জীবনের আনন্দ বেদনার অন্যতম প্রিয় সঙ্গী যেজন তার কাছেই তো মানুষ প্রত্যাশা করে সহযোগিতার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র। প্রতিদিনের জীবন যাপনের সম্পর্কের সুতোয় ধরে তাই স্বামী যেমন স্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা করে তেমনি স্ত্রী স্বামীর কাছে প্রত্যাশা করে জীবনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা। প্রত্যাশার সেই মাত্রায় পূর্ণতা পেলেই সূচিত হয় সুখের জীবন। তাই নিয়ে লিখেছেন লিমন আহমেদ
‘চলছে সময় ছুটে হন্তদন্ত, সময় যেন এক দম দেয়া যন্ত্র, এতসব ব্যস্ততা ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত, সময়টা থমকে দাঁড়ায়ঃ’ বেশ কিছুদিন আগে প্রচারিত এই বিজ্ঞাপনী গানটার মতোই যেন ব্যস্ততায় নাভিশ্বাস উঠছে আজকের দিনের করপোরেট দম্পতিদের। এরা দিনমান যেমন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাদের কর্মক্ষেত্রে, তেমনই বাড়িতে একে অন্যের সান্নিধ্যে সময় কাটানোটাও যেন এদের কাছে হয়ে উঠছে রুটিন মেনে চলার মতোই। আর ছকে বাঁধা এই জীবন-যাপনই ক্রমে ক্রমে দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে। আর তাই আধুনিক সময়ের এসব ব্যস্ত মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা এখন বারংবার জোর দিচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী’র বোঝাপড়ায় আন্তরিকতার অনুষঙ্গ যোগ করায়।
প্রায়ই দেখা যায় যে, ব্যস্ততার সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্যই অনেক দম্পতি তাদের প্রতিদিনের কাজগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। হয়তো একজন সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তো অন্যজনের মনোযোগ তখন কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে ঘর-গেরস্থালীর কাজে। তবে এভাবে কাজের ভাগাভাগির কারণে প্রতিদিনের কাজ আয়েশে শেষ হলেও স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যকার দূরত্বটা আরো বেড়ে যায়। তাই এভাবে কাজ ভাগাভাগি করে নেয়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝে দু’জন মিলে একটি কাজ করুন। এর ফলে কাজের সুবাদে নিজেদের মধ্যকার যোগাযোগটা যেমন বাড়বে তেমনি গড়ে উঠবে একটি সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতাও।
প্রতিদিনের জীবন যতই ছকে বাঁধা হোক না কেন, মাঝে মাঝে এই ছকের বাইরে বেরিয়ে এসে সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে চমকে দেয়ার চেষ্টা করুন। তবে এই চমকে দেয়ার মানেটা যেন বাইরে ঘুরতে যাওয়া বা দু’জন মিলে কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার মতো কেতাবী বিষয়ে আটকে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন। উদহারণস্বরূপ, দিনের একটা সময় বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দু’জনে মিলে অনেকক্ষণ গান শুনে, গল্প করে বা মুভি দেখেও কিন্তু সময়টাকে উপভোগ করা যেতে পারে।
স্বামী-স্ত্রী দু’জন দুই ভুবনের দুই বিচ্ছিন্ন বাসিন্দা না হয়ে নিজেদের মধ্যকার যোগাযোগটা আরো বাড়িয়ে তুলুন। এজন্য স্ত্রী’র কলিগ বা বন্ধুদের সাথে যেমন স্বামীর একটা যোগাযোগ থাকা চাই তেমনি স্বামী’র চেনা পরিমণ্ডলেও থাকা চাই স্ত্রী’র বিশুদ্ধ অনুপ্রবেশ। তবে এই অনুপ্রবেশটি যেন অনধিকার প্রবেশের মতো না দেখায় সেদিকে সচেতন থাকতে হবে দু’জনকেই। বিশেষ করে সম্পর্কের মাঝে যেন একটু শ্বাস নেয়ার জায়গা থাকে সেই স্বচ্ছন্দটুকু দু’জনই দু’জনকে দিতে হবে। এ কারণে স্বামী যদি তার মিলে যাওয়া অবসরে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে চান কিংবা স্ত্রী যদি চান একটু সুযোগ করে ফোনে প্রিয়জনদের সাথে খানিকটা আলাপচারিতা করতে তাহলে তাকে অন্যায় বাধা না দিয়ে অতটুকু ছাড় দিতেই হবে। আর এভাবে পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ আচরণই দাম্পত্য সম্পর্ককে আরে সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
মডেল বিজরী বরকতউল্লাহ ও শওকত আলী ইমন
ছবি সাফাওয়াত খান সাফু কৃতজ্ঞতায় রঙ
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মে ২৫, ২০১০
Leave a Reply