিকারের দ্বারও উন্মোচিত হতে পারে। আমরা যদি মানব কোষের জিন সম্পর্কে আরও বেশি ধারণা লাভ করতে সক্ষম হই তাহলে জীবনের জন্য প্রয়োজন অনেক ওষুধ, দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন-যাপন করার নানা সুযোগ আসেত পারে। পশাপাশি বিশেষজ্ঞগণ এটাও মনে করেন যোগাযোগ প্রযুক্তি আরো সুলভ ও গতিসম্পন্ন হওয়া দরকার। এতে আমরা আমাদের জীবন প্রণালীর ক্ষেত্রে একটি স্থিতিশীল উপায় খুঁজে পাবো। সভায় ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রম্নপ প্রকৌশল ক্ষেত্রে চারটি চ্যালেঞ্জ সনাক্ত করেন। এসব হচ্ছে, স্থিতিশীল উন্নয়ন স্বাস্থ্য সমস্যা, পশ্চাৎপদতা, বৈচিত্র্যময় এবং মানসম্পন্ন জীবন-যাপন। রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয় ব্যক্তি এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পুরাতন ও নতুন যে ধরনের হুমকি দেখা দিচ্ছে তা মোকাবিলায় আরো কার্যকর ও সহজলভ্য ওষুধের প্রয়োজন। এছাড়া এইডস, সার্স, বার্ডফ্লু, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন প্যান্ডেমিক ডিজিস-এর (এক দেশ থেকে অন্য দেশে সংক্রমণ) ঝুঁকি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রতিরোধে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের ওপরও জোর দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টে দূষণমুক্ত জ্বালানির (Clean energy) প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং এ ক্ষেত্রে সৌরশক্তি পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানির অন্যতম উৎস হতে পারে বলেও অভিমত দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞগণ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সেবায় ব্যবহ্নত কার্যকর ওষুধসমূহ Personalised medicine) উদ্ভাবনের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন। এ ক্ষেত্রে মানব কোষের জিন নিয়ে আরো গবেষণা ও মূল্যায়নের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া উচিত যা মানুষের স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। এছাড়া জেনেটিক প্রযুক্তি ডিএনএ (ডাইরাইবো নিউক্লিকি এসিড) এর স্টান্ডার্ড নির্ধারণসহ বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ গ্রম্নপের অন্যতম রে কারজুয়েল-এর অভিমত, আগামী এক বা দুই দশকের মধ্যে বিজ্ঞান জটিল রোগ-ব্যাধির ক্রমাবনতি এবং বয়সজনিত সমস্যা (এ্যাজিং প্রসেস) অনেকাংশে রোধ করতে সক্ষম হবে যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন লাভের নাটকীয় অগ্রগতি হতে পারে। ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং রোগ নিরূপণ এবং রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে কম্পিউটার প্রযুক্তির দক্ষতা (Computer Intellegence) এর ভূমিকারও প্রশংসা করেন। বিশেষজ্ঞগণ এটাও বলেন কোন চ্যালেঞ্জই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া মোকাবিলা সম্ভব নয়।
——————
ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম, গার্ডিয়ান অবলম্বনে
দৈনিক ইত্তেফাক, ৩১ মে ২০০৮
Leave a Reply