ছোট্ট আরশিয়ার ঘরটা সাজানো একদম তার মনের মতো করেই শিশুরা সব সময়ই কল্পনাপ্রবণ। কল্পনার রাজ্যেই যেন তাদের বসবাস। যেহেতু ঘরেই কাটে তাদের বেশির ভাগ সময়, তাই ছোট শিশুর ঘরটিকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যা তাদের কল্পনাশক্তিকে বাড়িয়ে মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে।
ছোটদের ঘরের সাজ কেমন হবে, তা নির্ভর করে শিশুটি ছেলে না মেয়ে তার ওপর। কেমন হবে মেয়েশিশুর ঘরের অন্দরসজ্জা, এ বিষয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফারজানা গাজী বলেন, ছোট একটি শিশুকে প্রথমেই যখন আলাদা ঘর দেওয়া হয়, তখন মা-বাবাকে ছেড়ে সে থাকতে চায় না। তাই শিশুর মতামত বা পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে, তার বয়স উপযোগী অন্দরসজ্জায় সাজাতে হবে, যাতে ঘরটি তার আপন মনে হয়। সে ক্ষেত্রে শিশুদের উপযোগী আসবাবে ঘরটি সাজাতে হবে। কেমন হবে মেয়েশিশুর ঘরের আসবাব, এ বিষয়ে ছোটদের আসবাবের দোকান ফানিফ্যানের বিক্রয় ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, মেয়েশিশুদের ঘরের আসবাবগুলো সাধারণত ডিজনি প্রিন্সেস এবং রং-বেরঙের নকশার আদলে করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আসবাবে গোলাপি, লেবু, বেগুনি ও হলুদ—এই রংগুলোর বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। মেয়েশিশুর ঘরের জন্য তৈরি করা হচ্ছে পড়ার টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, খেলনার বাক্স, দোতলা খাট, সোফাসহ নান্দনিক সব আসবাব।
আর এভাবেই ছোট আরশিয়ার ঘরটির অন্দরসজ্জা করেছেন ফারজানা গাজী। বর্গাকৃতির এই ঘরটিতে উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালে গোলাপি এবং পশ্চিম পাশের দেয়ালে করা হয়েছে সাদা রঙের ব্যবহার। সাদা রঙের দেয়ালটির সামনে রাখা হয়েছে কাঠের তৈরি হালকা সাদা রঙের ছোট বিছানা। বিছানার বিপরীত দিকে রাখা হয়েছে পড়ার বক্স টেবিল। এই টেবিলটির বৈশিষ্ট্য হলো, এর চেয়ারটি বক্স আকারে টেবিলের ভেতরে ঢোকানো থাকে। এর পাশেই রয়েছে একটি কাবার্ড ঘরের এক দিকের দেয়ালজুড়ে রয়েছে জানালা। দেয়ালের গোলাপি রঙের সঙ্গে সমন্বয় করে জানালায় দেওয়া হয়েছে সাদা পর্দা। বিভিন্ন জনপ্রিয় কার্টুনের ছবি আঁকা রঙিন কাপড় জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই পর্দা। পর্দার রডের দুই প্রান্তে ঝুলানো হয়েছে দুটি লম্বাকৃতির পাটের পুতুল। এ ছাড়া দেয়ালের এক কোনায় মেঝেতে ফোম বিছিয়ে শিশুটির জন্য করা হয়েছে খেলার ব্যবস্থা। ছিমছাম আসবাবে সাজানো এই ঘরটির মেঝেতে হালকা বাদামি রঙের এক বর্গফুটাকৃতির গ্রানাইটের ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়াও পুরো ঘরটিকে শিশুর কাছে আনন্দময় করে তুলতে ঘরজুড়ে রাখা আছে টেডি বিয়ার, কাপড়ের মাছ, পুতুলসহ অনেক ধরনের খেলনা।
