ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বড় পর্দায় খেলা দেখছে কবির, রেজা, তুফান। প্রিয় দলটি প্রতিপক্ষকে বারবার ধাওয়া করেও গোল করতে পারছে না। প্রতি মুহূর্তেই প্রবল উৎকণ্ঠা। পলকহীন চোখ। এর মধ্যেই কানের কাছে এসে আরেকজন ভদ্রলোক অনর্গল চেঁচিয়ে কথা বলছেন মুঠোফোনে। ওরা চোখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে তাকাচ্ছে লোকটার দিকে। অথচ সেদিকে লোকটার কোনো খেয়াল নেই। শেষে উপায় না দেখে স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হলো ওরা।
মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে এসেছেন চিকিৎসক শফিউল আলম ও তাঁর স্ত্রী। তাঁদের পাশেই খেলা দেখছেন আরেক দল যুবক। খেলার মধ্য তাঁরা এমন সব কথাবার্তা বলছেন যে, শফিউল আলম ও তাঁর স্ত্রী অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন।
‘আসলে বাসায় টিভি থাকলেও প্রিয় দলের খেলা দেখতে বড় পর্দায় অনেক মানুষের মধ্য মজাই আলাদা। তাই খেলা দেখতে এসে আমাদের এমন কোনো কাজ বা কথা বলা উচিত নয়, যাতে অন্য লোকটি বিব্রত হন।’ বলছিলেন, শফিউল আলম। ‘সত্যিই তাই। বিশ্বকাপের এ সময়ে সারা বিশ্ব মেতে ওঠে এই মহাযজ্ঞে। আর তাই উৎসবের মাধ্যমে খেলা উপভোগ করে সবাই। বিভিন্ন সময় আমরা ব্যক্তিগতভাবে খেলা না দেখে দলবদ্ধ হয়ে খেলা দেখে আলাদা মজা পাই। যেহেতু দলবদ্ধ মানে অনেক মানুষের সমাগম, তাই সেখানে খেলা উপভোগ করতে গিয়ে এমন কোনো আচরণ বা কাজ করা উচিত নয়, যাতে অন্য লোকটি আমার সম্বন্ধে খারাপ ধারণা পোষণ করে।’ কথাগুলো যুক্ত করলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষিকা সুনন্দা সাহা। চাকরিজীবী সেলিমের বাসায় খেলা দেখতে এসেছেন তাঁর সহকর্মীরা। খেলা দেখতে দেখতে সারা রুমে বিছানা এলোমেলো করে সোফার কুশনগুলো এদিক-ওদিক ছুড়ে মেরে, নানা ধরনের ফল ও পানীয় খেয়ে সারা ঘর নোংরা করে মাঝ রাতে ফিরে গেল।
কারাও বাসায় খেলা দেখতে হলে এদিকগুলো অত্যন্ত যত্ন সহকারে খেয়াল রাখা উচিত, যাতে বাসার মালিক বিরক্ত না হন। সুনন্দা সাহার মতে খেলা দেখতে হলে—
কারও বাসায় খেলা দেখতে হলে ভদ্রতা বজায় রেখে খেলা দেখা উচিত।
বিরক্ত না করে সবাই মিলে টাকা দিয়ে খাবার কিনে এনে এবং তা খেয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা দরকার।
বাসায় কোনো রোগী, পরীক্ষার্থী বা বৃদ্ধ আছে কি না, জেনে নিন। থাকলে টিভির শব্দ কম রাখা এবং অযথা উচ্চস্বরে চিৎকার না করা।
খেলা দেখতে গিয়ে অন্য দলের সমর্থককে এমন কথা না বলা, যাতে সে মনে কষ্ট পায়। কাউকে আক্রমণাত্মক কথা না বলা।
বিপুল লোক সমাগম হয়েছে—এমন জায়গায় খেলা দেখার সময় নিজের মোবাইল ফোনের রিংটোন বন্ধ রাখা। ফোন এলে উঠে গিয়ে নিচু গলায় কথা বলা।
সামনের দিকে দাঁড়িয়ে পেছনের লোকের সমস্যা না করে বসে পড়া।
নিজের অনিচ্ছাকৃত ভুলে অন্যে কষ্ট পেলে দুঃখ প্রকাশ করা।
অযথা চিৎকার না করে শান্ত থাকা।
বিদ্যুতের অপচয় না করা।
দলের বিজয়ে আত্মহারা হয়ে নিজের জিনিসপত্র ফেলে না এসে গুছিয়ে নেওয়া। সর্বোপরি নিজের পরিমিতিবোধ ও সহনশীলতা বজায় রেখে খেলা দেখা।
হাসান ইমাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২২, ২০১০
Leave a Reply