বৈশাখের প্রখর রোদে বের হলেই প্রাণটা যখন হয়ে ওঠে ওষ্ঠাগত, তখন নিজের প্রিয় নীড়ে ফিরলে যেন দেয় সুশীতল আশ্রয়। উষ্ণ আবহাওয়ায় ছিমছাম, স্নিগ্ধভাবে সাজানো অন্দর মনে আনে প্রশান্তির ছায়া। খুব জবরজং গৃহসজ্জার সামগ্রী দিয়ে নয় বরং হালকা এবং খুব সাধারণ জিনিসে সাজানো ঘরই এ সময়ের অন্দরসজ্জার জন্য উপযোগী বলে জানালেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার রুমানা আফজাল খান। কেমন হবে গরম উপযোগী অন্দরসজ্জা? এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু এখনকার আধুনিক বাড়িতে ঘরগুলো খুব ছোট, তাই বেশি আসবাবপত্র ঘরে না রাখাই ভালো। যেহেতু মেঝে সব সময়ই ঠান্ডা থাকে, সে ক্ষেত্রে বসার ঘরের মেঝেতেই করা যেতে পারে বসার ব্যবস্থা। দেয়ালের একদিকের মেঝেতে ৩০ বাই ৩০ ইঞ্চি আকৃতির পাশাপাশি দুটি কুশন বিছিয়ে দিন। এ ক্ষেত্রে কুশনের ঢাকনা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন সাদা রঙের কাপড়। এ দুটি কুশনের ওপর একই আকৃতির আরও দুটি সাদা কাপড়ের মধ্যে হালকা রঙের ব্লকের ঢাকনা দেওয়া কুশন বসিয়ে দিন। দেয়াল ঘেঁষে বসার কুশনগুলোর ওপর রেখে দিন ১০ বাই ১০ ইঞ্চি আকৃতির কুশন। মেঝেতে কুশনের ব্যবহার প্রসঙ্গে রুমানা আফজাল বলেন, অনেকেই গরমের সময় মেঝেতে ফোম বিছিয়ে বসার বা ঘুমানোর আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু ফোম আমাদের শরীরকে গরম করে দেয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তুলার কুশন ব্যবহার করতে হবে।
একইভাবে অতিথি আপ্যায়নের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করতে পারেন মেঝেতেই। আট থেকে ১০ ইঞ্চি উচ্চতার টেরাকোটার কাজ করা পোড়ামাটির বর্গাকৃতি টব (ফুলের টব) বসার ঘরের এক কোনায় রাখুন। এতে গাছ রাখবেন না। টবের ওপর টেবিল টপ (ঢাকনি) হিসেবে থাই গ্লাস ব্যবহার করে গ্লাসের ওপর ছোট ছোট মাটির পটারি, জগ, গ্লাস, প্লেট দিয়ে সাজিয়ে তুলুন এই ফ্লোর সিটিং টেবিলকে, ছোট কিন্তু নান্দনিক এই টেবিলে খাবার পরিবেশনায় স্নিগ্ধ হয়ে উঠবে বাইরে থেকে আসা অতিথির মন। এ ছাড়া অনেক ফ্ল্যাটবাড়িতেই বারান্দা থাকে না, তাই গরমের বিকেলে অবসর সময়টুকু পার করার জন্য বসার ঘরের জানালার সামনে রাখতে পারেন ডিভান, জানালার ধারে বসে বাইরের খোলা আকাশ দেখতে দেখতে বা বই পড়তে পড়তে বেশ ভালোই কাটবে আপনার বিকেল। একইভাবে বাইরের বাতাস পাওয়ার জন্য শোবার ঘরের বিছানাটিকে জানালার সামনে নিয়ে আসুন। এ ঘরটিতে মেঝের ঠান্ডা প্রশান্তি পাওয়ার জন্য দেয়ালের একদিকে শতরঞ্জি বিছিয়ে এর ওপর কয়েকটি কুশন রেখে দিন। মেঝেতে শোবার ব্যবস্থা করতে চাইলে বিছিয়ে নিতে পারেন শীতলপাটি। আর এভাবেই গরমের এই দিনগুলোয় নিজের বাসাকে আরামদায়কভাবে বসবাসের উপযোগী করে সাজিয়েছেন রুমানা আফজাল খান। তিনি আরও জানান, এখনকার অন্দরসজ্জায় ঘরকে ঠান্ডা রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ঘরের ভেতর গাছের ব্যবহার, গাছ ঘরের ভেতরকার তাপকে শোষণ করে ঘরকে ঠান্ডা করে তোলে।
