অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে ১৫ দিন পরপর তারই সমাধান পাওয়া যাবে।পাঠকের উকিল বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যাটি লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন। খামের ওপর লিখুন: পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুলইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
আমরা চার ভাই। আমি মেজো। ছোটবেলায় আমার চাচা ও চাচি আমাকে মৌখিকভাবে দত্তক নেন ও লালন-পালন করেন । তাঁরা ছিলেন নিঃসন্তান। পরে আমি তাঁদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করি। আমার চাচা-চাচিকে ১৪ শতাংশ জমি কিনে দেন। এই জমি কেনার আগেই চাচির বাবা-মা ও ভাই মৃত ছিলেন। চাচির পরিবারেও আর কোনো অংশীদারের খবর জানা নেই। আমার চাচা আমাকে তাঁর সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দানকবলা দিয়ে যান এবং চাচির নামে কেনা ১৪ শতাংশ জমি উল্লেখ করে কবলা দেন।
আমার প্রশ্ন, হিন্দু আইনে আমি কি ওই ১৪ শতাংশ জমির অধিকারী হতে পারব? দানকবলা থেকে প্রাপ্ত সব সম্পত্তি আমি কি বিক্রি করতে পারব? আমার মৃত্যুর পর আমার ছেলেরা কি ওই সব সম্পত্তির প্রকৃত উত্তরাধিকারী হতে পারবে?
ফটিক হালদার
মাদারীপুর
বাংলাদেশে প্রযোজ্য হিন্দু আইনের দায়ভাগা মতবাদ অনুযায়ী কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দান করতে পারেন। তবে দানের ক্ষেত্রে দাতাকে অবশ্যই দানপত্রটি লিখিত ও রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য এ রকম দলিলে কমপক্ষে দুজন প্রত্যয়নকারী সাক্ষীর সই লাগবে। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ পাস হওয়ার পর দানের বৈধতা অর্জনের লক্ষ্যে তা রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তরের বিধান অনুসরণ করা হয়। সুতরাং দানটি আইনসম্মতভাবে সম্পন্ন হলে আপনি ওই সম্পত্তির অধিকারী এবং তা বিক্রি করার অধিকারও আপনার আছে। এ ছাড়া আপনার মৃত্যুর পর আপনার ছেলেদের ওই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে কোনো বাধা নেই।
আমি একটি মেয়েকে ভালোবাসি। মেয়েটি ভারতীয় নাগরিক। তাঁর বাবা-মা দুজনই ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু মেয়েটির দাদা-দাদি ও নানা-নানি বাংলাদেশি। আমি মেয়েটিকে বিয়ে করে বাংলাদেশে আনতে চাই। সেও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিতে চায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের দুজনের করণীয় কী? বিয়েটা সামাজিক (হিন্দুপ্রথা) নিয়মানুসারে করতে পারব নাকি কোর্ট ম্যারেজ করতে হবে? নাগরিকত্বের জন্য বাংলাদেশে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে? কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে? কত দিন সময় লাগবে এবং কত টাকা খরচ হতে পারে?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনি মেয়েটিকে হিন্দুপ্রথা অনুযায়ী বিয়ে করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় পাসপোর্টধারী মেয়েটিকে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে আসতে হবে। বিয়ের পর নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হলে মেয়েটি বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ব্যাপারে আপনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবে।
আমার বাবা-চাচারা চার ভাই, তিন বোন। আমি যখন সাত বছরের ছিলাম, তখন আমার বাবা মারা যান। দাদা এখনো জীবিত। লোকমুখে শুনেছি, বাবার আগে ছেলে মারা গেলে সেই মৃত ছেলের ওয়ারিশরা নাকি সম্পত্তি পায় না। আসলে কি তাই? দাদা বলেন, সব সম্পত্তি তাঁর ছেলেদের মধ্যে সমান ভাগ হবে। দাদা যদি সম্পত্তি আমার নামে লিখে না দেন, তাহলে কি দাদার মুখের কথা দ্বারা আমি সম্পত্তি পাব?
মোহাম্মদ হাশেম, রাঙামাটি।
১৯৬১ সালে পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, আপনার দাদার মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তিতে আপনার বাবার অংশটি আপনি পাবেন। যেহেতু আপনার বাবা জীবিত নেই, সেহেতু বাবার প্রতিনিধি হিসেবে বাবার প্রাপ্য অংশের অধিকারী হবেন আপনি।
আমার বয়স ৩১ বছর। ২০০৬ সালের অক্টোবরে প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে টেলিফোনে আমার বিয়ে হয়। অনুষ্ঠানে ছেলের এক বন্ধু ছাড়া তার পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিল না। ছেলেটার সঙ্গে ২০০৫ সালে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমার পরিচয় হয়। আমরা কখনো সামনাসামনি একে অপরকে দেখিনি। ওয়েবক্যামের মাধ্যমে কথা হতো। বিয়ের তিন বছর পার হয়ে গেছে। সে একবারও দেশে আসেনি আর আমাকেও নিতে চায় না। বলেছিল, ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে আসবে। এখন বলছে, ২০১১ সালে আসবে। সে নিয়মিত ফোন করে এবং আমার সব খরচ বহন করে। কিন্তু তার পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয় না এবং বাড়িতে বলেনি সে বিয়ে করেছে। তার পরিবারের লোকজন জানে, সে একটা মেয়েকে পছন্দ করে, দেশে এসে বিয়ে করবে। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমি কি তাকে তালাক দিতে পারব? আর তালাক দিলে এত দিন আমার জন্য প্রতি মাসে যে খরচ পাঠিয়েছে, সেটা কি ফেরত দিতে হবে? আমি কখনো তার সঙ্গে থাকিনি। তাই তালাক দিলে কি তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হবে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনার বিয়েতে কাবিননামা হয়েছিল কি না অথবা দেনমোহর নির্ধারিত হয়েছিল কি না সে ব্যাপারটি পরিষ্কার নয়। যেহেতু আপনার বিয়ে টেলিফোনে হয়েছে এবং বিয়েটি কনজিমিউটেড হয়নি, সেহেতু আপনি অর্ধেক দেনমোহর পাবেন। এ ছাড়া মুসলিম আইন অনুযায়ী আপনাকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া থাকলে আপনি নিয়ম অনুযায়ী আপনার স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। সাধারণত তালাক প্রদানের তিন মাস পরে তালাক কার্যকর হয়। সুতরাং তালাক কার্যকর করার জন্য আপনাকে তিন মাস সময় দিতে হবে।
আপনার চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, ছেলেটি আপনার খরচপত্র বহন করে। ছেলেটি কী অসুবিধার কারণে দেশে আসতে পারছে না অথবা তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা আছে কি না, এসব ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার পর আপনি তালাকের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে কোনো খরচ ফেরত দিতে হবে না।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৮, ২০১০
Leave a Reply