এই মেঘ এই রোদ। কোনো অনুষ্ঠানে গেছেন। সেখানে সবাই ধোপদুরস্ত। আপনারই কেবল কাকভেজা অবস্থা। পাঁচ মিনিটের একপশলা বৃষ্টিতেই যে এই অবস্থা, তা আর কে বুঝবে। সাজগোজ করে বাইরে বেরিয়ে হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটায় পুরোটাই মাটি। পোশাক তো ভিজলই, মেজাজটা যে বিগড়াল, সে ক্ষতির তো আর কোনো হিসাব নেই। আবার মেঘলা দিনে ঘরে বসে থাকলে কি আর চলে। উপায় তো অবশ্যই আছে। সাজপোশাকটাই একটু ভেবেচিন্তে করা, যাতে বৃষ্টির বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। বেছে নিন এমন কাপড়, যাতে বৃষ্টিতে একটু ভিজলেও আপনি থাকবেন দিব্যি ফিটফাট।
গরমে আরামের কাপড় সুতি। কিন্তু বৃষ্টির দিনে সুতির আরাম ভুলে জর্জেট, শিফনসহ অন্যান্য কৃত্রিম তন্তুর তৈরি কাপড়গুলো পরাই ভালো।
ভিজে গেলে এই কাপড়গুলোর ক্ষতি তেমন হয় না। একটুখানি বাতাসে বা রোদে শুকিয়ে নিলেই একদম আগের মতোই হয়ে যায়। ভেজা দিনের বসন বলতে তাই জর্জেট, শিফন।
ফ্যাশন ডিজাইনার তৌহিদা তহু বলেন, এই সময়ে হঠাৎ বৃষ্টি তো হয়-ই, গরমটাও কিন্তু কমে না। এই দুই ব্যাপার মাথায় রেখেই তাই পোশাক নির্বাচন করা উচিত। শাড়ি পরুন আর সালোয়ার-কামিজ। এ জন্য জর্জেট, শিফনের বিকল্প নেই। এসব কাপড় পাতলা। তাই দ্রুত শুকায় আর গরমেও কষ্ট হয় না।
চাঁদনী চকসহ অন্যান্য কাপড়ের বাজারে গজ হিসেবে নানা নকশার জর্জেট কাপড় পাওয়া যায়। দাম ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা প্রতি গজ। তৌহিদা তহু জানান, এই কাপড়গুলো মূলত বিদেশে তৈরি। দেশে তৈরি জর্জেট কাপড়ের মান তেমন ভালো নয়। সপুরা সিল্ক, দোয়েল সিল্কের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য জর্জেট কাপড় তৈরি করছে। এগুলো দেখতে দারুণ। পার্টিতে পরে যাওয়ার জন্য মানানসই। বৃষ্টিতে ভিজলেও ক্ষতি নেই। সালোয়ার-কামিজ যেমন তৈরি করাতে পারেন, তেমনি শাড়ি হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। দামটা একটু বেশি, ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা গজ।
তৌহিদা তহু আরও জানান, অ্যান্ডি সিল্ক কাপড়টাও এ মৌসুমে পরার উপযোগী। এ ধরনের কাপড়ে সিল্কের ভাগটাই বেশি। তাই বেশ জমকালো দেখায়। দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো এই কাপড় দিয়ে প্রচুর পোশাক তৈরি করছে। একটু ভারী কাজ করা অ্যান্ডি সিল্কের পোশাক নিশ্চিন্তে পরতে পারেন যেকোনো পার্টিতে। আবার সাদামাটা কাজের পোশাকগুলো পরা যাবে নিত্যদিনের ব্যবহারে। তৈরি পোশাক তো পাবেনই। সিল্কের কাপড়ের দোকানগুলোয় গজ হিসেবেও পাবেন। মসলিন কাপড়টাও এই সময়ে বেশ উপযোগী। অ্যান্ডি সিল্কের সালোয়ার-কামিজ আর মসলিনের ওড়না—এই ঋতুতে এমন পোশাক বেশ কাজের। এ ছাড়া মসলিন শাড়িও পরতে পারেন।
চোষা সিল্কও বৃষ্টিতে ভিজলে তেমন ক্ষতি হয় না। তবে এই কাপড় পরলে বেশ গরম লাগে। দেশি বলাকা সিল্কের পোশাকও এই সময়ে পরবার উপযোগী নয়।
এই ঋতুতে জর্জেট বা শিফন শাড়ি পরলে ব্লাউজ পরতে পারেন সুতি অথবা ভয়েল কাপড়ের। কাপড়ের রং নির্বাচন করুন আবহাওয়া বুঝে। সাদা কাপড় যেমন বৃষ্টির দিনে মানানসই নয়, কালো কাপড়ও তেমনি পরা উচিত নয়। কারণ, কালো কাপড় ভিজে গেলে ছোপ ছোপ দাগ হতে পারে। যেকোনো উজ্জ্বল রং বেছে নিতে পারেন। যেমন: ফিরোজা, লেবু, হলুদ, গোলাপি, লাল, কমলা ইত্যাদি। তবে খুব হালকা বা খুব গাঢ় রংগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ, মেঘলা দিনে প্রকৃতি ম্রিয়মাণ থাকে। এই সময় আপনার পোশাকেই থাকা চাই রঙের বাহার।
এই সময়ে কামিজ পরুন একটু খাটো, কাদায় ময়লা হওয়ার আশঙ্কা যাতে না থাকে। আর সালোয়ারও আঁটসাঁট হওয়া চাই।
পোশাক কেমন পরা চাই, তা তো জানলেনই। ছাতাকে সঙ্গী করে তাই বেরিয়ে পড়ুন নিশ্চিন্তে। কুকুর-বিড়াল বা ইলশেগুঁড়ি যেমনই হোক, বৃষ্টির ছাঁট আপনার সাজপোশাক নষ্ট করতে পারবে না একদমই।
রুহিনা তাসকিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০১০
Leave a Reply