ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে বা পরে আমরা সবাই খুব টেনশন করি। ছোট-বড় সবাইকেই এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে টেনশন-ফ্রি থাকার জন্য জরুরি পরামর্শ। বেশ ক’দিন ধরে বাড়িতে কারফিউ জারি হয়েছেণ্ড রিয়া ও মাহিনের মা এই কারফিউটা জারি করেছেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের আসা-যাওয়া বন্ধ। খবরের সময়টা ছাড়া টিভিও চলছে না। ফোন এলে ফিস-ফিস করে সারা হচ্ছে ফোনের কাজ। গভীর রাত পর্যন্ত বাতি জ্বলতে দেখা যায় রিয়া ও মাহিনের পড়ার ঘরে। কারণ দু’ভাইবোনেরই পরীক্ষা চলছে। আজ এর পরীক্ষা শেষ হয়, কাল ওর পরীক্ষা শুরু। পড়াশোনায় যাতে ব্যঘাত না ঘটে তাই এই কারফিউ। ঘণ্টায় ঘণ্টায় তাদের পড়াশোনা মনিটরিং করা, টিউটরদের সাথে যোগাযোগ রাখা সবই করছে রিয়া-মাহিনের মা। এমতাবস্থায় সারা বাড়িতেই টেনশনের ছাপ। থমথমে পরিবেশ, সারা বাড়িতে ভূতের বাড়ির মতো শীতল আবহাওয়া। মায়ের টেনশনে রিয়া-মাহিনের বাবা’সহ দাদা-দাদিও তটস্থ। আর পাঁচটা মৌসুমের মতো পরীক্ষার সময়টাও জায়গা দখল করে নিয়েছে প্যারেন্টিং ক্যালেন্ডারে। সন্তানদের পরীক্ষার সময়টাতে বর্তমানে এদেশের শিক্ষিত পরিবারের এমন টেনশনে ভোগাটা একপ্রকার ব্যাধির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পরীক্ষার সিজনটা কীভাবে টেনশনমুক্ত হয়ে থাকবেন এবং সন্তানদেরকে ভালো রাখবেন এ ব্যাপারেই আমাদের এই আয়োজন।
পরীক্ষার আগে
০০ সন্তানদের সারা বছর নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন কভার হলে দেখবেন পরীক্ষার আগে আর একদম টেনশন হচ্ছে না। তাই প্রতিদিনের পড়ার সময় নজর রাখুন অন্তত ১ ঘণ্টা যেন তারা মনযোগ দিয়ে পড়ে। এ সময়টাতে ওদের সব ধরনের ডিস্টার্ব, দুঃশ্চিন্তা বা বিনোদন থেকে আগলে রাখুন।
০০ পরীক্ষার মাস দুয়েক আগে মা-বাবা মিলে সন্তাদের প্রবলেম এরিয়াগুলো চিনে নিন। সিলেবাসের সাথে মিলিয়ে দেখুন কোথাও প্রস্তুতির কমতি আছে কিনা? ঠিকমতো রিভিশন হচ্ছে কিনা? কোনোটা একদম তৈরির বাকি আছে কিনা? এভাবে এগিয়ে যান এবং ওর পছন্দমতো রুটিন বানিয়ে পড়াশোনার পরামর্শ দিন। মনিটরিংয়ের পর সাপ্তাহিক পরীক্ষার ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে তাদের গিফট বা প্রাইজের ব্যবস্থা রাখুন।
০০ পড়া এবং লেখার মধ্যে যাতে একটা ব্যালেন্স থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়া ধরা, উত্তর চেক করে দেয়া বা দু’মিনিট বসে কোনো একটা মজার টপিক নিয়ে আলোচনা করলে ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারবে যে আপনি সবসময় ওদের পাশে আছেন।
০০ পরীক্ষা এসে যাচ্ছে বলে বাচ্চাদের অন্যান্য একটিভিটি বন্ধ করবেন না। তার খেলাধুলা, গল্পের বই পড়া, টিভি দেখা সবই চলতে পারে; কিন্তু শুধু পড়ার সময় নাণ্ড এ বিষয়টি তাকে মমতার সাথে বুঝাতে চেষ্টা করুন। এতে আপনিও হাতে সময় পাবেন আর বাচ্চারাও অযথা মানসিক চাপে ভুগবে না।
পরীক্ষার সময়
০০ আপনার টেনশন হলেও বাচ্চাদের বুঝতে দেবেন না। মুখে মুখে পড়া বলে ওদের মনে করতে সাহায্য করুন।
০০ জামা, জুতা, ব্যাগ, পেনসিলবক্সসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস যত্ন করে গুছিয়ে দিন।
০০ পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে বাচ্চাকে ‘বেস্ট অব লাক’ বলতে ভুলবেন না। ও যা পারে তা লিখতে পারলেই যথেষ্ট, তবে উত্তরপত্র একবার অবশ্যই রিভাইজ করার কথা মনে করিয়ে দিন।
০০ পরীক্ষার সময় রাত জাগতে দিবেন না। পরীক্ষার আগের দিন অন্তত ৮ ঘণ্টা টানা ঘুমানো নার্ভকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।
০০ পরীক্ষা হয়ে গেলে প্রশ্নপত্র নিয়ে বেশি কাটাছেঁড়া করবেন না। পরীক্ষা যেমনই হয়ে থাক সে নিয়ে বেশি আলোচনা করা বা পরীক্ষা খারাপ হলে বকাঝকা কিংবা সিন ক্রিয়েট করলে পরের পরীক্ষাতেও নিশ্চিত প্রভাব পড়বে।
রেজাল্ট বেরনোর পরে
০০ রেজাল্টের আগমুহূর্তে নিজেকে এবং বাড়ির পরিবেশ শান্ত রাখুন।
০০ সন্তানদের আশ্বাস দিন, ও যে ফলই করুক আপনি কোনো রকম অসন্তুষ্ট হবেন না।
০০ রেজাল্টের পর বাচ্চা খারাপ করলে সবার সামনে বকা না দিয়ে বাড়িতে সুন্দর সময়ে ওকে নিয়ে বসে বিস্তারিত আলাপ করুন। ওকে বলতে দিন কীভাবে ও আরও ভালো করতে পারে। প্রয়োজনবোধে ওর স্কুল টিচার বা টিউটরদের সঙ্গেও আলোচনা-পরামর্শ করতে পারেন।
০০ রেজাল্ট ভালো হলেও বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবেন না। খুব বড় কিছু গিফট করে সন্তানকে স্পয়েল করা থেকে বিরত রাখুন।
০০ রেস্টুরেন্ট বা ওর পছন্দের কোথাও বসে প্রাণবন্ত আড্ডার মাধ্যমে আগামীতেও ওকে আরও ভালো করার জেদ বা প্রেরণা তৈরি করে দিন।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ০১, ২০১০
Leave a Reply