আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। বর্ষবরণ সামনে রেখে আমরা মেতে উঠি নানা আয়োজনে। উৎসবমুখর এই দিনটিতে শুধু নিজেকে সাজিয়েই নয়, প্রাণের এই উৎসবের বর্ণিল রঙের ছোঁয়ায় রাঙিয়ে নিতে চাই নিজের গৃহকোণটিকেও। যেহেতু এই দিনটিতে বাড়িতে থাকে অতিথিদের আনাগোনা, তাই বসার ঘর ও খাবার টেবিলে এই দিনটিতে থাকা চাই বিশেষ সাজ। এবারের নকশার জন্য ডালিয়া রহমানের বাড়ির বসার ঘর ও খাবার টেবিলকে বৈশাখী সাজে সাজিয়েছেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারসন গুলশান নাসরীন চৌধুরী।
বৈশাখ বাঙালির একান্তই নিজস্ব সংস্কৃতির উৎসব। তাই অন্দরের সাজে দেশীয় জিনিসের ব্যবহারে সহজেই আনা যায় বৈশাখের আমেজ। যেমনটি করা হয়েছে এই বাসায়, বসার ঘরটিতে অতিথিদের বসার জন্য রাখা হয়েছে বেতের সোফা। মেঝেতে রাখা হয়েছে শতরঞ্জি, দেয়ালে ঝোলানো হয়েছে বিভিন্ন নকশার টেরাকোটা ও মুখোশ। দেয়ালে মুখোশের ব্যবহার সম্পর্কে গুলশান নাসরীন চৌধুরী বলেন, বৈশাখ মানেই সারি সারি মুখোশ নিয়ে চারুকলার মঙ্গলশোভাযাত্রা, ঘরেও সেই আমেজ আনার জন্য করা হয়েছে মুখোশের ব্যবহার। পুরো ঘরে উৎসবের আমেজ আনতে দেশীয় মোটিফের জিনিসে শৈল্পিক সজ্জায় সাজানো হয়েছে সোফার পাশের কর্নারটি।
বিভিন্ন আকৃতির মাটির পটারিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রঙের ফুল এবং ইনডোর প্লান্টস। শুধু মাটির পটারিতে নয়, গাছের শিকড় দিয়ে নান্দনিকভাবে তৈরি ফুলদানিতে শোভা পাচ্ছে পানিতে রাখা মানিপ্লান্ট। যেকোনো নতুনকেই আমরা ফুল দিয়ে বরণ করি, আর সবুজ আমাদের মনকে ভরিয়ে ফেলে প্রশান্তিতে—জানালেন গুলশান নাসরীন চৌধুরী। পুরোনো সব জীর্ণতা বিদায় জানিয়ে ভোরের আলোয় নতুন প্রত্যয় নিয়ে সবাই বরণ করে নতুন বছরটি। ভোরের আলোর প্রতীকরূপে মোমের আলোয় ঘরে আসে মঙ্গল বারতা। সে ক্ষেত্রে একটি মাটির পাত্রে পানি নিয়ে পছন্দমতো ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তার মধ্যে জ্বালিয়ে রাখুন রংবেরঙের মোমবাতি। দেখুন, মোমের আলোর মায়াবিকতায় মুহূর্তেই কেমন পাল্টে গেছে ঘরের পরিবেশ। শুধু মোমের আলোতেই নয়, পুরো জায়গাটিকে আলোকিত করতে করা হয়েছে ল্যাম্পশেডের ব্যবহার।
বৈশাখের দিন শুধু বসার ঘরেই নয়, খাবার টেবিলেও থাকা চাই দেশীয় আমেজ। সে ক্ষেত্রে খাবার পরিবেশনে মাটির বাসনের বিকল্প কিছু নেই। মাটির থালা, বাটি, গ্লাস, জগ ইত্যাদি দিয়ে খাবার পরিবেশনের সুবিধামতো করে সাজিয়ে নেওয়া হয়েছে এই খাবার টেবিলটি। টেবিলের মাঝখানে মাটির পাত্রে রাখা হয়েছে তাজা ফুল। ন্যাপকিনগুলোকে কোণাকৃতিতে ভাঁজ করে রাখা হয়েছে প্লেটের সামনে। এ ছাড়া বিকেলবেলায় হালকা খাবার পরিবেশনের সঙ্গে খাবার টেবিলের সজ্জাটা হতে পারে অন্য রকম। সে ক্ষেত্রে আদিবাসী থিম ধরে সাজাতে পারেন খাবার টেবিলটি। টেবিলক্লথ হিসেবে বিছিয়ে দিন নীল-কালো রঙের সমন্বয়ের থামি। এর ওপরে রানার হিসেবে রাখুন রেশমি সুতার আদিবাসীদের হাতে বোনা ওড়না। আদিবাসীদের তৈরি বাসনকোসনে বিকেলে পরিবেশন করুন খই, মুড়ি, বাতাসা, নিমকিসহ দেশীয় মুখরোচক খাবার। পানি রাখার জন্য লাউয়ের তৈরি বিশেষ ডিজাইনের জগ ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি বাঁশের ট্রেতে একটি মালায় রাখুন তাজা কিছু ফুল, অপর মালায় রাখুন মোমের ছোট ছোট শোপিস। গোধূলির মায়াবি আলোয় দেখুন না কেমন জমে উঠেছে পয়লা বৈশাখের বিকেলের এই আনন্দ আয়োজন।
পয়লা বৈশাখের এই দিনটিতে সব কিছুতেই আমরা দেশীয় জিনিসের ব্যবহার করে থাকি। নতুন করে কিছু কিনে নয়, বরং ঘরের মধ্যেই থাকা বিভিন্ন ধরনের দেশীয় লোকজ জিনিসকে একটু এদিক-সেদিক করে গুছিয়ে রেখে পয়লা বৈশাখের এই দিনে ঘরে আনা যায় এক শৈল্পিকতার ছোঁয়া। সেই শৈল্পিকতার পরশে বছরের প্রথম দিনটিতেই আপনার মন ভরে উঠবে সেই বাঙালিয়ানার ছোঁয়ায়, যা আপনাকে নিয়ে যাবে আমাদের সেই হাজার বছরের লোকজ সংস্কৃতির কাছাকাছি।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৬, ২০১০
Leave a Reply