এক গোছা আলগা চুল (এক্সটেনশন) লাগানোর চলই এখন দেখা যায় সুন্দর ঘন চুল আপনার। কিন্তু আরেকটু লম্বা হলে যেন আরও ভালো লাগত। কিংবা ঘন কালো একঢাল চুল দেখতে দেখতে যেন একঘেয়ে লাগছে। ফাঁকে ফাঁকে যদি উঁকি দেয় লাল বা গোলাপি রঙা একগুচ্ছ চুল, দারুণ তাই না! ভাবছেন, কীভাবে—খুব সহজ। পদ্ধতিটির নাম হেয়ার এক্সটেনশন। কীভাবে করবেন সেই খুঁটিনাটি জানাচ্ছেন রূপ বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান।
আলগা চুলের ধরন
হেয়ার এক্সটেনশন করার জন্য যে চুলের গুচ্ছগুলো পাওয়া যায় এর ধরন এবং লাগানোর পদ্ধতির কারণে বিভিন্ন রকম দেখাতে পারে। মূলত এর ধরনের ওপরই খানিকটা নির্ভর করে হেয়ার এক্সটেনশনগুলো কতখানি আসল দেখাবে এবং কত দিন পর্যন্ত এই এক্সটেনডেড হেয়ার আপনার চেহারা ও ব্যক্তিত্বকে শাণিত রাখবে। নানা ব্র্যান্ডের ন্যাচারাল ব্ল্যাক, জেট ব্ল্যাক, ডার্ক ব্রাউন, ব্রাউন, প্লাটিনাম ব্লন্ড রেডিশ ব্রাউন, গ্রে, মেহগনি, বার্গেন্ডি, লাইট হানি ব্রাউন, মিডিয়াম অ্যাশ ব্রাউন, মিডিয়াম গোল্ডেন ব্রাউন, ডার্ক অবার্ন, চেস্টনাট ইত্যাদি রঙের মধ্য থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দেরটি। অধিকাংশ বাঙালির চুলের রং বাদামি, গাঢ় বাদামি অথবা কালো। তাই এসব রং বেশি চলে।
চুলে রঙিন ছোঁয়া
আপনার নিজস্ব সত্তা ও পরিচিতিতে আরও একটু নতুন মাত্রা যোগ করতে প্রয়োজনে রঙিন হেয়ার এক্সটেনশন করাতে পারেন। রঙিন এক্সটেনশন করাতে চাইলে বাংলাদেশে আপনি পেয়ে যাবেন সলিড, গ্লসি ও গ্লিটার এই তিন ধরনের হেয়ার এক্সটেনশন। শকিং গ্রীন, ইলেকট্রিক ব্লু, হট পিংক, সানফ্লাওয়ার ইয়োলো, ম্যাট গোল্ডেন, প্যারোট গ্রিন, ব্রাউন—এসব রং পাবেন সলিডের মধ্যে। গ্লসি হবে ডিপ রেড, একোয়া গ্রিন, মেহগনি, বার্গেন্ডি, ম্যাজেন্টা, বটল গ্রিন, ডিপ ব্লু প্রভৃতি রং। আর গ্লিটার এক্সটেনশনগুলো হলো সিঙ্গেল হেয়ার শ্যাফট এবং সোনালি, রুপালি, ম্যাজেন্টা, রয়েল ব্লু, লাইট ব্লু, ওয়াইন রেড, ডার্ক রেড, লাইট পিংক প্রভৃতি রং।
আলগা চুল লাগানোর পদ্ধতি
কয়েকটি বিশেষ উপায়ে হেয়ার এক্সটেনশন লাগানো হয়। এগুলো গ্লু দিয়ে অথবা গ্লু ছাড়া এবং ক্লিপ দিয়েও আটকানো যায়। এ ছাড়া আরও অনেক পদ্ধতি আছে। যেমন—উইভিং ইন, হিট ফিউজিং ক্ল্যাম্পিং, পলিমার গ্লুয়িং প্রভৃতি। আমাদের দেশে হেয়ার এক্সটেনশনে সাধারণত ব্যবহূত হয় নন-টক্সিক পলিমার গ্লুয়িং পদ্ধতি।
নানাভাবে হেয়ার এক্সটেনশন করা যায়। তবে সারা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো আলাদা আলাদা গোছা (স্ট্র্যান্ড) অথবা লেয়ার এক্সটেনশন করানো। স্ট্র্যান্ড এক্সটেনশন করালে অনেক স্ট্রান্ড দরকার হয়। চুলের একটি অংশ বেছে নিয়ে স্ট্র্যান্ড লাগানো হয়। তবে আপনার স্বাভাবিক চুলের ওপরেও খানিকটা নির্ভর করে কয়টি স্ট্র্যান্ড বা লেয়ার এক্সটেনশন লাগানো যাবে। আপনার উচ্চতা অনুযায়ী হেয়ার এক্সটেনশনের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বাছাই করুন।
বিশেষ সতর্কতা
হেয়ার এক্সটেনশন করানোর পর অন্ততপক্ষে দু-তিন মাস যেন এগুলো আসল দেখায়, এর জন্য বাড়তি বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
চুল নিয়মিত আঁচড়াবেন। তবে চুল আঁচড়ানোর আগে হালকা লিভ ইন কন্ডিশনার অথবা কম্বিং লোশন লাগিয়ে নিতে পারেন। ব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়াবেন না।
চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে ভালো মানের অ্যালকোহলমুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। চুল ধোয়ার জন্য ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন।
চুল ধুয়ে স্বাভাবিক বাতাসে শুকানোর চেষ্টা করুন।
ব্লো ড্রাই অথবা কার্লিং আয়রন ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।
সাঁতার কাটা বা ব্যায়াম করার পর ভালোভাবে সাবধানতা অবলম্বন করে চুল ধুয়ে নিন। সুইম ক্যাপ পরে সাঁতার কাটুন।
হেয়ার এক্সটেনশনকে হঠাৎ কোনো তাপের সম্মুখীন করবেন না।
ভেজা চুল বাঁধা থেকে বিরত থাকুন।
হেয়ার এক্সটেনশনের রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি এবং স্থায়িত্ব বিষয়ে আপনার হেয়ার স্টাইলিস্টের সঙ্গে কথা বলে নিন।
কোথায় করাবেন
হেয়ার এক্সটেনশনে প্রতিটি স্ট্র্যান্ডের দাম ৬০০-৬৫০ টাকা। লেয়ার করে লাগাতে চাইলে খরচ পড়বে ৩৭০০-১২৫০০ টাকার মধ্যে। মোটামুটি সব পার্লারেই মনের মতো রংটি বেছে নিয়ে করিয়ে নিতে পারেন হেয়ার এক্সটেনশন।
শান্তা তাওহিদা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৮, ২০১০
Leave a Reply