জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে ১৫ দিন পরপর তারই সমাধান পাওয়া যাবে।পাঠকের উকিল বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যাটি লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন।
খামের ওপর লিখুন: পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুলইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা
আমরা তিন বোন। আমার বাবা জীবিত অবস্থায় আমাদের এবং আমার মাকে তাঁর কোনো সম্পত্তি লিখে দিতে চান না। এদিকে আমার তিন চাচা ও চার ফুফু আছেন। চাচাদেরও কোনো ছেলে নেই। প্রত্যেক চাচার একটি করে মেয়ে আছে। ফুফুদের ছেলেমেয়ে আছে।
বাবার অবর্তমানে মুসলিম আইন অনুযায়ী আমরা তিন বোন ও মা কী পরিমাণ সম্পত্তি পাব? বাবার সব সম্পত্তি আমরা পেতে চাইলে তা সম্ভব কি না, জানালে উপকৃত হব।
রূপা
পুরানা পল্টন, ঢাকা
মুসলিম আইন অনুযায়ী বাবার অবর্তমানে আপনার মা আপনার বাবার পুরো সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগের মালিক হবেন। অবশিষ্ট সম্পত্তির অর্ধেক আপনারা তিন বোন পাবেন। বাকি অর্ধেক সম্পত্তিতে আপনার বাবার ভাইবোনেরা অংশীদার হবেন। বাবার সব সম্পত্তি পেতে হলে আপনার বাবাকে পুরো সম্পত্তি তাঁর জীবদ্দশায় আপনাদের নামে হেবার মাধ্যমে হস্তান্তর করতে হবে।
আমার ছোট বোন বিদেশে থাকেন। রাজশাহী শহরে তাঁর ০.০৭৪২৫ একর জমি আছে। এ জমিতে বাড়ি তৈরির যাবতীয় কাজ করার জন্য সে আমাকে লিখিতভাবে ক্ষমতা দিয়েছে। সে অনুযায়ী আমি কাজ করছি। বাড়িটিতে কয়েক দিনের মধ্যে প্রথম তলার ছাদের কাজ শেষ হবে। বাড়িটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। এর দক্ষিণ দিকে ফাঁকা দুটি বাড়ি আছে। সমস্যা হলো, এ দুটি বাড়ির মধ্যে একটি বাড়ির দেয়ালের ভেতর লাগানো একটি নারকেলগাছ বাঁকা হয়ে আমাদের জমির ভেতরে এসে গেছে। এ কারণে আমাদের বাড়ির একতলা ছাদ কোনো রকম দেওয়া গেলেও দোতলা পর্যন্ত ওঠানো যাবে না। গাছে ঠেকে যাবে। বাড়ির মালিকদের গাছ সরানোর কথা বললে, তাঁরা সরাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আমার বোনের অনুপস্থিতিতে এর সমাধান আমি কীভাবে করতে পারি?
মোহাম্মদ শাজাহান আলী
রাজশাহী
আপনার সমস্যাটি এলাকার গণ্যমান্য লোকের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। সাধারণত এ ধরনের সমস্যা সালিসের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। সালিসের মাধ্যমে সমাধান না হলে আপনি স্থানীয় সিটি করপোরেশনে অভিযোগ করতে পারেন। চিঠির তথ্য অনুযায়ী আপনার বোন আপনাকে ওই জমিতে বাড়ি করার জন্য লিখিতভাবে ক্ষমতা দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বোন আপনাকে মামলা করার পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করলে, আপনি তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।
আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি ২০০৬ সালে। আড়াই বছরের একটি ছেলে আছে। আমার বাবা নেই। মা-ই আমার সবকিছু। আমার বিয়েতে মা, ভাইবোন কেউ রাজি ছিলেন না। মাকে রাজি করানোর জন্য আমার স্ত্রীর পক্ষ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে মাকে দিয়েছি। কিন্তু বিয়েতে আমার মা ও ছোট ভাই আসেননি। টাকা নেওয়ার কারণে আমাদের বরযাত্রী ছিল ১০০ জন। বিয়েতে দুই ভরির কিছু বেশি স্বর্ণ দিয়েছি। দেনমোহর আড়াই লাখ টাকা ধরা হয়। বিয়ের পর আমার স্ত্রী তিন-চার মাস আমাদের বাড়িতে ছিল। একদিন মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে যায়। আমার মাও তাকে আর আনতে রাজি নন। আমিও চিন্তা করলাম, যদি আবার নিয়ে আসি, তবে স্ত্রী আর মায়ের মধ্যে মনোমালিন্য হবে এবং সংসারে আরও অশান্তি হবে। এখন আমরা আলাদা বাসা নিয়ে থাকি। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে আমার খুব ঝগড়া হয়। সে কথায় কথায় বলে, ‘আমার পাওনা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে তুমি চলে যাও।’ আরও বলে, ‘অনুষ্ঠান করে বিয়ে করেছি। সবাই ভালোমন্দ দেখেই আমাকে নিয়েছে। এখন কেন আমাকে তোমার পরিবারের ভালো লাগে না। আমাকে তোমার বাপের বাড়িতে নাও, তা না হলে আমাকে মুক্তি দাও।’ একই কথা আমার শাশুড়িও বলেন। এখন একটি বেসরকারি চাকরি করি। আমার এমন অর্থসম্পদ নেই যে একসঙ্গে তার পাওনা বুঝিয়ে দিতে পারব। মাকে বোঝাতে পারি না, মাকে ছাড়তেও পারি না। স্ত্রীর বেলায়ও তা-ই। আমি আছি উভয় সংকটে। এখন মুসলিম আইনে কীভাবে স্ত্রীর ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতে পারি।
নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
দেনমোহরের অর্থ আপনি কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের পদক্ষেপ নিতে পারেন। আর্থিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে আপনি ওইরূপ কিস্তির আবেদন করতে পারেন। পারিবারিক আলোচনা অথবা সালিসের মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যার সমাধান সম্ভব। উল্লেখ্য, মুসলিম আইনে দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর একধরনের ঋণ। এ ঋণ চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য। সুতরাং তালাক হোক বা না হোক, দেনমোহরের অর্থ আপনার স্ত্রীর প্রাপ্য।
আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজে অর্থনীতি (স্নাতক) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি আমি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চার বছরমেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করতে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে আইনি কোনো বিধিবিধান আছে কি না? যদি থাকে তাহলে এটি কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ কি না? আইনসম্মত কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে দুই প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে পড়া কি সম্ভব?
লুৎফুল কবীর
চট্টগ্রাম।
একই সঙ্গে দুই ধরনের কোর্স করতে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে দুই ধরনের কোর্সের পরীক্ষার সময়সূচি একই সময়ে নির্ধারিত হলে আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন। সুতরাং এ ব্যাপারটি মাথায় রেখে আপনাকে একসঙ্গে দুটি কোর্স করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আমার বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন। তিনি তিনটি বিয়ে করেছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীকে তিনি মুসলিম আইন অনুসারে তালাক দিয়েছেন। প্রথম স্ত্রী আবার বিয়ে করেছেন এবং বর্তমানে তিনি সেখানেই ঘর-সংসার করছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর তাঁর হিল্লার মাধ্যমে আবার বিয়ে হয় এবং সেখানে তিনি কিছুদিন ঘর-সংসার করার পর ওই স্বামী দেনমোহরসহ তাঁকে তালাক দেন। পরে আমার বাবা আর তাকে বিয়ে না করে অন্য জায়গায় তৃতীয় বিয়ে করেন। এর প্রায় ৩৫ বছর পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আমি তৃতীয় স্ত্রীর সন্তান। আমার বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় আমার মায়ের নামে দেনমোহর বাবদ ৩০ শতক জমি দিয়ে যান। তিনি যে সম্পত্তি রেখে গেছেন, এর দুই আনা অংশ প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমার মায়ের নামে রেকর্ড করে দেওয়া সম্পত্তির রেকর্ড টিকবে কি না এবং বাবার আগের স্ত্রীরা তাঁর সম্পত্তির অংশীদার হবেন কি না।
উল্লেখ্য, তাঁদের তিনি লিখিতভাবে তালাক দেননি, কিন্তু ইসলামিকভাবে তালাক যে তিনি দিয়েছিলেন, এর অনেক সাক্ষী আছে।
ইয়াকুব আলী
কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
রংপুর।
আপনার বাবার জীবদ্দশায় তালাকপ্রাপ্ত প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা পরিশোধিত না হলে তাঁরা ওই মোহরানার হকদার। সুতরাং তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীরা মোহরানার অর্থ দাবি করতে পারেন। অপরিশোধিত মোহরানা ছাড়া তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীরা আপনার বাবার সম্পত্তির কোনো অংশ দাবি করার অধিকারী নন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৪, ২০১০
Leave a Reply