জীবনের নানা গতিপথে কতই না পথচলা। ক্লান্তির হাত ধরে ঘন্টা মিনিটের এই সময়ে নিজের প্রাণস্পন্দন গতিশীল রাখতে আমাদের প্রয়োজন পানি। কিন্তু সেই পানিরও আছে নানা প্রকারভেদ। জীবনরক্ষাকারী এই উপাদান হতে পারে চরম সর্বনাশাও। পানির প্রয়োজনীয় গুণাবলী নিয়ে লিখেছেন তামান্না শারমীন
একটা সময় ছিল যখন বলা হতো পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু এখন এর আগে জুড়ে দেয়া হচ্ছে বাড়তি একটা লেজুড়। বলা হচ্ছে শুধু পানি নয়, বরং নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন। এই নিরাপদ পানির জন্যই হলিউডের তারকা হিলারী সোয়াঙ্ক রীতিমতো আয়োজন করে আন্দোলনে নামছেন। পার্শ্ববর্তী দেশে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন নিয়ে তোড়জোড় করছেন অরুন্ধতী রায় আর টাবু-আমীরের মতো নামজাদা লোকেরা। এমনকি খোদ আমাদের দেশে বুড়িগঙ্গা বাঁচাবার যে আন্দোলন সেটাও তো এই নিরাপদ পানির ভাবনা থেকেই। তা দেশ-বিদেশের এতোসব বড় বড় বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবার মতো সময় আপনার নাই থাকতে পারে। তাই বলে নিজের শরীরের কথাটাও কি একবার ভাববেন না? অন্য দশটা খাবারের মতো পানির বাড়তি স্বাদ নেই। তাই আয়োজন করে পানি খাবার চিন্তাটাও কেউ করেন না। এদিকে আপনার আয়েশী ঢঙের পানি পানে শরীরের কিন্তু বারোটা বাজবার জোগাড়। বিশ্বের তাবত শরীর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে আপনার আমার কানে ঢোকাতে চাইছেন দৈনিক আট গ্লাস বিশুদ্ধ পানির কথা। মিডিয়া’র কল্যাণে বিষয়টা আমাদের কানে দিব্যি পৌঁছাচ্ছেও। তবে কানে কথা ঢুকলেও, মাথায় ঢুকছে না। তা বিশ্বাস না হলে আপনিই হিসেব করে দেখুন না আজ ক’ গ্লাস পানি খেলেন।
পানির বহু গুনাগুন হয়তো আগে থেকেই আপনার জানা। তবে সেই সাথে যদি আরো কিছু যোগ করতে চান তবে বলি- ইঞ্জিনের জন্য যেমন লুব্রিকেন্ট চাই তেমনি আমাদের শরীরের জন্যও চাই পানি। আবার এই যে কথায় কথায় রক্ত-মাংসের মানুষ বলে দিব্যি চেঁচাচ্ছেন, সেই রক্ত আর মাংসের একটি প্রধান উপাদানও কিন্তু এই পানি। এমনকি পানি আছে আপনার প্রতিটি হাড়ে হাড়ে। অর্থাৎ যে অস্থিমজ্জা দিয়ে তৈরি আপনার হাড়ের জোড়া সেখানেও আছে পানি। বিষয়টা আরেকটু খোলাসা করে জানতে চাইলে ঝটপট জেনে নিন ণ্ড মস্তিস্কের ৯৫ ভাগ, রক্তের ৮২ ভাগ, ফুসফুসের ৯০ ভাগ আর শরীরের মোট ওজনের প্রায় ৬৫ ভাগই হলো পানি। শরীরের এই মোট পানির ২ ভাগও যদি কমতি পড়ে তাহলে দেখা দিতে পারে ডিহাইড্রেশন। তা আপনার জীবনে পানির এতো শতো অবদানের কথা জেনেও যদি পানি পানে মনোযোগী না হন তবে নতুন করে কি-ই বা বলতে পারি আমরা।
