ভোজনরসিক বাঙালি নিজে খেতে যেমন ভালোবাসেন, তেমনি ভালোবাসেন অন্যকে খাওয়াতে। শুধু নিজ হাতে সুস্বাদু খাবার রান্না করেই নয়, নান্দনিকভাবে খাবারটিকে পরিবেশন করে অতিথিকে মুগ্ধ করাতেই রাঁধুনির তৃপ্তি। খাবার সুন্দরভাবে পরিবেশনের জন্য বাসনকোসন ছাড়াও প্রয়োজন পড়ে কিছু শৌখিন অনুষঙ্গের। ট্রেতে করে খাবার পরিবেশনা যেন বাঙালি সংস্কৃতির অতিথি আপ্যায়নের একটি চিরায়ত রীতি।
নান্দনিক ট্রে
খাবার যেমনই হোক না কেন, সুন্দর পরিবেশনা একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। আর সুন্দর করে সাজিয়ে খাবার পরিবেশন করতে ট্রের জুড়ি মেলা ভার। ট্রের নকশাটা যদি হয় নান্দনিক, তবে খাবার পরিবেশনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে দ্বিগুণ।
কোথায় পাবেন ট্রে
কাঠ, মাটি, বেত ও বাঁশ দিয়ে নিজস্ব নকশা আর সৃজনশীলতার মিশ্রণ ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ট্রে তৈরি করছে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউস ও শৌখিন পণ্যসামগ্রীর দোকানগুলো। বর্গাকৃতি কাঠের ভেতর বেতের পাটির নকশা, কাঠের ভেতর টেরাকোটা নকশা, কাঠ ও মাটি দিয়ে বিভিন্ন ফল ও মাছের আকারের ট্রে, বেত ও বাঁশ দিয়ে গোলাকার, হাতলছাড়া, বেড়া দেওয়াসহ বৈচিত্র্যময় সব নকশার ট্রে পাওয়া যায়। এসব কারুকার্যময় ট্রে তো আছেই। এ ছাড়া ফ্যাশন হাউস যাত্রায় রয়েছে লোকজ সংস্কৃতির থিমে রিকশা পেইন্টিংয়ের ট্রে এবং পদ্ধতিতে চিপসের প্যাকেট দিয়ে তৈরি অফিশিয়াল জিনিসপত্র রাখার জন্য বিশেষ নকশার ট্রে। এ ছাড়া বেতের ভেতর মাছের আঁশ দিয়ে তৈরি ট্রে ও চিকন বাঁশের ওপর নারকেল মালা বসানো বিশেষ নকশার এসব ট্রে পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে মোহাম্মদপুরের আইডিয়া ক্র্যাফটে। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটির দুর্লভ, আড়ং, চরকা ও আজিজ সুপার মার্কেটের ভার্টিকেলে রয়েছে বিভিন্ন নকশার কারুকার্যময় ট্রে।
ট্রের সজ্জা
শুধু খাবারটুকু পাত্রে রেখে সুন্দরভাবে সাজালেই হবে না, ট্রেকেও সাজাতে হবে সুন্দর করে, তবেই পাবে খাবার পরিবেশনের পূর্ণতা—জানালেন রন্ধনশিল্পী রাহিমা সুলতানা। ট্রে সাজাতে এর এক কোনায় রাখতে পারেন মাটির ছোট পটারিতে রংবেরঙের ছোট ফুল। আপনার খাবার পরিবেশনের পাত্রটি যদি হয়ে থাকে কাচ মেলামিন বা সিরামিকের, তাহলে খাবার পরিবেশনের জন্য কাঠের ট্রে বেছে নিন। আর মাটির পাত্রে খাবার পরিবেশনায় বেত বা বাঁশের ট্রের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া ট্রেতে করে খাবার পরিবেশনের আগে পাত্রের নিচে ম্যাট এবং পাত্রের এক কোনায় কাপড়ের তৈরি ন্যাপকিনও রাখতে পারেন।
ট্রে দিয়ে অন্দরসজ্জা
শুধু খাবার পরিবেশনাই নয়, অন্দরসজ্জায় এমন অনেকেই করছেন ট্রের ব্যবহার—জানালেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরিন চৌধুরী। ফলাকৃতি, মানুষের মুখাবয়ব, মাছ—এসব নকশার ট্রে শোপিস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ঘরের দেয়ালে। এ ছাড়া রান্নাঘরের সুবিধামতো একটি দেয়াল ইটের রেখে (রং না করে) সেখানে রাখতে পারেন বেত দিয়ে তৈরি ট্রেগুলো। এ ছাড়া ঘরে যদি গাছ থাকে, তাহলে টবের নিচে রাখতে পারেন কাঠের ট্রে। খাবারঘরের টেবিল রাখুন আপনার পছন্দমতো নকশার (ফল-মাছ) ট্রে। এর ওপর একটি ছোট বাটিতে রাখুন কিছু ফল, পাশে মোম এবং কিছু তাজা ফুল ট্রের এক কোনায় রেখে দিন। দেখুন, কেমন বদলে গেছে খাবার টেবিলের ওপরটা। এ ছাড়া অনেকেই চুড়ি, কানের দুল, মালা রাখতে করছেন ট্রের ব্যবহার। সে ক্ষেত্রে মাঝারি বা ছোট আকৃতির বাঁশের ট্রেতে এগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রেখে ড্রেসিং টেবিলের এক কোনায় রাখা যেতে পারে বলে জানালেন গুলশান নাসরিন চৌধুরী।
কেমন দাম
আড়ংয়ে চৌকো আকৃতির বেত ও পাটের তৈরি ট্রের দাম পড়বে ২৪৫ টাকা, বাঁশের ট্রে ১৩৭ ও গোলাকার মাটির ট্রে ৭০ টাকা। যাত্রায় কাঠের পাটি ডিজাইন ৫৩৫ টাকা, রিকশা পেইন্টিং ট্রে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৩০০, চিপসের প্যাকেটের ট্রে এক হাজার আর আইডিয়া ক্র্যাফটের মাছের আঁশের ট্রের দাম পড়বে ৮৫০ থেকে এক হাজার ৩৫০, নারকেলের মালার ট্রে ৩০০ টাকা।
বিপাশা রায়
কৃতজ্ঞতা: দুর্লভ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০১০
Leave a Reply