এখন মেয়েশিশুর ঘরের অন্দরসজ্জায় দেয়াল, আসবাব, পর্দা, বিছানার চাদর সব জায়গায় গোলাপি ও সাদা রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। এ দুটি রঙের ব্যবহার প্রসঙ্গে ফারজানা গাজী বলেন, গোলাপকে বলা হয় সৌভাগ্যের রং, আর মেয়েশিশুকে বলা হয় সৌভাগ্যের প্রতীক। আর সাদা রং কোমলতা ও শান্তির প্রকাশ ঘটায়। এই মনস্তাত্ত্বিক কারণে মেয়েশিশুর ঘরে এ দুটি রঙের বেশি ব্যবহার করা হয় বলে জানালেন তিনি।
শিশুর ঘরের দেয়ালচিত্র অন্যান্য ঘর থেকে শিশুর ঘরটিকে আলাদা করে তোলে। এ ছাড়া দেয়ালচিত্রে তুলে ধরা বিভিন্ন কাহিনিতে শিশুর কল্পনালোকের বিস্তৃতি ঘটে। সেই দুঃখী মেয়ে সিন্ডারেলার গল্প কে না জানে। ‘সিন্ডারেলার মনে অনেক দুঃখ, কেউ তাকে ভালোবাসে না। ওর এই কষ্টের কথা শুধু বুঝতে পারে বাগানের ফুল, পশু-পাখিরা, তাই তো মন খারাপ হলেই বাগানে এসে ওদের সঙ্গে কথা বলে সে।’ রূপকথার সিন্ডারেলার এই গল্প ছোটবেলায় সবার মন ছুঁয়ে যায়। আর এই রূপকথাটি যখন গল্পের বই থেকে দেয়ালচিত্র হয়ে ফুটে ওঠে ঘরের দেয়ালে, তখন সেই ঘরটিই যেন হয়ে ওঠে রূপকথার রাজ্য। যেমনটি করা হয়েছে এই ঘরের দেয়ালে। বর্ণিল সব রঙের ছটায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে সিন্ডারেলা গল্পের কাহিনি নিয়ে আঁকা এই দেয়ালচিত্রটি। এ প্রসঙ্গে ফারজানা গাজী বলেন, মেয়েদের ঘরে মিনা, লোকজ কাহিনি অথবা রূপকথার দেয়ালচিত্র অঙ্কন করতে পারেন। আর এই দেয়ালচিত্রকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আলোর ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ তো গেল ঘরের অন্দরসজ্জার কথা। আজকাল অনেক বাসায়ই ছোটদের জন্য থাকে আলাদা স্নানঘর। সে ক্ষেত্রে স্নানঘরের মেঝেতে হালকা গোলাপি রঙের টাইলস ব্যবহার করতে পারেন। মেঝে থেকে দুই ফুট উচ্চতায় গোলাপির ওপর লতা আঁকা টাইলস লাগিয়ে এর ওপর ছয় ইঞ্চি উচ্চতায় বাথরুমের পুরো দেয়ালজুড়ে লাগাতে পারেন কার্টুনের কাহিনিচিত্র আঁকা টাইলস। এরপর বাকি দেয়ালজুড়ে সাদা রঙের টাইলসের ফাঁকে ফাঁকে লাগাতে পারেন জনপ্রিয় সব কার্টুন। টম অ্যান্ড জেরির ঝগড়া, পাপাইয়ে খাবার খাওয়া আঁকা টাইলস। এ ছাড়া বাথরুমের এক দিকে তৈরি করুন ওয়াল কেবিনেট। সেখানে ছোট শিশুটির প্রয়োজনীয় সব জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারবেন। ছোটদের বাথরুমে প্যান না দিয়ে কমোড বসানো ভালো। একইভাবে ছোট শিশুটির গোসল করার জন্য তৈরি করতে পারেন বাথটাব। শিশুটির উচ্চতা অনুযায়ী স্থাপন করুন মুখ ধোয়ার বেসিন। সাধারণ আলোকসজ্জা তো আছেই। এ ছাড়া শিশুর বাথরুমটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বাথরুমের ছাদে করতে পারেন শেড ল্যাম্পের ব্যবহার। তবে শিশুর স্নানঘরটি যদি তার ঘরের ভেতর হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে দরজা রাখবেন না। কারণ শিশুটি বাথরুমের দরজা আটকিয়ে অনেক সময় যদি না খুলতে পারে, তবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানালেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফারজানা গাজী।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৮, ২০১০
Leave a Reply