গ্রীষ্মকালটা অনেকের একদমই পছন্দ নয়। গরমে ঘাম, ঘামাচি, রোদে পোড়া কালচে দাগ, ব্রণ, অ্যালার্জি যেন পাল্লা দিয়ে হামলা করে। একে তো বাইরে প্রখর রোদ, ঘরেও নেই শান্তি; সেখানেও লোডশেডিং-অত্যাচার। গরমে যাঁরা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের সমাধান নিয়ে বলেছেন হলিফ্যামিলি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্বক বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আফজালুল করিম ও রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।
ব্রণ থেকে বাঁচতে
আমাদের ত্বকে রয়েছে তেলগ্রন্থি। যার মধ্যে অন্যতম হলো সেবেশাস। এটি থেকে নিঃসৃত হয় সেবাম। এই সেবাম ত্বকের ছোট ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে বাইরে বের হয়ে আসে। কোনো কারণে এ ছিদ্রপথ বন্ধ হয়ে গেলে ত্বকের ওপরে ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এটাই হলো ব্রণ। গরমে ধুলাবালি, ঘাম, ময়লা জমে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। তখনই ব্রণ হয়।
ব্রণ থেকে রক্ষা পেতে হলে সবচেয়ে বেশি জরুরি সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করা। দিনে যতবার সময় পাবেন ততবারই মুখে পানির ঝাপটা দিন। চুলের খুশকি থেকেও ব্রণ বাড়তে পারে। তাই চুল খুশকিমুক্ত রাখতে চেষ্টা করুন। যাঁদের ত্বকে এরই মধ্যে ব্রণ উঠে গেছে, তাঁরা কৃত্রিম উপাদানে তৈরি প্রসাধনী ব্যবহার বন্ধ করে দিন। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন। রাহিমা সুলতানা এ জন্য কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন।
বেসন, শসার রস মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
লবঙ্গ ও মেথি পেস্ট করে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণ কমে যাবে।
ময়দা ও গোলাপজলের মিশ্রণ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন।
ত্বকের তেলতেলে ভাব কমাতে তৈলাক্ত ত্বক যাঁদের, তাঁদের তো আরও সমস্যা। বাইরে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ত্বক তেলতেলে হয়ে ওঠে। কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে মেকআপ করে বাইরে বের হওয়া মাত্রই গলে একাকার। তাঁদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে—
বাইরে বের হওয়ার আগে ১০ মিনিট ত্বকে বরফ ঘষুন।
সানস্ক্রিনের ওপর হালকা করে পাউডার লাগান।
পাতিলেবুর রস তুলোয় ভিজিয়ে ত্বকে লাগান রোজ দুবার।
তেলমুক্ত ক্রিম, লোশন ও ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। ঘাম আর ঘামাচি থেকে রক্ষা আমাদের ত্বকের অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থগুলো ঘামের মাধ্যমে বাইরে বের হয়ে যায়। এতে ত্বকের আর্দ্রতা কমে রোমকূপের গোড়ায় বাসা বাঁধে রোগজীবাণুু। এতে ত্বক তামাটে বর্ণের বৃত্তে ভরে ওঠে। এটি হলো ঘামাচি। তা ছাড়া অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়াটাও খুব বিরক্তির কারণ। সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। গরমে আরাম পাবেন। ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখুন। সম্ভব হলে দিনে একাধিকবার গোসল করুন।
যাঁদের ত্বকে এরই মধ্যে ঘামাচি হয়েছে, তাঁরা নিমপাতার রস লাগালে উপকার পাবেন।
তিতা-জাতীয় সবজি যেমন—করলা খাদ্যতালিকায় রাখুন।
ঘাম বেশি হলে ট্যালকম পাউডারের সঙ্গে এক চিমটি খাওয়ার সোডা ব্যবহার করতে পারেন।
যাঁদের ঘাম থেকে দুর্গন্ধ হয়, তাঁরা বডি স্প্রে ব্যবহার করুন।
পেঁয়াজ ও রসুন কম খেলেও ঘামের দুর্গন্ধ কমে যায়।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতে
সবার ত্বকের একটি নির্দিষ্ট রং আছে। এ রঙের বৈচিত্র্য ঘটে মেলানিন কোষের তারতম্যের ফলে। কড়া রোদে আমাদের ত্বকে মেলানিন বেশি তৈরি হয়। যাঁরা ঘরের বাইরে বেশি থাকেন, তাঁদের ত্বকে রোদে পোড়া এক ধরনের বাদামি ও কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। রোদে পোড়া এ দাগ দূর করা কঠিন নয়। ঘরে বসেই করতে পারেন এর সমাধান।
টক দই, শসার রস, তিলের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করুন।
দিনে একবার বিশেষ করে রোদ থেকে ফিরে তরমুজের রস লাগাতে পারেন।
এক টুকরো টমেটো নিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করতে পারেন।
যাঁদের ত্বকে রোদে পোড়া দাগ বেশি, তাঁরা রাতে ক্যালামাইলিন লোশন ব্যবহার করুন।
অ্যালার্জি মোকাবিলায়
গরমে ঘামের ফলে এবং ধুলাবালির কারণে অনেকের ত্বকেই ছত্রাক সংক্রমণ হয়। এর ফলে চুলকানি, র্যাশ, অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। এ থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি সতর্কতা দরকার।
আরামদায়ক, নরম ও সুতি কাপড়ের পোশাক পরুন, যাতে পোশাকটি সহজেই ঘাম শুষে নেয়।
ধুলাবালি ও কোলাহলপূর্ণ স্থান এড়িয়ে চলুন।
যাঁরা এরই মধ্যে এ সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা কাঁচা হলুদ বাটা ও শসার রস লাগালে উপকার পাবেন।
গাজরের রস অথবা দূর্বাঘাসের রস লাগালেও উপকার পাবেন।
সমস্যার তীব্রতা বেশি হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো ছত্রাকনাশক ক্রিম, লোশন ও পাউডার ব্যবহার করুন।
ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে
কড়া রোদ ও গরমে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য অনেক কমে যায়। ঔজ্জ্বল্য ও লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে—
মধু ও দুই ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করতে পারেন।
পাকা কলা খুব ভালোভাবে পেস্ট করে ত্বকে লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।
আঙুর বা কমলার রস দিয়ে হালকাভাবে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করতে পারেন।
তিলের তেল ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে রাতে লাগিয়ে সকালে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। মৌসুমি ফল খান বেশি করে। দুশ্চিন্তা ভুলে গিয়ে ঘুম দিন প্রশান্তির। আর বাইরে বের হওয়ার সময় মাথার ওপর মেলে ধরুন রঙিন ছাতাটি। ত্বকের সব সমস্যাই দূর হয়ে যাবে।
শান্তা তাওহিদা
মডেল: শখ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১১, ২০১০
ফাইহা
এমন কোনো পদ্ধতি সত্যি কি আছে যা দ্বারা ত্বকে মেলানিন এর পরিমাণ কমানো যায়?
Bangla Lifestyle
জানা মতে না।