ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে প্রতিবছর কোনো না-কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর পরিচালক (পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ) যুগ্ম সচিব এ এইচ এম আবদুল্লাহ জানান, এপ্রিল-জুন ও সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এ দেশে বেশির ভাগ দুর্যোগ-যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। দুর্যোগ প্রতিহত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস বা দুর্যোগবার্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এখন বাংলাদেশে জন্য দুই ধরনের সংকেত চালু আছে। সমুদ্রবন্দরের জন্য সংকেত ও নদীবন্দরের জন্য সংকেত। কোন সংকেতে কী বোঝায় তা জেনে নিন।
সমুদ্রবন্দরের সংকেত
এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত: জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার। এটি সামুদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।
দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত: দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বন্দরে এখনই ঝড় হবে না। তবে বন্দর ছেড়ে যাওয়া জাহাজ সমুদ্রে বিপদে পড়তে পারে।
তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত: বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলো দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে।
চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত: বন্দর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি।
পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত: বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল পার হয়ে যেতে পারে।
ছয় নম্বর বিপদ সংকেত: বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ একটানা ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল পার হতে পারে।
সাত নম্বর মহাবিপদ সংকেত: বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের ওপর বা কাছ দিয়ে উপকূল পার হতে পারে।
আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত: বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল পার হবে।
নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত: বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল পার হবে।
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত: বন্দর সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরের ওপর বা খুব কাছ দিয়ে উপকূল পার হবে।
১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত: আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সঙ্গে বন্দরের সব ধরনের যোগাযাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
নদীবন্দরের জন্য সংকেত: নদীবন্দরের জন্য রয়েছে চারটি সংকেত।
এক নম্বর নৌ-সতর্ক সংকেত: বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝোড়ো আবহাওয়ার কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিবেগের কালবৈশাখীর ক্ষেত্রেও এই সংকেত দেখানো হয়। আবহাওয়ার চলতি অবস্থার ওপর নজর রাখতে হবে।
দুই নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত: নিম্নচাপের সমান তীব্রতর একটি ঝড়, যার গতিবেগ ঘণ্টায় অনূর্ধ্ব ৬১ কিলোমিটার বা একটি কালবৈশাখী ঝড়, যার বাতাসের গতিবেগ ৬১ কিলোমিটার বা তার বেশি। বন্দর এর যেকোনো একটির কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্যের নৌযানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
তিন নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত: বন্দর এলাকা ঝড়ের কবলে পড়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় হঠাৎ করে বন্দরসংলগ্ন এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সব ধরনের নৌযানকে এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিতে হবে।
চার নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত: বন্দর এলাকা একটি প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে পড়েছে এবং যেকোনো সময় বন্দরসংলগ্ন এলাকায় আঘাত হানতে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তদূর্ধ্ব। সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
সাইদ আরমান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৫, ২০১০
Leave a Reply