‘বাচ্চাটাকে নিয়ে কী যে করি! সুযোগ পেলেই টিভি দেখতে বসে যায়। ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর পড়াশোনা করতে পারে না।’ এমন অভিযোগ অনেক মা-বাবারই। আবার শিশু একদমই টেলিভিশন দেখবে না, তাও তো হয় না। শহরকেন্দ্রিক জীবন যাপনে ওদের বিনোদনের বড় মাধ্যম টেলিভিশন। এটি পুরোপুরি ওদের দোষ নয়। এমনই মনে করেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশুবর্ধন ও পরিচর্যা বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদা বেগম। তাঁর মতে, শিশুদের টেলিভিশন দেখতে দিতেই হবে। তবে তারও একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকবে। প্রতিদিন কিছুটা সময় টিভি সে দেখতেই পারে। এতে নেশা হয়ে যায় না। অনেক শিশুই স্কুল থেকে ফিরে টিভি দেখে। এটি নিয়েও মায়েরা রাগারাগি করেন। এ জন্য সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে। গোসল করে খাবার খেতে খেতেও টিভি দেখতে পারবে। তারপর সে বিশ্রাম নিতে যাবে। এর জন্য অভিভাবককে কৌশলী হতে হবে। বকা দিলে, সব সময় না বললে ওদের জেদ হতে পারে। তখন লুকিয়ে টিভি দেখতে আগ্রহী হবে। পড়াশোনায় মনোযোগী হবে না। শিশুরা সাধারণত কার্টুন দেখতে পছন্দ করে। সব কার্টুন ওরা দেখে না। পছন্দেরটাই দেখতে চায়। তার বাড়ির কাজ, পড়াশোনা শেষ করলেই সেটি দেখতে পাবে—এমন কথা দিন তাকে। দেখবেন সন্তান দ্রুত পড়া শেষ করেছে। তখন আপনিও কথা রাখবেন। অনেক সময় অভিভাবকেরা বললেও টেলিভিশন দেখার সময় আপত্তি তোলেন। এতে সন্তানেরা কষ্ট পায়, মা-বাবাকে বিশ্বাস করতে চায় না। টিভি থেকে বিরত রাখতে হলে ওকে খেলতে দিতে হবে। সময়মতো সবকিছু করার অভ্যাস তৈরি করুন। দেখবেন ও নিজেই নিয়মমতো চলছে। এমনকি অতিরিক্ত টিভিও দেখছে না।
শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য বিনোদন জরুরি। তবে এটি যেন টিভিকেন্দ্রিক হয়ে না পড়ে। বললেন আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দীদার চৌধুরী। সারা দিনের সময়টাকে নিজের মতো করে ভাগ করে নিতে হবে। অভিভাবকেরাও সন্তানের সঙ্গে কথা বলে এটি তৈরি করতে পারেন। এতে সন্তানের মতামত প্রকাশ পাবে। সেখানে টিভি দেখার সময়টা অন্তর্ভুক্ত করে দিতে হবে। টিভি দেখা অভ্যাসের বিষয়। চাইলে সারা দিনও দেখা যেতে পারে। সে কারণে সন্তানকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট বিষয় দেখতে দিন। সে যেন তার উপযোগী অনুষ্ঠান দেখে। অনেক সময় তারা প্রাপ্তবয়স্কদের অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করে। রাগ না হয়ে পুরো বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এ ছাড়া একনাগাড়ে অনেকক্ষণ টিভি দেখলে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পড়ার প্রতি শিশুটি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তার অসময়ে ঘুম পায়। আধা ঘণ্টার বেশি একনাগাড়ে টিভি দেখা উচিত নয়। অভিভাবককে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সন্তানকে সময় দিতে হবে। ছুটির দিনগুলোতে তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারেন। সন্তানের গল্পের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন। দেখবেন, সে টিভি দেখার নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। স্কুল থেকেও এমনটি করা যেতে পারে। শিক্ষকেরা উদ্যোগী হয়ে সপ্তাহে একদিন শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির কাছে, দর্শনীয় কোনো ঐতিহাসিক স্থানে নিয়ে যেতে পারেন। এতেও শিশুদের একঘেঁয়েমি কাটবে। তারা পড়াশোনায় উৎসাহ পাবে। টিভি দেখবে। কিন্তু নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে না।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২২, ২০১০
Leave a Reply