ঝুম বৃষ্টিতে পানি জমে আছে রাস্তাঘাটে। অথচ অফিস, স্কুল বা বাজারে যাওয়া অথবা অন্য যেকোনো কারণে বাইরে যেতে হবে আপনাকে। পছন্দের চামড়ার স্যান্ডেলটি নিয়ে রাস্তায় নামতে ভরসা পাচ্ছেন না? তাই এ বর্ষায় রাবার বা প্লাস্টিকের তৈরি স্যান্ডেলই ভরসা।
চপ্পলই ফ্যাশন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিহা এসেছেন ঢাকার নিউমার্কেটে স্যান্ডেল কিনতে। তিনি বলেন, ‘আমার তো বর্ষার দিনে রাবারের স্যান্ডেলই পছন্দ। বৃষ্টিতে ভিজলেও কোনো সমস্যা হয় না। বিশেষ করে উজ্জ্বল রঙের স্যান্ডেলই আমার বেশি পছন্দ।’ সঙ্গে আসা বান্ধবী শাকিলা নিজের পায়ের প্লাস্টিকের জুতাটি দেখিয়ে বলেন, বর্ষার কথা মাথায় রেখেই এ জুতা কিনেছি। এতে অনেকগুলো রং থাকায় বিভিন্ন জামার সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারব। আর দাম কিন্তু একেবারেই হাতের নাগালে। বর্ষাজুড়ে এ জুতাই হবে আমার পদসঙ্গী।
কর্মজীবী সাদিয়া ইসলামও পছন্দ করেন রাবারের স্যান্ডেল। তিনি বলেন, এ ধরনের স্যান্ডেল পরতে যেমন আরামদায়ক তেমনি পানিতে এর ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয় না, আবার সাশ্রয়ীও বটে। নিউমার্কেটের জুতার দোকানদার নাজিম ইসলাম বলেন, বর্ষার কারণে রাবার, প্লাস্টিক এবং সিনথেটিকের জুতা-স্যান্ডেলের বিক্রি বেড়ে গেছে। এ জুতা-স্যান্ডেলগুলোর অধিকাংশই আসে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার এবং চীন থেকে। বর্ণিল রং আর সুলভ মূল্যের কারণে এর চাহিদাও বেশি বলে জানান এ বিক্রেতা।
বাটা, অ্যাপেক্স ইত্যাদি ব্র্যান্ড এনেছে নানা চপ্পল। এগুলো দেখতেও বেশ ফ্যাশনেবল।
এবার বলি নন-ব্র্যান্ড জুতা-স্যান্ডেলের কথা। পাথর বা ফুলের নকশা করা প্লাস্টিক এবং রাবারের স্যান্ডেল আপনি পাবেন নিউমার্কেট ও চাঁদনী চকের ফুটপাতে। এ ছাড়া বসুন্ধরা, মেট্রো শপিং মল এবং রাইফেলস স্কয়ারসহ রাজধানীর বেশ কিছু মার্কেটেও পাবেন একই ধরনের জুতা-স্যান্ডেল।
ব্র্যান্ডের স্যান্ডেলগুলোর দাম পড়বে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। সাধারণ স্যান্ডেলের দাম পড়বে ১২০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে।
তরুণদেরও চাই
একটা সময় উঁচু সোলের, সেমি সোলের, পা ঢাকা, বেল্ট বাঁধা চপ্পল দেখা গেছে তরুণদের পায়ে। কিন্তু ফ্যাশনের পরিবর্তনের ধারায় এ সময়ের তরুণেরা বেছে নিচ্ছে হালকা, চিকন ও দুই ফিতার চপ্পল। ঝুম বর্ষা অথবা কাদা, যেখানেই হোক না কেন, মৌসুমটি মাথায় রেখেই কিনতে পারেন চপ্পল। ‘বর্ষা চলে আসায় এ সময় শুধু চপ্পলই বেশি চলছে। আর তাই হরেক রকমের চপ্পল দিয়েই দোকান সাজিয়েছি।’ বলছিলেন মুগদাপাড়ার রহমান শু স্টোরের মালিক মো. ওবায়দুর রহমান। বিশ্বকাপ ফুটবল চলছে আর বাজারে এসেছে বিশ্বকাপে খেলা দেশগুলোর পতাকা ও লোগোসংবলিত চপ্পল। এগুলো দেখতে বাহারি আর বৃষ্টিতেও নষ্ট হওয়ার ভয় নেই বলে জানালেন এলিফ্যান্ট রোডের জুতা ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন।
চপ্পলের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ডিজাইনেও এসেছে বৈচিত্র্য। ছেলেদের হালকা নকশা, জ্যামিতিক নকশা, রাবার সোলে ফিতা পেঁচানো, কাপড়ের ডিজাইন করা ইত্যাদি চপ্পলের কদর বেশি। এ ছাড়া রাবারের চপ্পলও পরতে পারেন বর্ষায়।
কী ধরনের চপ্পল কিনবেন তাই জানাচ্ছেন বাংলাদেশ লেদার টেকনোলজি কলেজের ফুটওয়্যার বিভাগের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ—
চপ্পল কেনার আগে কোন মৌসুমে পরবেন তা মাথায় রাখুন। বর্ষা হলে চামড়ার চপ্পল পরা উচিত নয়।
কৃত্রিম সোলের চপ্পল বেছে নিতে পারেন।
যেহেতু চপ্পল পরলে পায়ের বেশির ভাগ বাইরে থাকে, তাই যেন পায়ে কাদা-পানি না লাগে খেয়াল রাখুন। লাগলে পরিষ্কার করে নিন।
অবশ্যই এমন সোলের চপ্পল পরা উচিত নয়, যাতে আপনার হাঁটার সময় কাদা-পানি ছিটে কাপড় নোংরা হয়।
এই সময়ের কাদা-পানিতে থাকে জীবাণু, তাই পায়ে লাগলে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। না হলে পায়ে ঘা-পাঁচড়া বা ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে।
কিনবেন কোথায়
ঢাকার প্রায় সব জুতার দোকানেই চপ্পল পাওয়া যায়। নিউমার্কেটে চপ্পল কিনতে আসা ঢাকা কলেজের ছাত্র রেইন বলেন, ‘এখানে অনেক চপ্পল থাকায় নিজের পছন্দমতো কিনতে পারি, আর দামও থাকে আমার নাগালের মধ্যে।’ এ ছাড়া এলিফ্যান্ট রোড, গুলিস্তান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ছাড়াও কিনতে পারেন আপনার কাছের বিপণিবিতান থেকে।
দরদাম
বিভিন্ন ধরনের চপ্পলের বিভিন্ন দাম। নকশা ও মানের ওপর ভিত্তি করে ১৫০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তাই আজই কিনে ফেলুন কাদা-পানি জয় করতে আপনার চপ্পল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২২, ২০১০
Leave a Reply