এই সময়ে প্রখর রোদ, হঠাৎ বৃষ্টি আর ভাপসা গরমে অনেক শিশুই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ সময় শিশুর বিভিন্ন সমস্যা ও তার প্রতিকার নিয়ে বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুব মোতানাব্বি।
যেসব সমস্যা হতে পারে
মাহবুব মোতানাব্বি বলেন, গরমে শিশু ঘেমে যাচ্ছে। এ থেকে ঠান্ডা লাগছে অনেকেরই। ঠান্ডা থেকে কাশি, হাঁচিও হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির প্রবণতা আছে যেসব শিশুর, তারাও ভুগছে এ ঋতুতে।
যেসব শিশুর ত্বক বেশি সংবেদনশীল তাদের ত্বকেও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে চামড়া পুড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকার ফলে চামড়া স্থায়ীভাবে পুড়ে তাতে ফুসকুড়িও দেখা দিতে পারে।
আবার ধুলাবালির কারণে শিশুদের ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যাও হচ্ছে। এ সময় বেশি ঘাম হওয়ায় ধুলাবালি লেগে চুলকানি হচ্ছে। ফলে ত্বকে ক্ষতও হচ্ছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের প্রস্রাবের সমস্যা হতে পরে। দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকার ফলে প্রস্রাব ঘন ও হলুদ হয়ে উঠতে পারে। তীব্র রোদে পানিশূন্যতা থেকে অনেক ক্ষেত্রে শিশুর হিট স্ট্রোক হতে পারে অর্থাৎ শিশু অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়া হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে শিশুর জ্বরও আসতে পারে। এ সময় অনেক শিশুই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
যা করবেন
মাহবুব মোতানাব্বি শিশুর এসব সমস্যা সমাধানের শুরুতেই গুরুত্ব দেন শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ানোর দিকে।তিনি এ সময় শিশুকে স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে ২০ ভাগ বেশি পানি খাওয়ানোর কথা বলেন। নির্দিষ্ট সময় পরপর শিশুকে পানি খাওয়াতে ও প্রস্রাব করাতে হবে। শিশু ঘেমে গেলে শরীরে ঘাম শুকাতে না দিয়ে তাড়াতাড়ি তা মুছে দিতে হবে। শিশুকে পরাতে হবে সুতি, পাতলা ও বাতাস চলাচল করে এমন কাপড়ের তৈরি ঢিলেঢালা পোশাক।
তাঁর আরও পরামর্শ—কিছুক্ষণ পরপর মুখে পানির ঝাপটা দিন। হাত ও পা ধুয়ে দিন। শিশুকে নিয়ে বাইরে কোথাও গেলে একটানা রোদে থাকবেন না। গাছের ছায়া বা কোনো খাবারের দোকানে বসতে পারেন। অনেকেই শিশুকে স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাওয়ান। এটা ঠিক নয়। কারণ, এসবের মধ্যে পানির পাশাপাশি আরও নানা উপাদান থাকে। যেটি শিশুর চাহিদা নাও হতে পারে। শিশু যদি বেশি ঘেমে দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে লবণপানি খেতে দিন। ডাবের পানি অথবা লেবুর শরবত খেতে দিতে পারেন।
শিশু বৃষ্টিতে ভিজে গেলে দ্রুত গা মুছিয়ে দিন। সঙ্গে বাড়তি কাপড় রাখুন, যাতে প্রয়োজনমতো বদলে দিতে পারেন। শিশুর মাথার চুল ঘেমেও ঠান্ডা লাগতে পারে, তাই এ সময় চুল ছোট করে ছেঁটে দিন। শিশুর ত্বক সংবেদনশীল হলে রোদে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে দিন। সানস্ক্রিন লোশনটির এসপিএফ যেন ১৫ ও ১৯-এর মাঝামাঝি হয়।
শিশুর জ্বর হলে প্যারাসিটামল সিরাপ দিতে পারেন। শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই শুধু ওষুধ দেবেন। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়ানোই ভালো। গরমে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মডেল: জেসন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১১, ২০১০
Leave a Reply