সমস্যাঃ আমার সন্তানের বয়স ২৩ মাস। ওজন ১২-১৩ কেজি। বাচ্চার ৯-১০ মাস বয়সে প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার পর সাত-আট দিন হাসপাতালে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়। এর আগে থেকেই সে খাবার খেতে চায় না।
ক্ষুধা লাগলেও খাওয়ার জন্য কাঁদে না। এখন পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত আছে। সে যখন বসতে শিখেছে, তখন থেকে জোর করে বা টিভির বিজ্ঞাপন দেখিয়ে এ পর্যন্ত খাইয়ে আসছি। এখন জোর করে ধরে রাখা যায় না। খাওয়া দেখলেই সে খাবে না বলে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে এবং ধরে এনে খাওয়াতে চাইলে কান্না করে। টিভির বিজ্ঞাপনেও এখন আর কাজ হয় না। আগে খাওয়ানোর পর বিভিন্ন সময় বমি করে দিত। এখনো মাঝেমধ্যে বমি করে দেয়। তাকে নিয়মিত শিশু বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে আসছি ও কৃমির ওষুধ খাইয়েছি। মাঝে মধ্যে তার মাথা খুব গরম থাকে।
বাচ্চা এত বেশি দুষ্টুমি করে, যা কোনো কোনো সময় ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। সে কখনো নিরিবিলি বা চুপচাপ থাকে না। এটা-সেটা নিয়ে দুুñমি যেমন-কোনো কিছু হাতের কাছে পেলেই ওপরের দিকে ছুড়ে মারবে বা টিভির দিকে মারবে। কোনো কিছু দিয়ে ফ্রিজকে পেটাতে থাকবে আর বলবে ‘মাংঙ্গি, মাংঙ্গি’ অর্থাৎ ভেঙে ফেলবে। তার দুষ্টুমির মাত্রাটা কখনো কখনো আমাদের আতঙ্কিত করে।
ওর সমবয়সী কাউকে পেলে এ মাত্রা আরও বেশি বেড়ে যায়।
যেকোনো জিনিস জানালা দিয়েফেলে দেয়,এমনকি বালিশগুলোও ফেলে দিতে চায়। ওর পায়খানা নিয়মিত হয়না।দিনে দু-একবার হয়।তবে তা আঠালো ও দুর্গন্ধযুক্ত। কিছুদিন আগে একটি পত্রিকায় দেখেছি, বাচ্চাদের জোর করে বাটিভি দেখিয়ে খাওয়ানো ঠিক নয়। আমার বাচ্চাকে তো জোর করে খাওয়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ অবস্থায় আমি কী করতে পারি?
সেলিনা আকতার
আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।
পরামর্শঃ আপনার সন্তানের প্রস্রাবের সংক্রমণের সঙ্গে অন্যান্য কিছু সমস্যার সম্পর্ক থাকতে পারে। সে জন্য প্রস্রাবের রুটিন ও কালচার পরীক্ষা এবং কিডনি আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে লক্ষণবিহীন কোনো সংক্রমণ হচ্ছে কি না। হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। জিহ্বায় কোনো সাদা আবরণ (ফাঙ্গাস) থাকলে নিস্ট্যাটিন ড্রপ ১ মিলিগ্রাম চারবার জিভে লাগাতে হবে অন্তত এক সপ্তাহ। ফলিক এসিড ট্যাবলেট ০·২-০৬ মিলিগ্রাম প্রতিদিন গ্রহণ করলে দৈহিক বৃদ্ধি অর্থাৎ ক্ষুধার ওপর কিছু প্রভাব পড়বে।
তবে বাকি যেসব লক্ষণের কথা আপনি বলেছেন, তার সঙ্গে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার একটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি) নামের এক জটিল মনোদৈহিক সমস্যার যথেষ্ট মিল রয়েছে। দক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে ওর মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পূর্ণ মূল্যায়ন করতে হবে।
এডিএইচডি হলে খুব ধৈর্যের সঙ্গে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঘরের বাইরের কাজে বা খেলায় বাচ্চাকে নিয়োজিত করুন। ঘুম, খাওয়া ও বিশ্রামের একটি কাঠামোতে তাকে আনতে হবে, প্রয়োজনে মৃদু শাসন করুন দৈহিক শাস্তি না দিয়ে। প্রত্যাশিত আচরণ করতে তাকে উৎসাহিত করুন। প্রয়োজনে তাকে পুরস্কৃত করুন। বিশেষ প্রতিষ্ঠানে তাকে অল্প বয়স থেকে শিখতে দিতে হবে। কিছু মনোপ্রভাবক ওষুধও এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। নিজে নিজে কোনো ওষুধ ও কৃত্রিম রঞ্জকযুক্ত খাবার দেবেন না।
এডিএইচডি শিশুদের কোনো বিরল সমস্যা নয়। তবে অতি চঞ্চলতা বা অতি অমনোযোগিতাকে সব সময় শৈশবের চাঞ্চল্য হিসেবে দেখবেন না। প্রয়োজনে এ বিষয়ে দক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
————————–
বিশেষজ্ঞের চেম্বার থেকে
শিশুস্বাস্থ্য সমস্যা
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা· মাহবুব মোতানাব্বি
নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
প্রথম আলো, ৪ জুন ২০০৮
Leave a Reply