বাইরের দিকের দেয়ালজুড়েই শোকেস রাখা যেতে পারে আধুনিক অন্দরসজ্জায় আসবাব নিয়ে প্রতিনিয়তই চলে পরীক্ষণের খেলা। কখনো এই পরীক্ষা চলে আসবাবের উপাদান (ম্যাটেরিয়ালস) নিয়ে, কখনো রং নিয়ে, আবার কখনো নকশা নিয়ে। এখন অন্দরসজ্জায় প্রাধান্য পাচ্ছে দেয়ালজোড়া আসবাব বা ওয়াল ক্যাবিনেট। দেয়ালজোড়া আসবাব বলতে অন্দরের দেয়ালে স্থায়ীভাবে বসানো বা দেয়ালের সঙ্গে জোড়া লাগানো আসবাবকে বোঝায়। একটা সময় ক্যাবিনেট ব্যবহার সীমিত ছিল শুধু রান্নাঘর আর স্নানঘরজুড়েই। এখন অন্দরের আয়তন দিন দিন কমে আসছে। সে কারণে জায়গা বাঁচাতে দেয়ালজুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ক্যাবিনেট। এ নিয়ে ইনস্পাইরেশন ইনস্টিটিউটের স্থপতি লতিফা সুলতানা বলেন, ‘অন্দরসজ্জায় এ ধরনের ক্যাবিনেট ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এতে ঘরের জায়গার অপচয় হয় না। বসার ঘরের দেয়ালজুড়ে যদি ক্যাবিনেট নির্মাণ করে টিভিস্ট্যান্ড, শো-কেস, বুক-শেলফের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এর ভেতর একই সঙ্গে শো-পিস, বই, বসার ঘরের যাবতীয় দরকারি জিনিস ও টেলিভিশন রাখা যাবে। এ ছাড়া আসবাব একই সঙ্গে সংযুক্ত থাকার কারণে কাজেরও সুবিধা হয়। সব ধরনের আসবাবের উপাদান, নকশা, রঙের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা যায়, যার কারণে অন্দরে আসে ছিমছাম পরিপাটি ভাব, সুশৃঙ্খল আবহ। যে সামঞ্জস্য অনেক সময় আলাদা করে কেনা আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে থাকে না।’
ক্যাবিনেট আসবাব বলতে অনেকেই শুধু আলমারি বা শেলফকেই বোঝেন। অন্দরসজ্জায় এখন সোফা, পড়ার টেবিল, জুতার তাক এমনকি বিছানা পর্যন্ত দেয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এই আসবাবগুলোতে সৃজনশীলতার প্রয়োগ ঘটিয়ে তা আরও নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করছেন আসবাব ডিজাইনাররা। শুধু দেয়ালে সংযুক্ত করেই নয়, ঘরে সম্পূর্ণ দেয়াল না রেখে ক্যাবিনেট আসবাব দিয়েও করা যায় ঘরের আড়াল—এমনটিই মনে করেন পিঁড়ি কথনের স্বত্বাধিকারী আসবাব ডিজাইনার জেনিস মাহমুন। বসার ঘরের রাস্তার দিকে যে দেয়াল আছে, সেখানে সম্পূর্ণ দেয়াল না রেখে দুই প্রান্তের দেয়ালের মাঝের ফাঁকা জায়গায় মেঝে থেকে শোকেস নির্মাণ করে ঘরের আড়াল করা যেতে পারে। মেঝে থেকে তিন ফুট উচ্চতা পর্যন্ত শোকেস ক্যাবিনেট এবং শোকেস ক্যাবিনেটের ওপরে সিলিং থেকে দুই ফুট নিচে দেয়ালের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত পুরোটাই জানালা রাখা যেতে পারে (ছবি-১-এর মতো)। জানালায় কোনো পর্দা ব্যবহার না করে জানালার বাইরের দিকে সানশেড রেখে তার ওপর সারিবদ্ধভাবে টবে মানিপ্ল্যান্ট (লম্বা, লতানো) ঝুলিয়ে দিল এই লতানো মানিপ্ল্যান্টই ঘরে আনবে আড়াল এবং প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা। এ ছাড়া ওয়াল ক্যাবিনেটে আনতে পারেন বৈচিত্র্য। খাবারঘরে বাসন রাখার ক্যাবিনেটে প্রক্রিয়াজাত কাঠের বদলে ব্যবহার করতে পারেন সেগুনগাছের গুঁড়ি। এ ছাড়া বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে তার ঘরের দেয়ালে বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে পড়ার টেবিল কাম বইয়ের তাক। দুই পাশের বইয়ের তাকে দুটো বইয়ের আদলে দরজা বানিয়ে মাঝখানে চার থেকে পাঁচ ফুট জায়গায় পড়ার টেবিলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে (ছবি-২)। এমন সুন্দর পড়ার টেবিলের আয়োজন দেখে দুষ্টু শিশুটিও পড়তে বসবে এখানে। এ ছাড়া শোবার ঘর, প্রবেশপথ, লিভিংরুমেও করা যেতে পারে এমন সব নান্দনিক ওয়াল ক্যাবিনেটের আয়োজন।
এখন যারা নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট করছেন তাঁদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ঘরে আয়োজন করছেন, ওয়াল ক্যাবিনেটের। কিন্তু যাঁদের বাড়িতে আগে করা নেই ওয়াল ক্যাবিনেট, তাঁরা কীভাবে বানাবেন এমন আসবাব? এ বিষয়ে স্থপতি লতিফা সুলতানা বলেন, ‘এ ধরনের আসবাব নির্মাণ করতে চাইলে বাড়ি নির্মাণের আগেই এর প্রস্তুতি নিলে ভালো হয়। এ ক্ষেত্রে যেসব জায়গায় বা দেয়ালে আসবাব বসাবেন, সেখানে অ্যালকভি (দেয়াল থেকে ভেতরের দিকে ফাঁকা জায়গা) রাখতে হবে। এতে আসবাবের মূল অংশ দেয়ালের ভেতরে ঢুকে যায় এবং ঘর আরও বড় দেখায়। যাঁরা এখন বাড়িতে দেয়ালে আসবাবের আয়োজন করতে চান, তাঁদের প্রথমে একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত। তারপর আসবাব ডিজাইনার অথবা ভালো কোনো কাঠমিস্ত্রি দিয়ে দেয়ালে বসাতে পারেন আসবাব। সে ক্ষেত্রে আসবাবের স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য দেয়ালে আগেই কাঠের বোর্ড বসিয়ে তারপর আসবাব সংযুক্ত করবেন।
দেয়ালজোড়া আসবাব ঘরে নিয়ে আসে আভিজাত্যের ছোঁয়া। অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের আসবাব নির্মাণে খরচ অনেক বেশি। এ বিষয়ে লতিফা সুলতানা ও জেনিস মাহমুন দুজনের একই মত। সাধারণ কাঠমিস্ত্রির তৈরি আসবাব থেকে এ ধরনের আসবাবের ব্যয় একটু বেশি। তবে নিজেরা তদারক করে বানালে একটু কম দাম রাখা সম্ভব।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৫, ২০১০
Leave a Reply