পায়ের ওপর ভর দিয়েই আমাদের প্রতি দিনের পথচলা। তাই সারা বছরই দুখানি পায়ের চাই বাড়তি পরিচর্যা।
রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, ‘গ্রীষ্মের শেষের এ সময়টায় প্রকৃতিতে ধুলাবালির যেমন রাজত্ব, তেমনি হঠাৎ আকাশ ভেঙে নামা বৃষ্টির পানি আর কাদারও সমান উৎপাত। তাই এ সময় পা সুন্দর রাখতে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বের করে নিন খানিকটা সময়।
পায়ের পরিচ্ছন্নতায়
রাহিমা সুলতানা গুরুত্ব দেন পায়ের পরিচ্ছন্নতার দিকে। নোংরা পানি, কাদা আর ধুলাবালি তো পথ চললে পায়ে লাগবেই। কিন্তু সঠিকভাবে পা পরিষ্কার করে এদের বিদায় আপনাকেই করতে হবে। পথ চলতে যতটা সম্ভব এদের বাঁচিয়ে চলতে চেষ্টা করুন, আর যদি কবলে পড়েই যান কী করা? যত দ্রুত সম্ভব পা দুটি ধুয়ে নিন। যদি রাস্তায় সে ব্যবস্থা না থাকে, টিস্যু দিয়ে পা আপাতত মুছে নিন। মনে করে ব্যাগে ভেজা টিস্যু (ওয়েট টিস্যু) রেখে দেবেন। পা ধোয়ার সময় গোড়ালি, নখের কোনা, আঙুলের ফাঁক এসব স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
দিনের শেষে ঘুমের আগে
কর্মব্যস্ত আপনি বাড়ি ফিরে একটু পানি গরম করে নিন। প্রয়োজনীয় ফোন সারা অথবা বাচ্চাকে পড়ানোর সময় পা দুটি গরম পানিতে খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এতে আপনার সারা দিনের ক্লান্তি যেমন দূর হবে, পাশাপাশি দূর হবে সারা দিনের পায়ে লাগা ধুলাবালি আর ময়লা। ঝামা পাথর দিয়ে গোড়ালি হালকা ঘষেও নিতে পারেন। তার পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
সপ্তাহে অন্তত একদিন
পায়ের পরিচ্ছন্নতা অবশ্যই প্রতিদিন জরুরি। তবে সে জন্য যদি রোজ সময় না মেলে, তবে সপ্তাহে এক দিন অন্তত সময় বের করে নিন। সময় থাকলে কোনো পার্লারে গিয়ে করিয়ে নিতে পারেন পেডিকিউর। অথবা নিজেই ঘরে বসে করে নিতে পারেন। একটি বড় গামলায় হালকা কুসুম গরম পানিতে শ্যাম্পুর ফেনা তুলে নিন। তাতে এক চিমটি লবণ ও কিছু কমলার খোসা ছেড়ে দিন। ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন পা। তারপর ঝামা পাথর দিয়ে হালকা ঘষে মরা চামড়া ও ময়লা দূর করুন। নখের কোনার ময়লা সরু কোনো কিছু দিয়ে বের করে নিন। নখও সুন্দর আকারে কেটে নিন। তারপর ভালোভাবে মুছে ভ্যাসলিন বা ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম অথবা লোশন লাগিয়ে নিন।
সমস্যা সমাধানের দাওয়া
রোদে পোড়া কালো দাগ, ঘেমে পায়ে দুর্গন্ধ অথবা ছত্রাকের সংক্রমণ এসব কিছুর সমাধানে রাহিমা সুলতানা দিয়েছেন সহজ কিছু দাওয়া।
টক দই, লেবুর রস মিশিয়ে পায়ে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
আনারসের রস পায়ে লাগিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি খুব ভালো ছত্রাক সংক্রমণরোধী হিসেবে কাজ করে।
কালো দাগ দূর করতে চালের গুঁড়া, মধু, লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে লাগান।
লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে পায়ের গোড়ালি ও আঙুলের ফাঁকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করলে পায়ের দুর্গন্ধ কম হয়।
গোলাপজল, গ্লিসারিন, নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন পায়ের ময়েশ্চারাইজার।
বাইরে বেরোনোর আগে
ধুলাবালি আর কাদা পানির ভয়ে তো আর ঘরে বসে থাকা চলবে না। বরং বাইরে বের হওয়ার আগে একটু প্রস্তুতি নিয়ে নিন। রাহিমা সুলতানা পরামর্শ দেন সামনের দিকে বন্ধ জুতা পরার। এতে ধুলাবালি কম লাগবে। তবে খেয়াল রাখুন, পায়ে যেন বাতাস ঠিকমতো চলাচল করতে পারে, কারণ গরম এখনো কমেনি। ঘামের সমস্যা বেশি হলে খোলা জুতা পরুন। তবে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন লাগাতে ভুলবেন না। তার সঙ্গে আঙুলের ফাঁকে পাউডার দিয়ে নিন। পা দুটি আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইলে একটু সাজিয়েও নিতে পারেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে উজ্জ্বল রঙের নেইল পলিশ, এক পায়ে একটি নূপুর অথবা দুটি আংটিতে কিন্তু বেশ ভালোই মানিয়ে যাবে আপনার পদযুগল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০১০
Leave a Reply