কোনো কিছুকে আমরা যদি একটু অন্যভাবে চিন্তা করি, যেমন- হতে পারে আমাদের সাধারণ চোখে দেখা কোনো জিনিস। এক কথায় বোঝাতে হলে বলতে হয়, যাকে আমরা ঘরের ছাদ বলে দেখি তা কিন্তু ঠিক উপর তলার ঘরের মেঝে। শহুরে হাইরাইজ বিল্ডিং এর যুগে শুধু নিজের করে আর সহজে পাওয়া যায় না বাড়ির একক ছাদ। কথা যতই ঘুরিয়ে বলি না কেন, কথা বলব কিন্তু ঘরের মেঝে নিয়ে যা আমাদের পায়ের তলায় একটা ভিত্তি দেয়া। যার উপর দায়িত্ব পরে পুরো বাড়ির ভার বহন করার। শুধু দায়ভার চাপিয়ে দিয়েই কিন্তু আমরা মেঝের উপর নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকি। কিন্তু একেও যে সমান গুরুত্ব দেয়া উচিত গৃহসজ্জার ক্ষেত্রে তা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সবাই ভুলে যাই। আকর্ষণীয় ঘরের মেঝে ঘরের ইন্টেরিয়রের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাড়ি তৈরি করার সময়ই মেঝের সঠিক প্ল্যান হওয়া উচিত। বাড়ির আয়তন কতটুকু, কতজন লোক বসবাস করবে, ওয়াকওয়ে কেমন হবে, কি দিয়ে মেঝে করবেন বা সব ঘরের মেঝের ম্যাটেরিয়াল এক হবে কিনা অথবা ঘরে কোনো বিশেষ স্থানে বিশেষ কোনো ডিজাইন করবেন কিনা। এসব বিষয়গুলো আগে থেকে ঠিক করে নিতে হবে।
সব ঘরের মেঝে একরকম হয় না। শোবার ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম এইসব ঘরের মেঝে হয় আলাদা আলাদা ধরনের।
এই ধরনের কিছু বিষয় বিবেচনা করে আগে আপনি জেনে নিন কত ধরনের মেঝে আপনি করতে পারেন-
মোজাইক
আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত হল মোজাইক। সাদা সিমেন্ট আর পাথর কুচি মিশিয়ে তৈরি হয় এই ধরনের মেঝে। দামটাও নাগালের মধ্যে, তাই বাড়িতে উপযোগিতার কথা বিবেচনা করে ঘরে মোজাইক করিয়ে নিতে পারেন।
মার্বেল
বেশিরভাগ মানুষই এখন পাথরের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। আর পাথরের কথা বলতে গেলেই আসে মার্বেলের মেঝের কথা। নানা দেশের নানা রঙের এবং নানা দামের মার্বেল বাজারে পাওয়া যায়। তবে বিখ্যাত ইটালিয়ান মার্বেলের দামটা একটু বেশিই পড়বে। নিজের সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে ঘরে মার্বেলের ফ্লোর করতে পারেন।
টাইলস
বাজারে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় মেঝের উপকরণ হল টাইলস। সহজপ্রাপ্যতা, দাম নাগালের মধ্যে এবং কার্যকর হওয়ার কারণে দিন দিন টাইলসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাজারে বিভিন্ন সাইজের, বিভিন্ন ডিজাইনের টাইলস পাওয়া যায়। ঘরে টাইলস লাগানোর ক্ষেত্রে মনে রাখবেন মেঝেতে ব্যবহার করার টাইলস কিন্তু আলাদা। দেয়ালে লাগানো টাইলস আর ফ্লোর টাইলস দুই ধরনের হয়ে থাকে। ফ্লোর টাইলসের উপাদান আর টেক্সচার আলাদা রকমের হয়ে থাকে।
কাঠের মেঝে
আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে ঠিক যায় না উডেন ফ্লোর। সাধারণত শীত প্রধান দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় উডেন ফ্লোর। তবুও যারা একটু শৌখিন ধরনের মানুষ তারা ঘরের মেঝে কাঠ দিয়ে করতে পারেন। পুরো মেঝে জুড়ে না করে, যদি বিশেষ কোনো জোন ধরে কাঠের মেঝে করা যায় তবে তা দেখতে বেশি ভাল লাগবে।
পিভিসি
এটা মেঝেতে আলাদা করে বিছাতে হয়। সাধারণত প্লাস্টিকের তৈরি এবং নানা ডিজাইনে এইসব পিভিসি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এর একটা সুবিধা হল এটা সহজে মেইন্টেন করা যায়, পরিষ্কার করা যায় এবং দাম কম হওয়ায় কিছু দিন পর পর পছন্দ অনুযায়ী বদলেও ফেলা যায়।
ঘরের মেঝে তৈরিতে যাই ব্যবহার করুন না কেন একটা বিষয় মনে রাখবেন তা ঘরের বাকি অন্যান্য আসবাবের সাথে বা ঘরের সাজের সাথে মানানসই হয় কিনা। ঘরের ভৌত কাঠামো হিসেবে মেঝে কাজ করে বলে একে সহজে বদলানো যায় না ঠিকই। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটিয়ে নানা রকম উপাদান দিয়ে ঘরের মেঝের সাজে চমক আর নতুনত্ব দুটোই আনতে পারেন। নানা ডিজাইনের কার্পেট, শতরঞ্জি, ম্যাট, মাদুর, শীতলপাটি ইত্যাদি দিয়ে নিজের পছন্দমতো সাজিয়ে তুলুন নিজের ঘরের মেঝে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মে ১৮, ২০১০
Leave a Reply