মেঘবরণ কুঞ্চিত কালো কেশ বা ঢেউ খেলানো চুল— কোঁকড়া চুলের এসব উপমা যত সুন্দরই হোক না কেন, এ ধরনের চুলের যত্ন নেওয়াটা ঝামেলার ব্যাপার। কারণ প্রকৃতিগতভাবেই কোঁকড়া চুল খুব ঘন ও শক্ত হয়ে থাকে। আর চুলগুলো কোঁকড়ানো হওয়ার কারণে গরমের এই সময়টায় চুলের গোড়ায় বাতাস ঢুকতে না পারায় চুলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া কোঁকড়া চুলে সব সময়ই জট লেগে থাকে। এ কারণে চুলগুলোকে আঁচড়ানোও বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। ঘরে বসেই কোঁকড়া চুলের এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করবেন সে বিষয়ে জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।
যাদের মাথায় কোঁকড়া চুল আছে, তাদের অবশ্যই মাথার তালু পরিষ্কার রাখতে হবে। যেহেতু এ ধরনের চুলের গোড়ায় বাতাস পৌঁছাতে পারে না, তাই মাথার ত্বক পরিষ্কার না রাখলে চুলের গোড়ায় ফুসকুড়ি ওঠা, খুশকিসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গোসল করার পর কোঁকড়া চুল ভালো করে না শুকালে চুলের গোড়ায় পানি জমে থাকে। তাই গোসল শেষে চুলগুলো ভালো করে তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। এরপর ফ্যানের বাতাসে দুই হাত দিয়ে চুলগুলো ফাঁক ফাঁক করে শুকিয়ে নিন। কোঁকড়া চুলের ধরন খুবই রুক্ষ। তাই চুল শুকাতে কখনোই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না।
যেহেতু এ ধরনের চুলে খুব জট লেগে থাকে, তাই চুল শুকানোর পর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতে হবে।
মেথি গুঁড়া, টক দই, ত্রিফলার রস (আমলকী, হরীতকী, বহেরা) একসঙ্গে মিশিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন। এই মিশ্রণ চুলে দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের জট অনেকটা কমবে।
চুলের গোড়ায় ঘাম জমে চুল পড়ে যায়। তাই চুল পড়া বন্ধ করতে চুলে ভাতের মাড় মেখে এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এ ধরনের চুলে প্রয়োজন প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট। তাই ১৫ দিনে একবার ডিম, টক দই, নিমপাতা বাটা, পেঁয়াজের রস, মেথি গুঁড়া মিশিয়ে মাথায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের মতো রাখতে হবে। পুরোপুরি শুকানোর আগেই ধুয়ে ফেলতে হবে।
একইভাবে চুলে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নিতে ডিম ও কলার মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
গরমে মাথার তালুতে অনেক সময় ফুসকুড়ি ওঠে। দূর্বাঘাসের মুথা ও স্বর্ণলতা নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন।
শীতকালে খুশকি দূর করতে মেহেদিপাতার সঙ্গে ঘৃতকুমারী, অ্যালোভেরা মিশিয়ে লাগাতে পারেন চুলে।
এ ছাড়া প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর এক কাপ চায়ের লিকারের সঙ্গে (দুই টেবিল চামচ করে ভিনেগার, কফি, সেদ্ধ বিটের রস) একসঙ্গে মিশিয়ে কন্ডিশনার হিসেবে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
চুলে রক্ত সঞ্চালনের জন্য নারকেল তেলের ম্যাসাজ খুবই উপকারী। নারকেল তেল গরম করে হাতে নিয়ে আঙুল দিয়ে বৃত্তাকারভাবে মালিশ করতে হবে। এরপর গরম পানিতেই তোয়ালে ভিজিয়ে ভালোভাবে চিপে মাথায় পেঁচিয়ে ধরতে হবে। এতে চুলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়।
এ ধরনের চুল যাদের রয়েছে তাদের প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও পানি খেতে হবে। পাশাপাশি খেতে হবে সামুদ্রিক মাছ। কারণ সামুদ্রিক মাছ খেলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
কোঁকড়া চুলের সজ্জা
প্রত্যেক ধরনের চুলেরই রয়েছে নিজস্ব সৌন্দর্য। তাই চুলের ধরন অনুযায়ী সাজাতে হবে চুলগুলোকে। জানালেন রাহিমা সুলতানা। এ ধরনের চুল বেশি লম্বা অথবা বেশি ছোট না রাখাই ভালো। মাঝারি দৈর্ঘ্যের হতে পারে এ ধরনের চুল। এ চুলে ইউ কাট এবং ভি কাটই বেশি মানায়। সে ক্ষেত্রে ঘাড়ের কিছুটা নিচ পর্যন্ত চুল রেখে যেকোনো একটি কাট দিতে পারেন। চুলে যে কাটই দেন না কেন, গরমের এই সময়টায় কখনোই চুল খোলা রাখবেন না। এতে নিজের অস্বস্তি হবে, অন্যরাও বিরক্ত হবে। তাই পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে বাঁধতে হবে চুল। জিনস-ফতুয়া বা পাশ্চাত্য পোশাক পরলে একটা পনিটেল করতে পারেন। সালোয়ার-কামিজ পরলে পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে বেঁধে নিন চুলগুলো। আর শাড়ি পরলে করে নিন এলোখোঁপা। আপনার মুখের গড়ন যেমনই হোক না কেন, পোশাকের সঙ্গে এভাবে বাঁধা চুল সহজেই মানিয়ে যাবে।
মডেল: ইমি
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৮, ২০১০
Leave a Reply