যেকোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু ও সেটা পরিচালনা করতে হলে নিতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় যেকোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনা করতে চাইলে আপনাকে ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে এ সংক্রান্ত লাইসেন্স (ট্রেড লাইসেন্স) নিতে হবে। জেনে নিন এর পদ্ধতি।
ট্রেড লাইসেন্স কেন
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজীব উল আলম বলেন, ‘১৯৮৬ সালের মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন ট্যাক্সেশন বিধিমালার ৪৪(১) বিধি অনুসারে সিটি করপোরেশন এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। যদি কেউ তা না নিয়ে ব্যবসা করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। মামলায় তাঁর জেল-জরিমানার বিধান আছে।’ শুধু যে আইনি বাধ্যবাধকতার জন্যই আপনাকে লাইসেন্স নিতে হবে, তা নয়। একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নানা কাজে লাগে এই ট্রেড লাইসেন্স। যেমন, ব্যাংক ঋণ নিতে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব খুলতে, ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে ব্যবসায়ীর বিদেশে যেতে ইত্যাদি কাজে ট্রেড লাইসেন্স অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে এটা সিটি করপোরেশনের জন্য একটা রাজস্ব খাত।
আবেদন ফরম সংগ্রহ
যদি আপনার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স করতে চান, তবে একটি নির্ধারিত ফরম ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এখানে আপনি দুটি ভিন্ন ধরনের ফরম পাবেন, যেগুলো ‘আই ফরম’ ও ‘কে ফরম’ নামে চিহ্নিত। প্রতিটি ফরমের দাম ১০ টাকা। আপনার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি ছোট বা সাধারণ হয়, তবে ‘ফরম আই’ আর বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে ‘ফরম কে’ নিতে হবে।
আবেদন ফরম পূরণ
উভয় ফরমে ১২টি প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। দরখাস্তকারীর নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, মায়ের নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কারখানা অথবা কোম্পানির নাম ও ঠিকানা, ব্যবসা আরম্ভ করার তারিখ, ব্যবসার ধরন, অনুমোদিত বা পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ (লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য), ব্যবসার স্থান নিজের বা ভাড়ায় এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডের বিবরণ। এসব বিষয়ে নির্ভুল তথ্য দিয়ে শূন্যস্থান বা খালিঘর পূরণ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদনের সঙ্গে আপনাকে নিম্নোক্ত ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হবে, ১. প্রতিষ্ঠান, কারখানা বা কোম্পানি লিমিটেড হলে মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস, ২. প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠান, কারখানা বা কোম্পানির পাশের অবস্থান বা স্থাপনার বিবরণসহ নকশা ও তার মালিকের অনাপত্তিনামা। কারখানা/সিএনজি স্টেশন/দাহ্য পদার্থের ব্যবসার ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তর/ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র/অনুমতিপত্র, ৪. দরখাস্তকারীর তিন কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, ৫. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ১৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা, ৬. প্রতিষ্ঠান প্রেস/পত্রিকা হলে ডিক্লারেশন ও ৭. ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্থানটি নিজের হলে সিটি করপোরেশনের হালনাগাদ ট্যাক্সের রসিদ এবং ভাড়ায় হলে ভাড়ার চুক্তিপত্র/রসিদ।
খরচ
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দরখাস্তটি আপনার ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন এলাকার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর কর্মকর্তা বরাবর জমা দিতে হবে। তবে এর সঙ্গে অবশ্যই নির্ধারিত ফি, যা ব্যবসার ধরনের ওপর নির্ভর করবে। ওই পরিমাণ টাকা সংশ্লিষ্ট অফিসে রসিদের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা উপসচিব মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আদর্শ কর তফসিল অনুযায়ী এই ফি ন্যূনতম ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আকার বা ধরন অনুযায়ী এই ফি ধার্য হবে।’
ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ
আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা আবেদনে দেওয়া তথ্যাদি প্রাথমিক তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে আবেদনের তিন দিনের মধ্যে আবেদনকারী তাঁর ট্রেড লাইসেন্স হাতে পেতে পারেন। লাইসেন্সটি সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন
আদর্শ কর তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কমবেশি ১৩৩টি শ্রেণীতে ভাগ করে এর ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারিত হয়েছে। প্রতিবছর একই পরিমাণ ফি দিয়ে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্সটি নবায়ন করতে হবে। নবায়ন করার ক্ষেত্রে আপনি জনতা ব্যাংকের ৪০টি শাখার যেকোনোটিতে টাকা জমা দিয়ে তা করতে পারেন।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়
আপনি যদি আপনার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স করতে চান, তাহলে আপনার এলাকার সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। প্রয়োজনে আপনি সরাসরি আঞ্চলিক কর কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের দশটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের অবস্থান ও কর কর্মকর্তার দপ্তরের টেলিফোন নম্বর: অঞ্চল-১ (সায়েদাবাদ)-৭৫১০১১৭, অঞ্চল-২ (নগর ভবন ১৩ তলা)-৯৫৬৪৯০৪, অঞ্চল-৩ (আজিমপুর)-৮৬২৬১৭৭, অঞ্চল-৪ (খিলগাঁও)-৭২১১৭০৬, অঞ্চল-৫ (নগর ভবন ১০ম তলা)-৯৫৫০৭৯০, অঞ্চল-৬ (কারওয়ান বাজার)- ৯১২২৯৭৪, অঞ্চল-৭ (মোহাম্মদপুর)-৯০০২৬৫২, অঞ্চল-৮ (মিরপুর)-৯০০২৬৫৫, অঞ্চল-৯ (গুলশান)-৯৮৯৬৫২১, অঞ্চল-১০ (উত্তরা)-৮৯১৬৯৭৭।
ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার ভেতরে নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শুরু করতে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স করে নিন। তবে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে একশ্রেণীর দালাল সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে টাকা নিয়ে আপনাকে প্রতারিত করতে পারে। তাই এসব প্রতারক থেকে সাবধান থাকতে হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৮, ২০১০
শাখাওয়াত হামিদ
অনলিইন শপিং এর জন কি করতে হবে