তাই গ্রীষ্মের এই সময় ঘরের ভেতর বেশি করে গাছ রাখলে ঘর এমনিই শীতল হয়ে উঠবে। তাই এই বাড়িটির অন্দরসজ্জায় প্রাধান্য পেয়েছে গাছের ব্যবহার। বসার ঘরের কোণে সাজানো হয়েছে ক্যাকটাস, পাতাবাহার, সাইকাসসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ, বড় গছের গুঁড়ি এবং মাটির বিভিন্ন ধরনের নান্দনিক শিল্পকর্ম দিয়ে। একইভাবে সাজানো হয়েছে শোবার ঘরের কর্নার। মাটির স্পর্শ আমাদের মনকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে। এ জন্যই বাড়তি কোনো আসবাব ঘরে না রেখে মাটির তৈরি পটারি, সরা, কলস দিয়ে ঘর সাজালে তা আমাদের চোখকে প্রশান্ত করে তোলে। আর চোখের প্রশান্তি মনকেও শান্ত করে তোলে। জানালেন, রুমানা আফজাল। আপনি চাইলে ঘরের ভেতর যেকোনো কর্নারে রাখতে পারেন পানিভর্তি শখের হাঁড়ি। দিনের আলো-বাতাস যাতে সরাসরি ঘরে ঢুকতে পারে সে জন্য হালকা রঙের (যেমন—অফ হোয়াইট, গোলাপি, হালকা সবুজ) পাতলা কাপড়ের পর্দা ব্যবহার করুন। সে ক্ষেত্রে ভারী পর্দা তুলে রেখে পুরোনো টাঙ্গাইল অথবা কোটা কাপড়ের শাড়ি দিয়ে পর্দা বানিয়েনিতে পারেন। যদি জানালার পাশাপাশি বাড়ি থাকে, সে ক্ষেত্রে একটু আড়াল রাখতে পর্দার নিচে ঝুলিয়ে দিন বেত-বাঁশের মড়মড়ি।
নান্দনিক এই পর্দার ব্যবহারে ঘরে যেমন বাতাস ঢুকবে, তেমনি ঘরও হবে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন। হালকা রঙের পর্দার মতো দেয়ালেও করতে হবে হালকা রঙের ব্যবহার, গাঢ় রঙের তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি, তাই ঘরের দেয়ালে সাদা কিংবা সাদা রং ব্যবহারই শ্রেয়। এ ছাড়া রাতের বেলায় খুব বেশি আলোর ব্যবহার ঘরকে গরম করে তোলে। তাই অযথা বাতি জ্বালিয়ে রাখবেন না, আর ল্যাম্পশেডের আলো-আঁধারির মায়াবিকতায় ঘরের ভেতর সৃষ্টি হয় স্নিগ্ধতার আবেশ। তাই এ সময় ঘরে ব্যবহার করতে পারেন ল্যাম্পশেড, হিডেন লাইট অথবা স্পটলাইট। সবকিছুতেই হালকা রঙের ব্যবহার করলেও বিছানার চাদর কখনোই হালকা রঙের ব্যবহার করবেন না। কারণ এ সময় ঘাম বেশি হয়ে থাকে, তাই হালকা রঙের চাদর দ্রুত ময়লা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে লাল, বেগুনি, সবুজ রং বেছে নিন। খুব জমকালো কাজ নয়, বরং নকশিকাঁথার হালকা কাজ করা সুতির চাদর ব্যবহার করতে পারেন বিছানায়। এ ছাড়া কার্পেট তুলে ফেলে পুরো ঘরে করতে পারেন শতরঞ্জি অথবা শীতলপাটির ব্যবহার। ঘর ঠান্ডা রাখতে বারবার মেঝে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। ঘর মোছার সময় পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে সেই পানিতে ঘর মুছলে ঘরের পরিবেশ হয়ে উঠবে আরও শীতল।
বিপাশা রায়
মডেল: শারমিন লাকি
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৭, ২০১০
Leave a Reply