বাঙালি নারীর সাজসজ্জার প্রসঙ্গ এলেই মানসপটে যে ছবিটি ভেসে ওঠে তা হলো ফিতা দিয়ে বাঁধা বেণি আর আলতামাখা রক্তিম পা। বাঙালি নারীর এই শাশ্বত রূপ খানিকটা ফিকে হয়ে এলেও এখনো তা টিকে আছে গ্রামবাংলার আনাচ-কানাচে আর নানা উৎসব-পার্বণকে উপলক্ষ করে। বিশেষ করে উৎসবে আলতা-ফিতা আর মেহেদিতে বাঙালি নারী খুঁজে পায় তার আপন রূপ।
আসছে পয়লা বৈশাখ। বাঙালি সংস্কৃতির অনন্য এক উৎসবমুখরতার প্রতিচ্ছবি এই পয়লা বৈশাখ। সারা বছরের ক্লেদ, জড়তা আর জঞ্জাল ঝেড়ে ফেলে নবপ্রাণে উদ্দীপ্ত হয় প্রতিটি বাঙালি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির প্রাণের এই উৎসবে শামিল হতে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানা তোড়জোড়।
উৎসবের প্রতিটি পরতে পরতে চাই বাঙালিয়ানার ছাপ। তাই পয়লা বৈশাখে চুড়ি, আলতা মেহেদি আর লালপেড়ে শাড়ি চাই ইংরেজি মাধ্যমে পড়া অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সিনড্রেলার। বিশেষ করে আলতার সঙ্গে এবারই তার প্রথম পরিচয়। তাই তার উৎসাহ খানিকটা বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমি, তানিয়া, সেঁজুতি আর শাওনকে পাওয়া গেল পুরান ঢাকার চকবাজারে। এখানে কেন এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই সুমি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আলতা আর চুল বাঁধার ফিতা কিনতে এসেছি। এ ছাড়া দলবেঁধে আসার মধ্যে আলাদা একটা মজা আছে।’ এলিফ্যান্ট রোডে বিয়ের সামগ্রীর দোকান পালকির আবদুল লতিফ জানান, আলতা এখন আর তেমন কেউ মাখে না। তবে বিয়ের সাজে আলতা না মাখলে পূর্ণতা পায় না। এ ছাড়া পয়লা বৈশাখের আগে আলতার চাহিদা বেড়ে যায়। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের জন্য অনেকেই তাঁর দোকান থেকে আলতা-ফিতা-মেহেদি কিনছেন।
নৃত্যশিল্পী শর্মিষ্ঠা পণ্ডিত বলেন, ‘নাচের অনুষ্ঠানের কারণে মাঝেমধ্যেই আলতা পরতে হয়। কিন্তু পয়লা বৈশাখে আলতা পরার আমেজটাই ভিন্ন। রক্তলাল আলতায় পা রাঙিয়ে নতুন বছরে পদার্পণ করতে চাই। প্রার্থনা, যেন শুভ হয় নতুন বছরটা।’
কোথায় পাবেন
পয়লা বৈশাখে পরিপূর্ণ বাঙালি রূপ পেতে আলতা-ফিতা আর মেহেদির খোঁজে আপনি যেতে পারেন নিউমার্কেটের চাঁদনী চক ও এলিফ্যান্ট রোডের বিয়ের সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার চকবাজার ও রাজধানীর বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীর দোকানে পাবেন আপনার পছন্দের আলতা-ফিতা-মেহেদি।
দরদাম
আকারভেদে আলতার দাম পড়বে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এ ছাড়া মোটা ও চিকন দুই ধরনের চুলের ফিতা রয়েছে। মোটার তুলনায় চিকন ফিতার দাম একটু বেশি। প্রতি বান্ডিল মোটা ফিতা ৩০ আর চিকন ফিতা ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাজারে বিভিন্ন আকারের টিউবে মেহেদি পাওয়া যায়। টিউবের আকারভেদে মেহেদির দাম পড়বে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। আর গ্লিটার পাওয়া যাবে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
আর মাত্র কটা দিন। তারপরই বাংলা নববর্ষ। উৎসবের দিনটিতে আবহমান বাংলার চিরচেনা রূপে নিজেকে সাজাতে তবে আর দেরি কেন?
শারমিন নাহার
মডেল: সিলভিয়া
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৬, ২০১০
Leave a Reply