১৪ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রের সেলিব্রেটি হলে অনুষ্ঠিত হলো পারসোনা হেয়ার অ্যান্ড বিউটির যুগপূর্তি অনুষ্ঠান ‘সৌন্দর্য উৎসব’। সেলিব্রেটি হল যখন আমন্ত্রিত অতিথিতে পূর্ণ তখনই শুরু হয় এই সৌন্দর্য উৎসবের। শুরুতেই পারসোনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কানিজ আলমাস খান সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। সৌন্দর্য যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেয় এবং তার মাধ্যমে যে অনেক নতুন চিন্তা এবং কাজ করা সম্ভব তা-ই বলেন কানিজ আলমাস খান। এরপর শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান বক্তব্য দেন। নারী উদ্যোক্তা রোকেয়া আফজাল রহমান পারসোনার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতি রোমন্থন করেন। পরবর্তী পর্যায়ে আনিসুজ্জামান, শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার, গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, রোকেয়া আফজাল রহমান, রুনা লায়লা, আইয়ুব বাচ্চু এবং কানিজ আলমাস খান একই সঙ্গে মঞ্চে উঠে পারসোনার নতুন ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন। অতিথিদের সামনে ভিডিও উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় পারসোনা হেয়ার অ্যান্ড বিউটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান পারসোনা, পারসোনা অ্যাডামস, ক্যানভাস, স্টুডিও পারসোনা, স্প্রিং স্পা, পারসোনা হেলথ ও পারসোনা ইনস্টিটিউট অব বিউটি অ্যান্ড লাইফস্টাইলের সাফল্যের গল্প।
পারসোনার যুগপূর্তির বিষয়ভিত্তিক সংগীত পরিবেশন করেন সুবীর নন্দী, ফাহমিদা নবী, অর্ণব ও দিনাত জাহান। তামান্না রহমানের ওড়িষি কম্পোজিশনে ‘সেলিব্রেশন অব উইমেনহুড’ পরিবেশন করেন তিনি নিজেই। ইউসুফ খান, এবরার টিপু ও মিলন ভট্টাচার্য ইমন, মিশ্র খাম্বাজ ও ধুম এই তিন রাগের মনোমুগ্ধকর ফিউশন সংগীত ‘কালার অব লাইফ’ পরিবেশন করেন। কালোয় রাঙানো সৌন্দর্য উৎসব যেন ঘোষণা দিয়েছিল পারসোনার ১২ বছরের পথচলার।
১৯৯৮ সালে ঢাকার ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডে যাত্রা শুরু করে পারসোনা। তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি পারসোনাকে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে এর পরিধি। বাড়ে এর সেবার পরিসর, বৈচিত্র্য ও মান। ২০০৪ সালে সৌন্দর্যচর্চায় নতুন চমক নিয়ে আসে পারসোনা। হেয়ার স্পেশালিস্ট জাভেদ হাবিব ও পারসোনার যৌথ প্রয়াস হিসেবে গুলশান-২-এ গড়ে ওঠে হাবিব পারসোনা (বর্তমানে পারসোনা ও পারসোনা অ্যাডামস)। ২০০৫ সালের আগস্টে পারসোনা পরিবারে যোগ হয় ফ্যাশন ম্যাগাজিন ক্যানভাস। একই বছর ১১ হাজার বর্গফুটের বিস্তৃত জায়গা নিয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের সুবাস্তু জেনিম প্লাজায় পারসোনা আসে নতুন রূপে। সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ জনে। একই সঙ্গে স্যালনের পাশে গড়ে তোলা হয় স্টুডিও পারসোনা। ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ পথ চলতে শুরু করে স্প্রিং স্পা। একই বছর নারীর নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যের জন্য গড়ে তোলা হয় ‘পারসোনা হেলথ’। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে গুলশান-১-এ গড়ে ওঠে পারসোনার আরও একটি শাখা। সে বছরের ৭ মার্চ শুরু হয় পারসোনা ইনস্টিটিউট অব বিউটি অ্যান্ড লাইফস্টাইলের যাত্রা। মিরপুর-১১ নম্বরে পারসোনার আরেকটি শাখার দরজা খোলা হয় ২০০৮-এর ২২ সেপ্টেম্বর। ২০১০-এ এসে চারটি আউটলেটে এক হাজার ২০০ জনের বিশাল কর্মীদল। যার শতকরা ৯৯ জনই নারী। বাঙালি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের যৌথ কর্মনিষ্ঠা এবং দক্ষতার ফল এই পারসোনা। এত কিছুর পাশাপাশি একই সঙ্গে কানিজ আলমাস খান অধ্যক্ষ হিসেবে রয়েছেন পারসোনা ইনস্টিটিউট অব বিউটি অ্যান্ড লাইফস্টাইলে। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ কানিজ আলমাস খান ২০০৯ সালে পেয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ড-উইমেন অব ইকোনমিকস ফোর্সের সম্মাননা। একই বছর তিনি পেয়েছেন ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ড লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড।
২০০৯ সালে তিনি সারদা পুলিশ একাডেমিতে নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন মানুষের সহজাত সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার কৌশল নিয়ে। সমাজসেবার অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে পারসোনার নাম। এসিড-সন্ত্রাস নির্মূল ও এসিডদগ্ধদের পাশে দাঁড়িয়েছে পারসোনা। এসিডদগ্ধ নারীকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছেন। অ্যাকশন এইড, ড্যাবস, অপরাজেয় বাংলা, ডব্লিউভিএ, বিএনডব্লিউএনএসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে পারসোনা ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজের পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত নারীর পাশে। আর্থিক ও মানসিক সমর্থন দিয়ে মুন্সিগঞ্জ অন্ধকল্যাণ সমিতি, মুন্সিগঞ্জের লালনসংগীত স্কুল ও শীতার্ত মানুষের কাছাকাছি থেকেছে সব সময়। মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে ভেতরের সৌন্দর্যকেও কম বড় করে দেখে না বিউটি স্যালন পারসোনা।
তাই চলতি বছর স্কয়ারের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির যৌথ আয়োজন হিসেবে দেখা গেল স্নিগ্ধ নারী অন্বেষণের অনুষ্ঠান ‘মেরিল স্প্ল্যাশ অ্যান্ড পারসোনা ইনস্পায়ারিং ফ্রেশনেস’।
কানিজ আলমাস খান বলেন, ‘আমি এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাবে মেধা, মনন ও কর্মে।
দেশকে নিয়ে যাবে উন্নত বিশ্বের তালিকায়। সেই স্বপ্নপূরণের অংশীদার হতে চায় পারসোনা।’ পারসোনার যুগপূর্তির অনুষ্ঠানে ছিল আরও একটি ঘোষণা। এবার পারসোনা প্রতিষ্ঠা করতে চলছে একটি ফাউন্ডেশন। অচিরেই প্রতিষ্ঠা করা হবে উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন অব পারসোনা। পারসোনার প্রতিটি সেবা থেকে অর্জিত আয়ের একটা অংশ যাবে এই ফাউন্ডেশনে। সেই অর্থ ব্যয় করা হবে নারীর উন্নয়নে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০১০
Leave a Reply