জ্ঞান দেয়া সহজ – পালন করা কঠিন। এ কথাতো সবারই ঢের জানা। কিন্তু নিয়ম মেনে দৈনিক আট গ্লাস পানি খাবার বুদ্ধিটাই বা কি ? পানির অপর নাম জীবন – এ কথা যারা জানেন, পানি খাবার বহু বুদ্ধিও বাতলে দিয়েছেন তারা। এরমধ্যে সবচেয়ে সহজ বুদ্ধিটা হলো বাসা কিংবা অফিসে একটি ফ্লাস্কে সম্ভব হলে আটগ্লাস পানি মেপে নেয়া। ব্যস, এরপর এই পানিটুকু শেষ করবার টার্গেট নিয়ে এগুলেই চলবে। যাদের অফিস বা কর্মস্থলে নিরাপদ পানির সংস্থান নেই তাদেরকে প্রয়োজনে তথাকথিত স্মার্টনেসের কথা ভুলতে হবে। শিশুতোষ হলেও সাথে রাখতে হবে পানির ফ্লাস্ক।
জীবন বাঁচাতে সবার জন্য সবসময়ই চাই পানি। তবে এরমাঝে অবস্থা বিবেচনায় কখনো কখনো প্রয়োজনের চাইতে বেশি পানি খাবার কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই বিবেচনা করতে হবে আবহাওয়ার বিষয়টি। আমাদের দেশের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে গরমের সময়টায় পানি খাবার পরিমাণ দিতে হবে বাড়িয়ে। আবার যারা তুলনামূলকভাবে মাংস কিংবা আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান তাদেরকেও ভাবতে হবে বেশি বেশি পানির কথা। অন্যদিকে বমি কিংবা ডায়রিয়ার মতো অসুখে এবং গরমে অধিক সময় থাকবার প্রয়োজন হলে খেতে হবে গড়পরতার চাইতে বেশি পানি। জীবন বাঁচানোর মতো জীবন সাজাতেও আপনাকে ফিরতে হবে এই পানির তীরেই। ইদানিং হাজারটা কসমেটিক্স আর রূপচর্চার কৌশল আবিস্কার হয়েছে। তবুও ত্বকের সুস্থতার জন্য রূপবিশেষজ্ঞরা সবাইকে পই পই করে বলে দেন পানি খাবার কথা। শুধু তাই নয়, গরমে ব্রণের সমস্য থেকে বাঁচতে আর চেহারায় ফ্রেশলুক ফুটিয়ে তুলতে পানির বিকল্প নেই। গরমের ভাপ থেকে বাঁচতে হলেও মুখে দেয়া চাই পানির ঝাপটা।
পানি দিয়ে জীবন বাঁচালেন। জীবন সাজানোটাও না হয় হলো এই পানি দিয়েই। তবে এতোকিছুর পর এই পানিটি যদি হয় দূষিত, তবে কিন্তু সবকিছুই কেঁচেগন্ডুষ হয়ে যাবে। পান করার পানি যে ফুটিয়ে কিংবা ফিটকারী দিয়ে খেতে হবে সেটা সবাই জানেন। সামর্থ্য থাকলে পানি শোধনের একটি যন্ত্রও বসিয়ে নিতে পারেন বাসা কিংবা অফিসে।
আমাদের শরীরের ৫৫ থেকে ৭০ ভাগে আছে পানি। পৃথিবীর ৪ ভাগের ৩ ভাগ জুড়েও রয়েছে জলের সন্তরণ। কিন্তু আপনার শরীরে যদি যথার্থ পরিমাণ পানির জোগান না থাকে তবে এসব তত্ত্ব আর তথ্য জেনে কোনো লাভ নেই।
কড়চা’র এই আয়োজনে মডেল হয়েছেন তিন্নি ছবি তুলেছেন জিয়াউদ্দিন আলম
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মে ২৫, ২০১০
Leave a Reply